দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০১ মে: বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারমেন বলেছেন, যেকোনো নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।তাই নির্বাচনে অনিয়ম ও বর্জন গণতন্ত্রের জন্য কাম্য নয়। শুক্রবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ অংশীদারিত্ব সংলাপ শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই এবং পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।ওয়েন্ডি শারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, সিটি নির্বাচনের অনিয়মগুলো অবশ্যই স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করতে। একই সঙ্গে আগামী যে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার আহ্বান জানিয়েছেন শারম্যান। সদ্যসমাপ্ত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান। নির্বাচনে অনিয়ম আর বিএনপি’র মাঝপথে নির্বাচন বর্জন উভয়কেই হতাশাজনক বলে মত দিয়েছেন তিনি।নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ও নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বানও জানান মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি।সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, উন্নয়ন, সুশাসন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় সংলাপে গুরুত্ব পেয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে একসঙ্গে কাজ করবে দু’দেশ।
অতীতের যে কোনো সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং শক্তিশালী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার ঢাকায় শুরু হওয়া বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চতুর্থ অংশীদারিত্ব সংলাপের প্লেনারি সেশনে অংশ নিতে নিশা দেশাই ও শারম্যান ঢাকায় আসেন।সংবাদ সম্মেলনে শারম্যান বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যে অগ্রযাত্রা চলছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে।শারম্যান বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে অনেকগুলো শর্তপূরণে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাজে অগ্রগতি হয়েছে। তবে আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ এবং পরিদর্শন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
ইউনিয়ন নেতাদের হয়রানির অভিযোগ সুরাহা করার প্রতিও গুরুত্ব দেন তিনি।শারম্যান বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ক্ষমতাপ্রাপ্ত শ্রমিকরা একটি শক্তি হিসেবে কাজ করে। এ জন্যই আমরা নতুন পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদানের মাধ্যমে কারখানা ও কমিউনিটির সাংগঠনিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিচ্ছি।শারম্যান জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক এখানেই শেষ নয়। শেভরন ও কোকাকোলার মতো আরও অনেক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।শারম্যান নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনাকে চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে বলেন, বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধ, মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করাসহ নারীদের উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ালে দেশের বৃহত্তর এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
তিনি বলেন, অংশীদারিত্ব সংলাপে পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং ছোঁয়াচে রোগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এবারের আলোচনায় সমুদ্র অর্থনীতিও যোগ হয়েছে।শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আরও একটি কোস্টগার্ড কার্টার দেবে জানিয়ে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি শারম্যান বলেন, আগামী ৬ মে রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট ক্যালিফোর্নিয়ায় ভাইস এডমিরাল হাবিবের কাছে জাহাজটি হস্তান্তর করবেন।তিনি বলেন, বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সেই সম্ভাবনার দ্বারে পৌঁছাতে বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশীদার হতে আগ্রহী। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরমান বলেন, এখন সরকারকে সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে জোর দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে নির্বাচনে এর সুফল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ অংশীদারিত্ব সংলাপ শেষে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম এবং ভোটের মাঝখানে বিএনপির বয়কট- দুই ঘটনাতেই আমরা হতাশ।যা ঘটেছে তা নিয়ে সরকারের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখন ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে যা দরকার তা সরকার করবে।আমার মনে হয়, এখন সবার যে বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ, তা হল সব অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত, যাতে আগামীতে নির্বাচনে পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যায়। গণতন্ত্রের জন্য এটা খুবই জরুরি।গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থীরা ভোট চলাকালেই কারচুপির অভিযোগে বর্জনের ঘোষণা দেন। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে সব অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
অবশ্য নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।অনিয়মের যেসব অভিযোগ এসেছে তার তদন্ত হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ঢাকা-ওয়াশিংটন অংশীদারিত্ব যথেষ্ট বিস্তৃত ও গভীর। আর কেবল দুই দেশ নয়, বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্যই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের বিশ্বাস, এ অঞ্চলকে বদলে দেওয়ার প্রায় অসীম সম্ভাবনা’ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে আপনাদের অংশীদার হতে পেরে আমরাও আনন্দিত।পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবারের অংশীদারিত্ব সংলাপ ছিল খুবই গঠনমূলক।যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।