DoinikBarta_দৈনিকবর্তা unnamed

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ এপ্রিলঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‍অভিযোগ করে বলেছেন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা এ হামলা করে। আর পুলিশ হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছে। তিনি বলেন, হামলাকারীরা আমাকে হত্যা করতেই চেয়েছিলো।রোববার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যাালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।খালেদা জিয়া তার ওপর হওয়া তিন দফা হামলার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এর মধ্যে কারওয়ান বাজারে হামলার ঘটনাটি ছিল ভয়াবহ। সেখানে প্রকাশ্যে আমার গাড়িতে গুলি করা হয়েছে।বিএনপি চেয়ারপার্সন, ২০ দলীয় জোট প্রধান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুরো ভাষণএ ওয়ান নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

উপস্থিতি প্রিয় সাংবাদিক ভাই-বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম।
প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে প্রতিবেশী নেপাল ও ভারতে বহু মানুষের প্রাণহানি এবং আমাদের দেশের আহত ও নিহতের ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। বেদনার্ত মন নিয়ে অনেক দিন পর সরাসরি আপনাদের মুখোমুখি হয়েছি। আপনাদের স্বাগত: জানাচ্ছি। আমি কেমন ছিলাম এবং এখনো কেমন আছি, আপনারা ভালো জানেন। দীর্ঘদিন আপনারা আমার সঙ্গে কষ্ট করেছেন। এখনো করছেন। এরজন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।সাংবাদিকতা হচ্ছে সত্য অনুসন্ধান এবং তা মানুষের সামনে তুলে ধরার এক কষ্টকর মহান পেশা। এই পেশায় যারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়োজিত, আমরা তাদেরকে বরাবর সম্মান করি। আমি আশা করি, দেশ-জাতির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে সত্যের প্রতি এই অবিচল নিষ্ঠা আপনারা সাহসের সঙ্গে অব্যাহত রাখবেন। কারণ, দেশের মানুষ আপনাদের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আজ আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে চলমান পরিস্থিতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরবো। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের বক্তব্য রাখবো। শুরুতেই আমি গত পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষবরণ উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে রাজধানীতে দেশের ঐতিহ্যবাহী সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের যে বোনেরা ও মেয়েরা ন্যক্কারজনকভাবে নির্যাতিত ও সম্মানহানির শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। এসব ঘৃণ্য অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। যাদের দায়িত্বপালনে শৈথিল্য ও কর্তব্যে অবহেলার কারণে কিংবা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রশ্রয়ে এ ধরণের জঘণ্য ঘটনা ঘটেছে, তাদেরও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। যে-সরকার ও প্রশাসন কোনো সামাজিক উৎসবে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারেনা, মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারেনা এবং এমন ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিকার করতে পারেনা, তাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ। ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ। বিএনপি’র অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেলো। এখনো তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। সালাহউদ্দিনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিষ্ঠুর বিদ্রুপ করেছেন। আমরা উৎকণ্ঠিত। আমরা তাদের সন্ধান চাই। তাদেরকে অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। প্রকৃতপক্ষে দেশে এখন কোনো মানুষের সামান্যতম নিরাপত্তাও নেই। যে-ভাবেই ক্ষমতা কব্জা করে থাকুক না কেন, দেশে তো একটা সরকার আছে। কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় তাদের কোনো ভাবনা কিংবা দায়-দায়িত্ব আছে বলে মনে হয়না। কেননা তারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। কাজেই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নেই। তাদের ভাবনা কেবল ক্ষমতাকে কিভাবে পাকাপোক্ত রাখা যায়। এ লক্ষ্যেই তারা বিরোধীদল ও ভিন্নমত দমন এবং জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ স্তব্ধ করার একমাত্র কাজে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নিয়োজিত করে রেখেছে। যার ফলে তারা অন্যায় কাজে উৎসাহিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকদেরকে তারা আইনের উর্ধ্বে রেখেছে। ফলে দেশে কোনো শান্তি-শৃঙ্খলা নেই। সৃষ্টি হয়েছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির সময় ৮ জন নিহত হবার ঘটনা এই পরিস্থিতির সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
দেশে কোনো অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নেই। সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে দলীয় স্বার্থে ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে। আপনারা নিজেরাও সেটা ভালো জানেন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে আপনারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। কিন্তু তার সবই অরণ্যে রোদন হয়েছে। দেশে এমন সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন ছাড়া আর কারো যেনো সুবিচার পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। সিভিল শাসন ও রাজনীতির একটা শোভন-সুন্দর কালচার থাকে। রাজনীতির ভাষা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের সঙ্গে আচরণ সেই কালচারেরই অংশ। বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা সেই কালচার শেখেনি। কাউকেই তারা সম্মান করতে জানেনা। ফলে তাদেরকেও কেউ সম্মান করেনা। তাদের আচরণ ও ভাষা পরিবেশকে কলুষিত ও পরিস্থিতিকে কেবল উত্তপ্তই করতে পারে। রাজনীতিতে কৌশল থাকে। কিন্তু নি¤œরুচির মানুষেরা অপকৌশলকে কৌশল ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। জনগণের সমর্থন নয়, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং অপপ্রচারকেই তারা জেতার পথ বলে ধরে নিয়েছে। যুক্তি, সংযম, সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সংলাপের পথ তারা এড়িয়ে চলতে চায়। দেশে সকল সংকটের সূত্র সেখানেই। এখান থেকে বেরিয়ে মতামতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুস্থ রাজনীতির ধারায় ফিরতে না পারলে আমাদের সমাজ ক্রমাগত পিছিয়ে পড়বে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম আকাঙ্খা ছিল একটি গণতান্ত্রিক স্বদেশের। এই গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে বার বার রক্ত দিয়ে সংগ্রামে জয়ী হতে হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে আজ আবার হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে আবার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। আসুন, সবাই মিলে সেই পথে অগ্রসর হই। দেশ ও জনগণকে বাঁচাই।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
সকলেই জানেন যে, ক্ষমতাসীন ছাড়া দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এবং বেশিরভাগ মানুষের দাবি হচ্ছে, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন। আলোচনার মাধ্যমে সেই সমঝোতা প্রতিষ্ঠা হয়নি বলেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ অধিকাংশ দল সেই নির্বাচন বর্জন করে। ফলে নির্বাচনের নামে যে-প্রহসন হয়েছে তা কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কথা ছিল, এরপর আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদ ভেঙ্গে নতুন নির্বাচন হবে। সেই আলোচনার জন্য আমরা এক বছর অপেক্ষা করেছি। এরপর প্রহসনের নির্বাচনের বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি দিলে ক্ষমতাসীনেরা কী ধরণের সন্ত্রাসী পথ বেছে নেয়, তা সকলেরই জানা।এর প্রতিবাদে এবং সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করলে তারা আরো বেশি সন্ত্রাসী হয়ে উঠে। বেছে নেয় নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি মোকাবিলায় ক্ষমতাসীনেরা ঘৃণ্য অপকৌশল অবলম্বন করেছে। আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। আমাদের দল-জোটের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করে। কোনো নেতা বিএনপি’র পক্ষ থেকে কথা বললেই তাকে আটক অথবা গুম করে ফেলে।

আমাদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। রাজপথে নামার চেষ্টা করলেই গুলি চালিয়েছে কিংবা ধরে নিয়ে গিয়ে দৈহিক নির্যাতন করেছে। দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের কর্মসূচি ভঙ্গ করতে পুলিশ-র্যাব-বিজিপির পাহারায় রাজপথে ও মহাসড়কে জোর করে যানবাহন নামিয়েছে। সে-সব যানবাহনে রহস্যজনক বোমা হামলায় অনেক নিরাপরাধ মানুষ নিহত ও দগ্ধ হয়েছে। সশস্ত্র প্রহরায় চলাচলরত যানবাহনে কিভাবে এমন হামলা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে কেন অপরাধীরা ধরা পড়েনি তা আজও রহস্যে ঢাকা। তবে প্রতিটি ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের তাদের বাড়ি-ঘর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেককে বিনাবিচারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নৃশংস নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করা হয়েছে অনেক তরুণকে। বিরোধী দলের কর্মীদের ধরে পুলিশে দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজানোর সুযোগ করে দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আর্থিক পুরস্কারও দেয়া হয়েছে। অথচ অস্ত্র, গুলি, বোমাসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেকে ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়ার পর উপরের নির্দেশে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে একতরফা অসত্য প্রচারণা।

সাংবাদিক ভাই-বোনেরা,
