দৈনিকবার্তা-খাগড়াছড়ি, ৩ মে: বিবাহিত,সন্তানের পিতা,অছাত্র,ব্যবসায়ী,অ-পার্বত্যবাসী, অগনতান্ত্রিক পকেট কমিটি, টাকা নিয়ে কমিটি করা প্রভৃতি অভিযোগে আবারো ভাংগনের মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সম্প্রদায়িক বাঙ্গালী সংগঠন পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ । নতুন কমিটি ঘোষিত হবার সাথে সাথে এই ভাঙ্গনের সুর বাজতে সূর করেছে । তবে ভাঙ্গনের রেখা দেখা দিয়েছিল গত ২৫ এপ্রিল কাউন্সিলের দিনেই ।
নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধ মাথাচারা দিয়ে উঠতে শুরু করেছে । এ নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেছে সংগঠনটির তৃনমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ্ব । দলের কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যন্ত চলছে টানাপোড়েন যার রেশ পৌছেছে উপদেষ্টাদের মধ্যেও । এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভাংগনের মুখে পড়তে যাচ্ছে পাহাড়ের বাংগালীদের পক্ষে সোচ্চার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংগালীদের সুষম বন্টন দাবী আদায়ের পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদ(পিবিসিপি) । এর আগেও ২০১৩সালের শেষ দিকে তৎকালীন সভাপতি ইসমাইল নবী শাওনকে অব্যাহতি ও খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি কার্যক্রম স্থগিত করার কারনে একবার ভাংগনের মূখে পড়েছিল এ সংগঠনটি । সে যাত্রায় নানা ঘটনার পরও কোনোমতে রক্ষা পেলেও এবার পাল্টা সংগঠন করা ইংগিত দিয়েছেন সংগঠনটি বিক্ষুদ্ধ নেতারা । আর এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখে শুনেছেন খাগড়াছড়ি পিবিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত কমিটির সিঃ সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল মজিদ । নতুন কমিটি সাধারন সম্পাদককে ময়মনসিংহ বাসিন্দা বলে অভিযোগ করেন তিনি এবং অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধেও । তিনি বিবাহিত ও সন্তানের পিতা বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সদস্য কাছে অভিযোগ করেন ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগকৃতদের জানা যায়, গত ২৫এপ্রিল রাংগামাটিতে পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিলের পর গেল বৃহষ্পতিবার পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদের পুর্নাংগ কমিটি ঘোষনা করা হয় । কমিটিতে রাংগামাটির সাব্বির আহম্মেদকে সভাপতি, খাগড়াছড়ি পানছড়ির থানা সারওয়ার জাহান খানকে সাধারন সম্পাদক করে ৭১সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয় পার্বত্য বাংগালী সংগঠনের উপদেষ্টা সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ । সংগঠনটি চেয়ারম্যান ইন্জিনিয়ার আলকাছ-আল-মামুন ভূইয়া সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটি এ অনুমোদন প্রদান করে ।
এ দিকে সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল মজিদ পিবিসিপি’র এ কমিটিকে ইন্জিনিয়ার আলকাছ-আল-মামুন ভূইয়া ও শেখ আহম্মেদ রাজুর পকেট কমিটির দাবী করে এ প্রতিবেদককে বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের টাকা নিয়ে কমিটির দেয়া যে প্রবনতা রয়েছে তা এখন পিবিসিপিতে ভর করছে । সংগঠনের সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারন সম্পাদককে ময়মনসিংহের বাসিন্দা দাবী করে বলেন, পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ থেকে লোক আনতে হবে সে পরিস্থিতি এখনও তৈরী হয়নি । পাহাড়ের মানুষ বহিরাগত কারো নেতৃত্ব মানবে না বলেও দাবী করেন তিনি । উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি আলকাছ আল মামুনকে জামায়তের রোকন, আতিকুর রহমানকে বান্দরবানের জামায়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত নেতাদের পকেট কমিটির বিরোধিতা করে চলে এসেছিলাম রাংগামাটি থেকে । দেশ বিরোধী জামাত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । কুচক্রী জামাতের মধ্যে ব›দ্ধী থাকা যাবে না । পিবিসিপি আগেও তো জামাত নেতা ডমিনেটেড ছিলো তখন প্রতিবাদ করেনি কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মজিত বলেন, তারা বলেছিল জামাতিকরন করবে না, এখন দেখতে পাচ্ছি তারা জামতি মেরুকরন করে ফেলেছে । সারোয়ার দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিল, তখন বিরোধিতা করেননি কেন জানতে চাইলে আব্দুল মজিদ বলেন, তখনো বিরোধিতা অব্যাহত ছিল । এ কমিটির সাথে জনগনের কোন সম্পর্ক নেই জানিয়ে বলেন, জনগন এখন নতুন উদ্যমে কিছু করতে চায় ।
খুব শীঘ্রই বাংগালীদের স্বার্থ রক্ষা নতুন সংগঠন করার কথা জানিয়ে পিবিসিপি’র নেতা আব্দুল মজিদ বলেন, রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে শুধুমাত্র বাংগালীদের পক্ষে কথা বলাই হবে সেই সংগঠনের কাজ । যেখানে কোন ভাড়াটিয়া নেতৃত্ব নয়, পাহাড়ের নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত হবে । ইতি মধ্যে সংগঠনের প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হলেও এর বেশী কিছু বলতে রাজি হয়নি ।
যোগাযাগ করা হল পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদ(পিবিসিপি) সদ্য ঘোষিত নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক সারোয়ার জাহান খান নিজেকে খাগড়াছড়ি বাসিন্দা ও পাহাড়ের ভোটার দাবী করে বলেন, আমার বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া সবকিছু পাহাড়েই । যাদের ছাত্রত্ব নেই বা স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে তারাই আমাকে ময়মনসিংহ বাসিন্দা বলে প্রচার করছে । তিনি নিজেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা দাবী করে বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন পানছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন । তবে কেন তার বাবা স্ব-পরিবারে ময়মনসিংহ ফিরে গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার জাহান খান বলেন, আমার বাবা চিকিৎসার জন্য অন্যদের সাথে ঢাকায় অবস্থান করছেন । তিনি তার বিরুদ্ধে দেয়া সব বক্তব্যকে শ্রেফ-অপ্রচার বলে দাবী করেন ।
এদিকে পকেট কমিটি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইন্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূইয়া বলেন, তৃনমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র মেনে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে । এখানে আমার নয়, পাহাড়ের অধিকারহারা মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে সব করা হয়েছে । ছাত্র পরিষদ অছাত্র নেতুত্ব কেউ সমর্থন করেনা । অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবারের কমিটিকে অনেক বেশী শক্তিশালী দাবী করে বলেন, এ কমিটি আমি একক ভাবে অনুমোদন দেয়নি, উপদেষ্টা পরিষদের সর্বসন্মতি ক্রমেই অনুমোদন দিয়েছে ।