দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ এপ্রিল: আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ বলেছেন,তিনসিটিকর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো পূর্বপরিকল্পিত।তিনি বলেন, বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কূটকৌশল হিসেবেই নিয়ে ছিল। তাদের প্রার্থী নির্বাচন দেখলেই বোঝা যায় সত্যিকার অর্থে তারা বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থী দেয় নাই। নির্বাচনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনজুরুল আলমকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হানিফ।মাহবুব উল-আলম হানিফ দুপুরে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সন্মেলনে এ কথা বলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।বিএনপি পরাজয় নিশ্চিত জেনেই এবং আন্দোলনের ইস্যু খোঁজার জন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, এটি ছিলো তাদের পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। এর মধ্যদিয়ে তারা নতুন করে ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। যে ইস্যু দিয়ে তারা আবার আন্দোলনে নামতে পারে।তিনি অভিযোগ করেন, এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া নির্বাচনী প্রচারের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন।শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, একটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরে সে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে।বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নির্বচন নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন মাহবুবুল উল-আলম হানিফ।
কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ বিএনপি সমর্থিতরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। নির্ধারিত সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিন।নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ভোট বর্জনের কথা বলে বিএনপি নেতৃত্ব নতুন করে আন্দোলনে নামার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।তিনি বলেন, গত তিন মাসের অপকর্মের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের পাশে নেই। এজন্য তারা পোলিং এজেন্ট দেওয়ার মত অবস্থায়ও নেই। তারা ইচ্ছে করেই পোলিং এজেন্ট দেয়নি।নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখাতে পারেনি। কোনো একটি অনিয়মের তথ্য দিতে পারেনি বিএনপি।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে পাশে নিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।তিনি বলেন,এটা কোনো নির্বাচন হয় নাই। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। ভোটবিহীন এই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। …
এই নির্বাচন আমরা বর্জন করি।এতে গণতন্ত্রের প্রহসন করা হয়েছে।পোলিংএজেন্টদের ভোটকেন্দ্রেঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে সকালে ভোট শুরুর পর থেকেই অভিযোগ করেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।
ঢাকার দুটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনেক কেন্দ্রে সকালে বিএনপি সমর্থিতদের এজেন্ট দেখা যায়নি।ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।ঢাকা দক্ষিণের এক কেন্দ্রে একটি বান্ডলে পরপর সব ব্যালটে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা দেখা গেছে একটি ভিডিওতে। পুরান ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোটের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসারকে সিল মারতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর প্রতীকে।সকালে ঢাকা দক্ষিণের ৩৫টি কেন্দ্রে মির্জা আব্বাসের এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে তার স্ত্রী আফরোজা অভিযোগ করেন। এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনের নির্বাচনী সমন্বয়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, জনগণ বিএনপির সাথে নেই বুঝতে পেরেই তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।তিনি বলেন, তারা পোলিং এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারেনি। বাইরেও তাদের কর্মীকে দেখিনি। আমরা ভেবেছিলাম তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন। মানুষ তাদের ভোট দিচ্ছে না। জনগণ তাদের সাথে নেই জানতে পেরেই তারা নির্বাচন বর্জন করেছে।রাজ্জাক মঙ্গলবার দুপুরে ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রতিক্রিযা জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।‘বিএনপি প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে’ বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন কথা আমি শুনিনি। বিএনপি এতো গণবি”িছন্ন হয়ে গেছে যে তাদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করার মতো লোকজন খুঁজে পায়নি। যারা পোলিং এজেন্ট দিতেই পারেনি তাদের আবার বের করে দেয়া হলো কিভাবে?
নির্বাচনে ভোট কারচুপরি হচ্ছে বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে সাঈদ খোকনের নির্বাচনী সমন্নয়ক বলেন, কোন দলের জনসমর্থন থাকলে নির্বাচনে কারচুপরি কোন সুযোগ থাকে না। তাদের আসলে কোনো জনসমর্থন নেই।সিটি নির্বাচন থেকে বিএনপির সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে রাজ্জাক আরও বলেন, হঠাৎ করে কেনো বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালো তা জানি না। তারা বিগত ৯২ দিনে যে তান্ডব চালিয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে বাসে আগুন দিয়েছে এবং সারাদেশে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তার জন্য হয়তো তারা গণবি”িছন্ন হয়েছে। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ কারণে তারা পরাজয় বুঝতে পেরে সরে গেছে।তিনি বলেন, আমাদের সকল অর্জন আমরা তুলে ধরেছি। ঢাকা মহানগরে অনেক দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। অনেকগুলো ফ্লাইওভার হয়েছে। হাতিরঝিলের মতো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৫-এর ৯০ দিন জামায়াত-শিবির আর বিএনপি মিলে যে সন্ত্রাস, তান্ডব চালিয়েছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। অনেক খেটে খাওয়া কাজ করে খেতে পারেনি। মানুষ ভোট দেয়ার সময় এগুলো বিবেচনায় নিচ্ছে।