DoinikBarta_দৈনিকবার্তা 28-04-15-PM Vote_City College Center-18

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ এপ্রিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন,তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ তা মেনে নেবে।তিনি বলেন,আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি এবং তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জনগণের রায় আমরা অবশ্যই মেনে নেব।প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে নগরীর ধানমন্ডিতে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।কয়েক বছর আগে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছিলেন।তিনি বলেন, জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দেবেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাঁর দলের সমর্থিত প্রার্থীরা তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী হবেন।

তিনি ইলিশ, ঘুড়ি ও পানপাতা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সমর্থিত প্রার্থীরা অর্থ্যাৎ আমি যাদেরকে ভোট দিয়েছি তারা বিজয়ী হবেন বলে আমি আশা করছি।তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা পরাজিত হলে তারা ফের আন্দোলনে নামবে বলে বিএনপি’র হুমকি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র এই ধরনের অবস্থানের সমালোচনা করেন।তিনি বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে যে, বিএনপি জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। তারা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে না। কারণ, জনগণের রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল নয়।এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন যে, বিএনপি’র বলা উচিত, জনগণ যে মতামত ও রায় দেবে এবং যেসব প্রার্থী বিজয়ী হবে, দল তা মেনে নেবে।তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাদের প্রার্থী জয়ী হলে ভাল, আর তা না হলে আন্দোলন- এটা কি ধরনের মনোভাব ?

আন্দোলনে নামার বিএনপি’র হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণের জীবন নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।এ প্রসঙ্গে তিনি হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও এবং ভাঙচুরের রাজনীতি ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে আসতে ও জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিএনপিকে পরামর্শ দেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পরামর্শ হচ্ছে বিএনপির উচিত কল্যাণমুখী রাজনীতির ধারা অসুসরণ করা। দলটির রাজনীত ব্যক্তিগত ও নিজ স্বার্থসিদ্ধি বা জ্বালাও-পোড়াও বা জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য হওয়া উচিত নয়।বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রতিক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের রাজনীতি হচ্ছে হত্যা ও মানুষ পোড়ানো। এভাবে তারা কত প্রাণ কেড়ে নেবে এবং কত মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে।

তিনি বলেন, মানুষ হত্যায় বিএনপি অভ্যস্ত। সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান আমার বাবা, মা ও ভাইদের এবং ছোট্ট রাসেলকে হত্যা করেছেন। একইভাবে খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছেন।শেখ হাসিনা বলেন, কেবল একবার নয় আমাকে হত্যা করতে বার বার হামলা চালিয়েছে বিএনপি। তাদের একমাত্র অভিসন্ধি হচ্ছে আমাদের চিরতরে নির্মূল করা। তারা এ ধরনের হুমকি অনেকবার দিয়েছে।

বিএনপির আন্দোলনে কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। তারা কেবল জনগণকে হত্যা ও পোড়াওতে জানে। মানুষ হত্যা ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে নাÑ এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করুন, তারা নৃশংসভাবে কত মানুষ হত্যা করেছে।এ প্রসঙ্গে তিনি যারা বিএনপি’র সমর্থক তাদের হাত কটি জ্বলন্ত মোমবাতির উপর রাখার বিষয়ে বলেন, যদি তাদের হাত জ্বলন্ত মোমবাতিটির উপর ধরে রাখা যায়, তবেই তারা অগ্নিদগ্ধ মানুষের কষ্ট ও আর্তনাদ বুঝতে পারবেন।শেখ হাসিনা বলেন, মানব জাতি হচ্ছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত চক্র আন্দোলনের নামে জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে সৃষ্টির সেরা এই জীবনকে হত্যা করছে। এটা কোন্্ ধরনের রাজনীতি। জনগণ কখনো এমন আন্দোলন মেনে নেবে না।গতরাতে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণকালে বিএনপি’র কয়েকজন সমর্থককে গ্রেফতার করা সম্পর্কে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ভালো করেই জানে যে, ভোটাররা তাদের প্রার্থীকে ভোট দেবে না। এ জন্য তারা টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী তার দলের লোকদের কেউ টাকা দিতে চাইলে ভোটের বিনিময়ে টাকা নিতে বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, পর সম্পদ হরণের ব্যাপারে তারা ভালোই বোঝেন। কারণ, তারা এতিমদের টাকাও আত্মসাত করেছেন।শেখ হাসিনা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া টাকার বিনিময়ে সবকিছুই করতে পারেন। তার দল ক্ষমতায় থাকাকালে লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আমি আশা করি যে, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে আপনাদের মতামত ব্যক্ত করবেনÑ যা জনগণের সেবার পাথেয় হবে।তিনি বলেন, ভোট আমার সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এ অধিকার পেয়েছি। এটাই বাস্তবতা।শেখ হাসিনা বলেন, ৭০ সাল থেকে ভোট দিয়ে আসছি। আজ যখন ভোট দিলাম তখন মনে হলো আমি আমার নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছি। আমার পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলাম, এ জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিক এবং ভোটের অধিকার প্রয়োগ করুক এটাই আমি চাই।প্রধানমন্ত্রী এর আগে সকাল ৮টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি এলাকায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিটি কলেজে কেন্দ্র নম্বর-২৬৫) তাঁর ভোট প্রদান করেন।তিনি সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে এই ভোট কেন্দ্রে আসেন এবং ১ নম্বর ভবনে ২ নম্বর মহিলা কেন্দ্রে ভোট দেন। তিনি ছিলেন এ ভোট কেন্দ্রের প্রথম ভোটার।