দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ মে: বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।আর সাংবাদিক নির্যাতনে এগিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আর্টিকেল ১৯ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে। রোববার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা নিয়ে আর্টিকেল ১৯ ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ-২০১৪’ নামের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের মাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে নির্যাতনের মধ্যে ২৩ ভাগই হয়েছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দ্বারা। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে ১১ শতাংশ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৬৬ দশমিক ৩১ ভাগ। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে ৩৩ দশমিক ৬৯ ভাগ ঘটনা ঘটেছে।
তাহমিনা রহমান বলেন, এমন নির্যাতন সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য হুমকি। ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। এ হয়রানির মধ্যে রয়েছে মানহানি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা। এ ছাড়া ২০১৪ সালে মোট ২১৩ জন সাংবাদিক ও আটজন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন ৪০ জন। আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন সাংবাদিক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ ১৩ জন মিডিয়াব্যক্তিত্বকে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান প্রমুখ।প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচারিক তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণমাধ্যমের কর্মীদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য একটি কার্যকর সুরক্ষা কৌশল ও নীতিমালা করার সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।এ ছাড়া ওই প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি আইন, মানহানি ও আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত আইনকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।সাংবাদিকদের উপর অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচার তদন্তে স্বাধীন সংস্থা এবং সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন আর্টিক্যাল-১৯।
অনুষ্ঠানে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের উপর অযাচিত আক্রমণ, হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে তাহমিনা রহমান বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে।সম্প্রতি নেপাল সরকার গৃহীত সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা এবং স্বাধীন সংস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের জন্য একটি কার্যকর সুরক্ষা কৌশল ও নীতিমালা প্রয়োজন। যা গণমাধ্যম কর্মীদের মুক্তচিন্তা প্রকাশে সহায়ক হবে। আর এ নীতিমালা বাস্তবায়নে তদারকির কাজ করবে একটি স্বাধীন সংস্থা।আর্টিক্যাল-১৯ এর ২০২৪ সালের পপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ২১৩ জন সাংবাদিক ও ৮ জন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৪ জন, গুরুতর জখম হয়েছেন ৪০ জন।২০১৩ সালের তুলনায় গত বছর দেশে সাংবাদিক হয়রানি বেড়েছে ১০৬ ভাগ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ৬২ জন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৮ জন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ সময় রমেশে ডুবেছে আ. লীগ ফখরুলে চাঙ্গা বিএনপি এবং ‘নিজ এলাকায় লাঞ্ছিত রমেশ’ শিরোনামে গত বছর প্রকাশিত দুটি সংবাদের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশিত সংবাদ দু’টির দু’জন প্রতিবেদক আসাদ জামান এবং মাহবুবুল হক সোহানের নামে মামলা দেয়া হয়েছে।এ রকম আরো অনেকগুলো ঘটনার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এর ফলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকরা হুমকির মুখে পড়ছেন। তাছাড়া গত বছর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি।২০১২ সালে জাতিসংঘে গৃহীত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘কর্মপরিকল্পনা’র কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় সরকারের কাছে কয়েক দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।সুপারিশে বলা হয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। যা জাতিসংঘে গৃহীত কর্মপরিকল্পনার ‘ইউনিভার্সাল পিরিউডিক রিভিউ’তে প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছে।অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা ও আর্টিক্যাল-১৯’র মিডিয়া কনসালট্যান্ট হীরেন পণ্ডিত।