দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ এপ্রিল: টেরি টাওয়েল রফতানির ক্ষেত্রে ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে পণ্যটি রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় কমেছে ৪২ শতাংশের বেশি। মূলত উত্পাদন মূল্য বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতার বাজারে রফতানির সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া ইউরোর দরপতনের কারণেও কমেছে রফতানি আয়।জানা গেছে, টেরি টাওয়েল ও হোম টেক্সটাইলস মিলিয়ে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে। টেরি টাওয়েল উত্পাদন ও রফতানির ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশ পাকিস্তানের আয় এর তিন গুণ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। এর পরও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) সভাপতি খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, আয় বাড়াতে হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে যত শিগগির সম্ভব নগদ প্রণোদনার হার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।জানা যায়, টেরি টাওয়েল রফতানি থেকে বাংলাদেশ বছরে সাড়ে ৬ কোটি ডলারের বেশি আয় করে। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় কমে গেছে ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ৫ কোটি ৩৬ লাখ ১০ হাজার ডলার।
সূত্র অনুযায়ী, পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি রফতানি আয় কমার গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কারণ হলো ইউরোর অব্যাহত দরপতন। এছাড়া সম্প্রতি তুলার দাম কমায় উত্পাদনকারী দেশ হিসেবে সুতার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাও নিতে পারছে পাকিস্তান। ফলে তুলনামূলক কম মূল্যে টেরি টাওয়েল রফতানি করতে পারছে দেশটি। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধি, আমদানি নির্ভরতাসহ নানা কারণে মূল্য সুবিধা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।বিটিটিএলএমইএর সচিব মুজিবুর রহমান বলেন, সুতার অস্বাভাবিক মূল্যসহ নানা কারণে আমাদের ৯৮টি সদস্য কারখানার প্রায় ৫০ শতাংশ সরাসরি রফতানি কার্যক্রম চালাতে পারছে। বাকিরা সরাসরি রফতানিকারকদের সাব-কন্ট্রাক্ট সরবরাহকারী হিসেবে সক্রিয় রাখছে উত্পাদন। নগদ প্রণোদনা পেলে উদ্যোক্তারা উত্পাদন বাড়ানোরউত্সাহ পাবেন।
সূত্রমতে, দুই বছর আগে বিশ্ববাজারে তুলার দামে রেকর্ড ও সুতার সংকটে উত্পাদকরা ক্রয়াদেশ নিতে পারেননি। এর পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেও পাকিস্তানের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে না পেরে টেরি টাওয়েল রফতানিকারকরা আরো পিছিয়ে পড়েছেন। এ কারণে টেরি টাওয়েল উত্পাদন কমে যাওয়ায় রফতানি আয় হ্রাস পেয়েছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত টেরি টাওয়েল ও হোম টেক্সটাইলসের ৬০ শতাংশই রফতানি হয় ইউরোপে। তবে এ বাজার থেকে অন্যান্য দেশের জন্য বাণিজ্যিক সুবিধা বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো বড় বাজারগুলোয় পণ্য রফতানির উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের।