দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ এপ্রিল: রাজধানীর বনানীতে এলাকায় অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদকালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১০জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। জানা যায়, বনানীর ইকবাল টাওয়ার এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানকে ঘিরে ফেলে ব্যবসায়ীরা।একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘেরাও করে ফেললে গুলির নির্দেশ দেন তিনি। পুলিশের শটগানের গুলিতে ১০ জন আহত হন। আহতদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে গোলাগুলির শব্দে ওই এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোনো নোটিশ না দিয়েই ওই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এর প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।বনানী থানার ডিউটি অফিসার এসআই ফরিদা পারভীন জানান, অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ অভিযানে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হামলা চালায়। সংঘর্ষে ১০ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়। তবে ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান অক্ষত রয়েছেনএদিকে বনানী থানার ওসি (তদন্ত) শেখ শাহীনুর রহমান জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কোনো নোটিস না দিয়েই সিটি করপোরেশনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ওই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশেই পুলিশ গুলি করেছে। অন্তত ৮/১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান আজাদ বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ আর সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে ‘গণহারে’ দোকান উচ্ছেদ শুরু করে। দোকান মালিকরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযানের বিষয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা না দেখিয়ে ‘নিপু’ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ আছে কিনা তা জানতে চান বলে জানান আজাদ।তিনি বলেন, এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটের বাক-বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তিনি পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেন। পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করলে ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হন।এদের মধ্যে গুরুতর আহত সাতজনকে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও দুজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে দোকান মালিকদের নেতা আজাদ জানান।এ বিষয়ে জানতে ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।এদিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ না নিলেও বনানী মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনার খোঁজখবর নিলেন উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক।বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি সেখানে যান। এসময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনা অনভিপ্রেত। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, যে কোনো ঘটনায় কাউকে গুলি করা হোক এটা চাই না।উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে- এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সময়ই বলে দেবে কার দোষ। আমি তো একপক্ষের বক্তব্য শুনেছি, অপরপক্ষের বক্তব্য না শুনে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবো না। আমি আসলে দেখতে এসেছি, কী এমন ঘটলো যে গুলি করতে হবে!
আপনি দায়িত্ব নিলে এ ঘটনার কোনো সুরাহা করবেন কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, কেউ যদি আমার কাছে এসে সুরাহা চায় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।উচ্ছেদ অভিযান চালানোর ব্যাপারে বনানী থানা পুলিশ কিছুই জানে না- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যতোটুকু জানি, ১০/১২ দিন আগে পুলিশ কমিশনারের কাছে পুলিশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। পরে মিরপুর পুলিশ লাইন থেকে রিজার্ভ ফোর্স আনা হয়েছে।উল্লেখ্য, এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত স্থানীয় পুলিশকে আগে থেকেই জানানো হয়। কিন্তু সকালবেলার এ উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে বনানী কিছুই জানে না।