দৈনিকবার্তা-গৌরনদী (বরিশাল), ০২ মে: এক সন্তানের জনকের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে চার মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়েছে এক কিশোরী। এনিয়ে গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে পরকীয়া প্রেমিককে নির্যাতনের পর মোটা অংকের টাকা জরিমানা আদায় করে উভয় পরিবারকে চিরদিনের জন্য গ্রাম থেকে উৎখাত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার গৌরনদী উপজেলার টরকী এলাকার রামনগর গ্রামে।গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরকীয়া প্রেমিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শহিদ ফকিরের ঘরের মালামাল নসিমনযোগে নিয়ে যাচ্ছেন তার বোন রুনু বেগম ও বিউটি বেগম। সালিশ বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের মৃত ধোনাই ফকিরের পুত্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও এক সন্তানের জনক শহিদ ফকিরের সাথে প্রতিবেশী সোবাহান খলিফার ষোড়শী কন্যা প্রিয়া আক্তারের (১৭) দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেসুবাধে তাদের একাধিকবার দৈহিক মেশামেশায় প্রিয়া চার মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পরে। এনিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাতে স্থানীয় প্রভাবশালী বুলবুল দেওয়ান, আবুল হোসেন ফকির, বাচ্চু ফকির, মতিন খলিফার নেতৃত্বে সোবাহানের বাড়িতে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
শহিদ ফকিরের বোন রুনু বেগম জানান, গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে তার ভাই (শহিদ খলিফাকে) নির্যাতনের পর পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়। একপর্যায়ে অন্তঃস্বত্তা প্রিয়ার অপারেশন ও থানা পুলিশ ম্যানেজের নামে তার ভাইয়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ভাইকে প্রাণে বাঁচাতে ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাদাষ্ট্যাম্পে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায় করা হয়। উভয় পরিবারের সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করে তাদের (উভয় পরিবারকে) গ্রাম থেকে বিতারিত করার ঘোষণা দেয় প্রভাবশালীরা। তিনি আরো জানান, জরিমানা টাকা পরিশোধের জন্য তার ভাই (শহিদ খলিফার) বসত ঘর ও দোকান ঘর দশ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয় করে রাখেন প্রভাবশালী আবুল হোসেন ফকির। প্রভাবশালীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিন (বৃহস্পতিবার) রাতেই শহিদ ফকির তার স্ত্রী লিজা বেগম, চার বছরের একমাত্র পুত্র নুর ইসলাম হিমান্ত ও বৃদ্ধা মা বকুল বেগম এবং অন্তঃস্বত্তা প্রিয়া আক্তার তার বাবা সোবাহান খলিফা, মা ও ছোট বোনকে গ্রাম থেকে চিরদিনের জন্য তাড়িয়ে দেয়া হয়। শহিদ ফকিরের আরেক বোন বিউটি বেগম অভিযোগ করেন, তার বাবার রেখে যাওয়া সহয় সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য দীর্ঘদিন থেকে তার ভাইকে একাধিকবার নির্যাতন করে আসছিলো স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল হোসেন ও বাচ্চু খলিফা। সে অনুযায়ী সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় নামেমাত্র মুল্যে তার ভাইয়ের কাছ থেকে জোরপূর্বক চার শতক জমি লিখে নিয়েছেন প্রভাবশালী আবুল হোসেন ও বাচ্চু খলিফা। তিনি আরো জানান, তাদের বোনদের প্রাপ্ত নয় শতক সম্পত্তিও আত্মসাতের জন্য ওই প্রভাবশালীরা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
নির্যাতন ও সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রভাবশালী আবুল হোসেন ফকির বলেন, যা কিছু হয়েছে তা গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শহিদ খলিফা তার পৈত্রিক সম্পত্তি দীর্ঘদিন পূর্বে আমার কাছে বিক্রি করেছে। মানবিক কারনে আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে তাদের থাকতে দিয়েছিলাম। জরিমানার টাকা বাবদ বসত ও দোকান ঘর দশ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয়ের কথা তিনি স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে গৌরনদী থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। তার পরেও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।