দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ মে: বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিত্যব্যয়ী হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শোখ হাসিনা।২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই বলে জানান তিনি।রোববার গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩১৫মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন তিনি। নাটোরে ৫২ মেগাওয়াট, নারায়ণগঞ্জে ১০২ মেগাওয়াট, নরসিংদীতে ১০৮ মেগাওয়াট এবং মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। জ্বালানি হিসেবে নরসিংদীতে গ্যাস এবং বাকি তিনটিতে ফার্নেস ওয়েল ব্যবহার করা হবে।ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নাটোর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও ঘোড়াশালের চারটি কেন্দ্র এক যোগে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।এ সময় চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আমিন বাজারে একটি ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং লালবাগে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ভিডিও কন্ফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।ভারত,ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে।
এ সময় দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে উলে¬খ করে বিদ্যুৎ সমগ্র বাংলাদেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের আওতায় আনা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।বর্তমান সরকারের আমলেই প্রথম অন্যদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভূটানের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে চতুর্দেশিয় আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের সক্ষমতা অর্জন করেছে বর্তমান সরকার এ কথা উলে¬খ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ সময় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।বিদ্যুতের অনেক প্রকল্প হাতে নিলেও বিগত সরকারের আমলে তা সব বন্ধ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।বিএনপি সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিবর্তে খাম্বা লিমিটেড গড়ে তোলে বলেন তিনি।পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে এসে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বর্তমান সরকার বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে আরও প্রায় ৩১৫ মেগাওয়াট।
দেশের জন্য আরও ৩ শ’ ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন চারটি কেন্দ্র উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে তার সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনালেন।তিনি জানান, দেশ আজ ১৩ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। অদূর ভবিষ্যতে মোট উৎপাদন ১৯৬৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত করতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।এ সময় তিনি সরকারের বিদ্যুৎ নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। নতুন যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠলো তার সুবিধা গ্রহণকারী জনগণকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণকে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি থাকলেই বেশি ব্যবহার সঠিক কাজ নয়। কম বিদ্যুৎ ব্যবহারে অর্থ ব্যয় কম হয়। এতে সাধারণ মানুষের সুবিধাই নিশ্চিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশে এখন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ৭ হাজার ১৭১ মেগাওয়াট পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে।
শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার সৌর বিদ্যুতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ওপরও দেওয়া হচ্ছে বিশেষ জোর। এছাড়াও পরমানুভিত্তিক ১০০০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে এই খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রথমে ২০০০ মেগাওয়াট পরে ৪০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো হবে।ভারত থেকে এরই মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন আরও ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া আগরতলা থেকে পাওয়া যাবে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।বাংলাদেশ-ভারত- নেপাল-ভুটান এই চতুর্দেশীয় উদ্যোগের মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও তিনি জানান মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আনার পরিকল্পনার কথা। একটি আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেই এই বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।এই উপমহাদেশে অন্য দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাংলাদেশই প্রথম শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর অনেক প্রকল্প হাতে নিলেও বিএনপি সব বন্ধ করে দেয়। এর পরিবর্তে তারা বিদ্যুতের খাম্বা লিমিটেড গড়ে তোলে। আমরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে আবার অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।দেশে মোট ৬৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো করতে গিয়ে সরকারকে নানামুখী সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এর একেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সঠিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে কত কর্মযজ্ঞ চালাতে হয়।
যারা এসব কাজে দিনরাত ম্রম দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই আপনারা এ কাজ করেছেন আর সে কারণেই দেশবাসী আজ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে উন্নত করতে এই বিদ্যুতের কোনও বিকল্প নেই। আর সে কারণেই নতুন নতুন কেন্দ্র তৈরি করে উৎপাদনের উদ্যোগ।উন্নয়নকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেসব স্থানে গ্যাস ও বিদ্যুতের সুবিধা থাকবে সেখানে ভারি শিল্পও গড়ে উঠতে পারে। এতে দেশের মানুষের কর্ম সংস্থান বাড়বে। গ্রামাঞ্চলের মানুষও উন্নত জীবন পাবে।সরকার তেলে মাথায় তেল দিতে আসেনি, এমন মন্তব্য করে ওেশখ হাসিনা বলেন, শহরে যারা ভালো আছে তাদের আরো ভালো থাকার সুযোগ করে দিতে নয়, বরং গ্রামাঞ্চলে যারা সুবিধা বঞ্চিত তাদের সুবিধা নিশ্চিত করতেই কাজ করছে সরকার।তিনি বলেন, আমরা সারা দেশের উন্নয়ন চাই। গ্রামের মানুষ যাতে ভালো থাকে তাদের জীবন মান ভালো হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের পল¬ী জনপদ প্রকল্পের কথা উলে¬ক করে বলেন, গ্রামে এক স্থানে মানুষের আবাসন সুবিধা, পশুপালন, চাষবাসের সুবিধা নিশ্চিত করে গড়ে তোলা হবে এসব জনপদ। সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের ব্যবহারও সহজ হবে বলে মত দেন প্রধানমন্ত্রী।
সেচ বিদ্যুতের সুবিধা নিশ্চিত করতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে তার সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ডধানমন্ত্রী। তিনি জানান, খালের ওপর সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসিয়ে পানি সংরক্ষণ, স্থান সংকুলান ও বিদ্যুৎ উৎপাদন তিনই সম্ভব। আর এতে সেচ নিশ্চিত করে ফসল উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব। সরকার এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছে। সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে চাপ কমাবে বলেও উলে¬খ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনায় যারা সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথা বলার মানুষ অনেক কিন্তু কাজ করার কেউ নেই। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের কোনও ক্ষতি করবে না বলেই মত দেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে টকশো করে যারা সরকারের সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকার যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তা ব্যবহার করে এসি রুমে বসে এসব সমালোচনা করা হচ্ছে।সমালোচনা মেনে নিয়েই তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি বলেই আমাদের সমালোচনা হচ্ছে। এটা ভালো।এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্ধৃতি উলে¬খ করেন: যে গাছ ফল দেয় সে গাছে ঢিল পড়ে।প্রধানমন্ত্রী নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঘোড়াশাল বাসীর উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আজ সরকার তার প্রতিশ্র“ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে চলছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চার স্থানের মানুষের সঙ্গে একযোগে কথা বলা যাচ্ছে। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ।এসময় সরকারের ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কথা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।