দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ এপ্রিল: সিটি নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন আখ্যায়িত করে তা বাতিল ও পুরো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগ দাবি করেছে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন। বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সদস্যসচিব শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা করেছিলাম তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে গণতন্ত্র, আইনের শাসন তুলে ধরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা হিলাময়চুম্বী, ক্ষমার অযোগ্য।
সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি ১৯৪৬ সাল থেকে সব নির্বাচন দেখেছেন। কিন্তু কোনো নির্বাচনই গতকালের নির্বাচনের সঙ্গে তুল্য নয়। এ নির্বাচন আবর্জনাতুল্য। যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, এভাবে নির্বাচন হয় না। তিনি বলেন, হরতাল হচ্ছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল—এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি বিএনপিকে প্রস্তাব করেছিলেন। নির্বাচন হলে এক ধনের সংলাপ হবে, এটা ভেবে।এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য যোগ করেন, এক অর্থে সংলাপ হয়েছে। ভোটারেরা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রার্থীরা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিভিন্ন পর্যায় থেকে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, এটিকে বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে গেলে রাজনৈতিক সংলাপের রূপ আসবে। কিন্তু তা হয়নি। তিনি জাতীয় স্বার্থে ইসির পদত্যাগ দাবি করে বলেন, নির্বাচন কমিশন যা করেছে, প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রদের বসিয়ে দিলেও এমন হবে।এক প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সদস্যসচিব শওকত বলেন, আদর্শ ঢাকা আন্দোলন একটি নাগরিক সংগঠন। এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাই এই নির্বাচন বিষয়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা তাদের নেই।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাসের কথোপকথনে বিএনপির নির্বাচন বর্জন পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শওকত মাহমুদ বলেন, এটা ঠিক নয়। এটা ভিত্তিহীন। খালেদা জিয়া সিরিয়াসলি নির্বাচন নিয়ে কাজ করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। পরিকল্পিত হলে তা করতেন না। ভোটের দিন সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রের পরিস্থিতি দেখে তারা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার যে নির্বাচন হয়েছে, তা দেশের ইতিহাসের মহাকলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের লোকদের স্বেচ্ছাচারিতায় পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিই আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এভাবে প্রকাশ্যে ভোটচুরি ও ডাকাতির ঘটনায় আমরা বিস্মিত।গোটা জাতি হতভম্ব। আমরা উৎকণ্ঠিত। আমরা দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন।আদর্শ ঢাকা আন্দোলন নির্বাচনকে সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযুক্ত করে তার প্রতিবাদ জানায়। একইসঙ্গে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়।
শওকত মাহমুদের লিখিত বক্তব্য পাঠের পর কথা বলেন অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ।তিনি বলেন, এভাবে নির্বাচন হয় না। আমরা নির্বাচনের আগে ইসির কাছে গিয়েছিলাম। তাদের বলেছিলাম নির্বাচনের ভূমিটা যেন সমতল হয়। ভোটাররা যেন যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারে। প্রার্থী যেন তার ভোটারদের কাছে যেতে পারে। নির্বাচনের সময় যেন রাজনৈতিক মামলায় অজ্ঞাত বলে দেখানো লোকদের হয়রানি করা না হয়। আমাদের কোনো দাবিই মানা হয়নি। সে কারণে গতকাল কী হয়েছে তা পুরো জাতি দেখেছে। তারা (ইসি) দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যা দেখিয়েছেন সেটা স্কুলের তিন শিশুকে এনে দিলেও ব্যতিক্রম হতো না।সিটি নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, তিনি দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। আমি তার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহপ্রমুখ।