দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ মে: অভিজিৎ রায়বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের হত্যার দায় স্বীকার করল আল-কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশীয় শাখা (একিউআইএস)। আল-কায়দাসহ অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর অনলাইন তৎপরতার ওপর নজরদারি করে থাকে এমন একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে এএফপি রোববার এ তথ্য জানায়।সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্র“প নামের ওই ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে এএফপি বলেছে, শনিবার জিহাদিদের ফোরামে একটি ভিডিওবার্তা পোস্ট করা হয়। সেখানে একিউআইএস-এর নেতা অসিম ওমর দাবি করেন, তাঁর সংগঠনের লোকজনই অভিজিৎকে হত্যা করেছে।তবে র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ এএফপিকে বলেছেন, আল-কায়দার এমন দাবি সঠিক কি না সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন।
ব্লগার অভিজিৎ, রাজীব হায়দার ও ওয়াশিকুর রহমানের হত্যার পেছনে আল-কায়দার হাত থাকতে পারে কি না জানতে চাইলে র্যাবের ওই কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, আমরা নিশ্চিত নই।গত ২৬ ফেব্র“য়ারি বইমেলা চলাকালে রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর জখম হন।এদিকে অভিজিতের হত্যার পরপরই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম টুইটারে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।
বিশ্বব্যাপী চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান এসআইটিই’র (সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল টেররিস্ট এনটিটিজ) উদ্ধৃতি দিয়ে রোববার এ খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।চলতি বছরের ২৬ ফেব্র“য়ারি রাতে রাজধানীতে অমর একুশে বইমেলা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ড.অভিজিৎ রায়কে। এ সময় আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।তাৎক্ষণিকভাবে আনসারুল্লাহ বাংলা নামে একটি দল এ হত্যার দায় স্বীকার করলেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আল কায়েদার সংযোগের খবর এই প্রথম প্রকাশ হলো।একিউআইএস এর প্রধান আসিম উমর সম্প্রতি এক ভিডিও-বার্তায় এ হত্যায় নিজেদের দায় স্বীকার করে বলে জানায় এসআইটিই । ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দানকালে ড. অভিজিৎ রায়কে ধর্মদ্রোহী বলে উল্লেখ করা হয়।তবে অভিজিৎ হত্যার তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ ওই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে তারা এই ভিডিওর সত্যতা সম্পর্ক এখনও নিশ্চিত নন।
ড. অভিজিৎ রায় স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছিলেন। এ বছর একুশে বইমেলায় নিজের একটি বইয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশে আসেন তিনি। অভিজিৎ মুক্তমনা নামে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক লেখালেখির ব্লগ সম্পাদনা করতেন। এদিকে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এ বছর ‘দ্য ববস- সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ পুরস্কার পেয়েছেন ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যা, যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশে হামলার শিকার হয়েছেন।
দ্য ববসর আয়োজক জার্মানির আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৫ সালের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।শনিবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এক বৈঠকে জুরিমণ্ডলী একাদশের আয়োজনের বিজয়ীদের নাম চূড়ান্ত করে। এ বছর বাংলাদেশ, সিরিয়া এবং মেক্সিকোর ব্লগাররা পাচ্ছেন এই পুরস্কার।আগামী জুন মাসে জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে৷চলতি বছর সামাজিক পরিবর্তন, গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংবাদমাধ্যম– এই তিনটি বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। দ্য ববসর সামাজিক পরিবর্তন বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বন্যা। বন্যার স্বামী অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তমনা ব্লগসাইটের পরিচালক।
ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ ও বন্যা বইমেলায় অংশ নিতে গত ফেব্র“য়ারিতে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। গত ২৬ ফেব্র“য়ারি রাতে বইমেলা সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে হামলা হয় অভিজিৎ ও বন্যার উপর। হামলাকারীদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন অভিজিৎ। প্রাণে বেঁচে গেলেও এক আঙুল হারান বন্যা।হামলার পরও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির প্রশ্নে বন্যার আপস না করার ঘোষণা এসেছে দ্য ববস জুরিমণ্ডলীর সদস্য শহিদুল আলমের কথায়ও।উগ্র ইসলামপন্থিরা বাংলাদেশকে তার ধর্মনিরপেক্ষ নীতি থেকে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে৷ আর অভিজিৎ এবং বন্যা আহমেদের মতো ব্লগাররা সেটা ঠেকানোরই চেষ্টা করছেন।পুরস্কারের ঘোষণার পর মুক্তমনা একটি বিবৃতিতে ডয়চে ভেলেকে বলেছে, একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক এবং বিজ্ঞানমুখী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, একটি উদার, প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞানমনষ্ক প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য মুক্তমনা অনলাইনে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে গত ১৪ বছর ধরে৷ এই পুরস্কার আমাদের সেই অক্লান্ত পরিশ্রমেরই স্বীকৃতি।দ্য ববসর শিল্প ও সংবাদমাধ্যম ক্যাটাগরিতে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে ‘জয়তুন, দ্য লিটেল রিফিউজ প্রকল্পটি৷
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গৃহহীন সিরীয়-ফিলিস্তিনি শরণার্থী জয়তুন-এর জীবনসংগ্রাম তুলে ধরা হয়েেেছ এই ব্লগে।এছাড়া গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে মেক্সিকোর রেনকো ইলেক্ট্রোনিকো’ প্রকল্প৷ স্বেচ্ছাসেবী এই প্রকল্পের আওতায় সেদেশের মানুষকে ইন্টারনেটে তথ্য সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে থাকেন একদল হ্যাকার।প্রতিযোগিতায় বাক স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সৌদি আরবে কারাবন্দি ব্লগার রাইফ বাদাউয়ি।এছাড়াও এবছর প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষাভিত্তিক বিভাগে ‘পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ‘টুনস ম্যাগাজিন৷ ইউরোপ প্রবাসী কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান এ সাময়িকী সম্পাদনা করেন। তিনি ২০০৭ সালে একটি কার্টুনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।গত ১৯ ফেব্র“য়য়ারি থেকে শুরু হওয়া মনোনয়ন গ্রহণ প্রক্রিয়া চলে ১২ মার্চ পর্যন্ত। গত ১১ বছর ধরে ডয়চে ভেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা সাহসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্যতিক্রমী বিভিন্ন প্রকল্পকে পুরস্কার দিচ্ছে।