আমরা বোমা হামলায় নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছি। এ ধরণের হত্যার তীব্র নিন্দা করেছি। বোমা হামলায় এবং বিনা বিচারে প্রায় সমান সংখ্যক মানুষকে হত্যার ঘটনার ব্যাপারে আমরা আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছি। আমি আজ আবার তার পুনরুল্লেখ করে বলছি, হত্যা, নাশকতা, সন্ত্রাস ও লাশের রাজনীতি আমরা করিনা। সন্ত্রাস-নির্ভর নষ্ট রাজনীতির চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ। অতীত ও নিকট ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করে। এবারেও তারা জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ভীত হয়ে দু’ধারা ছুরির মতো অপকৌশল নিয়েছিল। আমাদের কর্মসূচি ভ-ুল করতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে সশস্ত্র প্রহরায় একদিকে পথে যানবাহন নামিয়েছে।

অপরদিকে সেই যানবাহনে বোমা হামলায় মানুষ হত্যা করে তার দায় বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে হত্যা, নির্যাতন, গুম, গণগ্রেফতার ও একতরফা অপপ্রচারের পথ উন্মুক্ত করেছে। সৌভাগ্যের বিষয় এই অপরাজনীতি এবং একতরফা অপপ্রচার দেশের বেশির ভাগ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। কারণ, তারা জানে এবং দেখে আসছে যে, সন্ত্রাস-নির্ভর নষ্ট রাজনীতি ও অপপ্রচারে আওয়ামী লীগ কতোটা পারদর্শী। এ প্রসঙ্গে আমি আওয়ামী লীগের সাবেক একজন নেতা, বর্তমানে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের একটি উক্তির কথা উল্লেখ করতে চাই। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাম্প্রতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন: ‘শেখ হাসিনা মেরেও জিতেছেন, কেঁদেও জিতেছেন।’ মুক্তিযোদ্ধা-রাজনীতিক জনাব সিদ্দিকীর সঙ্গে আমি একটু দ্বিমত পোষণ করতে চাই। মানুষ মারায় যদি জেতার প্রশ্ন আসে শেখ হাসিনা তাতে অবশ্যই জিতেছেন। তবে কেঁদে তিনি জিততে পারেননি। শেখ হাসিনার পরিকল্পিত নৃশংসতার শিকার হয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের জন্য তার কান্নাকে এদেশের বেশির ভাগ মানুষ ‘কান্নার অভিনয়’ হিসেবেই মনে করেন। তাই তিনি যত কাঁদেন এবং যত অপপ্রচার করেন, মানুষ ততো বেশি মুখ ফিরিয়ে নেয় তার দিক থেকে। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষের মনের অব্যক্ত ভাষা পাঠ করতে পারি। দেশের মানুষ কী চায় তা আমরা জানি ও বুঝি। মানুষ যে সীমাহীন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়নি তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি, আপনারাও দেখছেন।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে এই নগরীতে ক’দিন জনসংযোগে নেমে জনগণের যে আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখেছি, তাতে আমি অভিভূত। মানুষ উদ্বেলিত। পরিবর্তন কামনায় অধীর। আমি যে-দিকেই গিয়েছি, বাঁধভাঙ্গা ¯্রােতের মতো মানুষ নেমে এসেছে উচ্ছ্বসিত হয়ে, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে। এই গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাদের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। আমার হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নেই। কামান-বন্দুক নেই। পুলিশ, র্যাব, বিজিপি, আনসার নেই। কোনো বাহিনী নেই। সশস্ত্র সন্ত্রাসী নেই। আমার আছে শুধু আল্লাহ্র ওপর ভরসা আর দেশবাসীর সমর্থন ও দোয়া। এর উপর নির্ভর করেই আমি রাজপথে নেমেছি। জনগণের কাছে যাচ্ছি। এতে এতো ভয় পাবার কী আছে? কিন্তু তারা ভয় পেয়েছে। এতোদিন তারা প্রচার করতো যে, আমি নাকি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের কোনো জনসমর্থন নেই। কিন্তু আমি জনসংযোগে নামতেই যে-দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে, তাতে তাদের এতো দিনকার সব প্রচারণা মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উত্তরা, কারওয়ান বাজার, ফকিরেরপুলের কাছে ও বাংলামোটরে আমার গাড়িবহরে পরপর চারদিন হামলা করেছে। বাংলামোটরে আমাকে বহনকারী গাড়ির উপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। গাড়িটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহরের অন্যান্য যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়। হামলায় আমার অন্যতম উপদেষ্টা, প্রাক্তণ সচিব ও পুলিশের সাবেক আইজি আব্দুল কাইয়ুম আহত হন। মারাত্মক জখম করা হয় আমার দুজন নিরাপত্তা রক্ষীসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও নেতা-কর্মীকে। হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেয় এবং হামলাকারীদের পুলিশ পুরোপুরি সহযোগিতা করে। সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে কারওয়ানবাজারে। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। বহরের অনেকগুলো গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে।বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানসহ কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী, কর্তব্যরত সাংবাদিক ও নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ ছিল নীরব দর্শক।

সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আমি তখন সবেমাত্র গাড়িতে উঠে বসেছি। আমি যে-পাশে বসা ছিলাম, সেই পাশেই গাড়ির জানালার কাঁচে গুলি লাগে। এতে গ্লাস ভেদ না করলেও তা ফেটে যায়। আল্লাহর রহ্মতে অল্পের জন্য আমার জীবন রক্ষা পায়। কতটা মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করলে বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ ফেটে যায়, তা সবাই বোঝে। এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।প্রতিটি হামলার ঘটনাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সরাসরি উস্কানির ফল এবং সুপরিকল্পিত। এসব হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অংশ নেয়। সংবাদপত্রে ও টেলিভিশনের সচিত্র প্রতিবেদনে হামলাকারীদের অনেকের চেহারা স্পষ্ট। অনেকের নামধাম ও সাংগঠনিক পরিচয় আপনাদের রিপোর্টেই তুলে ধরা হয়েছে। টিভি ফুটেজেও হামলাকারীদের স্পষ্ট চেনা গেছে। সন্ত্রাসীরা কেউ কেউ সাংবাদিকদের কাছে হামলায় অংশ নেয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছে। ফকিরেরপুলের কাছে আমার গাড়ি বহরে হামলার সময় ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নিজে উপস্থিত ছিলেন। সে ছবি সংবাদপত্রে এসেছে। কারওয়ানবাজারে আমার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সশস্ত্র হামলায় অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজনকে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পাশে থেকে তার পক্ষে প্রচার চালাতে দেখা গেছে। এই হামলাকারীদের কাউকে কাউকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পাশে ছবিতে দেখা গেছে। কাজেই এইসব পরিকল্পিত হামলার উৎস ও যোগসূত্র বুঝতে কারো কষ্ট হয় না। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বারবার হামলা চালানো সত্বেও একজন সন্ত্রাসীকেও এখন পর্যন্ত ধরা হয়নি। বরং যারা আক্রান্ত ও আহত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা নেয়া হয়েছে। আর গ্রেফতার করা হচ্ছে আমাদের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের। আটক করা এবং হুমকি দেয়া হচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের। আমার প্রাণনাশের লক্ষ্যে দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলার পর প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনাকে যেভাবে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি বুঝতে পারছি, এর কোনো বিচার হবে না। সন্ত্রাসীরা ক্ষমতার খুঁটির জোরে ও আস্কারা পেয়ে একের পর এক নির্বিঘেœ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু এতে আমি ভয় পাইনা। জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। তিনি রক্ষা করলে আমাকে কেউ হত্যা করতে পারবেনা। আমি এ কথাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্ একদিন এই অন্যায়-অবিচার, এই সন্ত্রাস, এই মিথ্যাচার এবং এই হত্যাচেষ্টার ন্যায্যবিচার করবেন। আমি আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষ করে ঢাকাবাসীকে বলবো, আপনারা দেখছেন, ক্ষমতার দম্ভে আমার সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করা হচ্ছে! আমার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে ভালোবেসে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। অল্প কিছুদিন আগে আমি আমার আদরের ছোট ছেলেটিকে চিরকালের জন্য হারিয়েছি। আমার একমাত্র জীবিত সন্তানটি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দূরদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জীবনের এই প্রান্তে এসে প্রিয় মাতৃভূমিতে স্বজনহীন পরিবেশে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এখনো আমি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমতো সংগ্রাম করে যাচ্ছি। এখন আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আত্মীয়। আমার সকল তৎপরতা আপনাদেরকেই ঘিরে। তাই সব অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিকার ও উপযুক্ত জবাব দেয়ার ভার আজ আমি আপনাদের উপরেই অর্পণ করলাম। আমার প্রাণনাশের জন্য উপর্যুপরি হামলার ঘটনায় দেশবাসী ও বিদেশী বন্ধুরা যারা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন আমি তাদের সকলের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু ধারাবাহিক এসব হামলা ও নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেয়ার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়া দূরে থাকুক; টু-শব্দটি পর্যন্ত করেনি।

উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন চলাকালে আকস্মিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। নির্বাচনটি নির্দলীয় ভিত্তিতে হবার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ৩টি সিটিতে তার মনোনীত মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন। তারা হয়তো ভেবেছিলেন, তাদের সর্বব্যাপী আক্রমণে পর্যুদস্ত বিএনপি সিটি নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু আমরা সিনিয়র সিটিজেন ও পেশাজীবীদের মনোনীত প্রার্থীদেরকে ৩টি সিটি কর্পোরেশনে সমর্থন দিয়ে এই নির্বাচনে যুক্ত হবার সিদ্ধান্ত নিই। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই সরকারের অধীনে, যারা ভোটারবিহীন নির্বাচনী প্রহসনে রাষ্ট্রক্ষমতা কব্জা করেছে। এই নির্বাচন হচ্ছে, চরম পক্ষপাতদুষ্ট ঠুঁটো জগন্নাথ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে রয়েছে চরমভাবে দলীয়করণ করা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাজেই এ নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে সে-সন্দেহ দেশবাসীর মতো আমাদেরও ছিল এবং আছে। তা সত্বেও আমরা কয়েকটি কারণে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
১. আমরা শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি করেছি। স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের ওই দাবি নেই।
২. দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট অংশ নিয়েছে। সবগুলো সিটিতে আমরা বিপুল ভোটে জিতেছি। উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে প্রথম পর্বেও আমাদের সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুলভাবে জয়লাভ করে।এই পরিস্থিতি দেখে আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি ও কারচুপি করে অনেক জায়গায় আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়।তবে জনগণের বিপুল সমর্থন যে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রতি রয়েছে, তা সবগুলো নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৩. সভা-সমাবেশসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ও জনগণের কাছে যাবার সুযোগ আমাদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সীমিত আকারে হলেও সে সুযোগ আমরা নিতে চেয়েছি।
৪. একটি গণতান্ত্রিক দল হিসাবে সকল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থায় আমরা বিশ্বাস করি। তাই আমরা নির্বাচনমুখী একটি দল হিসাবে প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্বের জায়গায় জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছি।
৫. একদলীয় শাসন থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিজয়ের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আমরাই সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করি। জনগণের সরাসরি ভোটে সিটি কর্পোরেশনে মেয়র নির্বাচনের ব্যবস্থাও আমরাই করি। যে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকাটাই বিএনপি যুক্তিসঙ্গত মনে করেছে।
৬. সর্বোপরি, জনগণের ওপর আমাদের রয়েছে অটুট আস্থা। আমরা মনে করি, দেশের মানুষ সুযোগ পেলেই আমাদেরকে সমর্থন করবে এবং আমাদের সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।
৭. এই নির্বাচনকে আমরা সরকার, শাসক দল, নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি টেস্ট কেস হিসাবেও নিয়েছি।
এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কোনো পরিবর্তন হবেনা।এমন একটি নির্বাচনেও যদি তারা যথাযথ আচরণ না করে, যদি সকল পক্ষের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি না করে, যদি নিরাপদ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারে এবং যদি সন্ত্রাস, ডাকাতি, কারচুপির মাধ্যমে তারা জনগণের রায়কে বদলে ফেলে, তাহলে সকলের কাছে আবারো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে, এদের অধীনে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবান্তর।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
এ পর্যন্ত আপনারা যা দেখছেন তাতে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এই টেস্ট কেসে সরকার, ক্ষমতাসীন দল, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শোচনীয়ভাবে ফেইল করে চলেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি পদক্ষেপে। এই পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোটদান নিশ্চিত করতে আমরা নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনীর পর্যাপ্ত পরিমাণ সদস্য মোতায়েনের দাবি করেছিলাম। যাতে ভোট দেয়া, ভোট গণনা, ফল প্রকাশ এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ের সম্ভাব্য সহিংসতাও রোধ করা যায়। কারণ, জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে সশস্ত্র বাহিনীর ওপর সকলের আস্থা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে সাহসিকতার সাথে পালনের ব্যাপারে এই বাহিনী গৌরবোজ্জল ঐতিহ্য স্থাপন করেছে। নিজের দেশেও তারা সফলভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনও করতে পারবেন বলে আমরা মনে করি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ক্ষমতাসীনদের ইংগীতে তাদের ভোট ডাকাতির পরিকল্পনার দোসর হয়ে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের কথা বলে এক ধূর্ত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তারা প্রথমে বলেছিলো, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনের সময়ে ও আগে-পরে মোট চার দিন নির্বাচনী এলাকায় সেনা মোতায়েন থাকবে। পরে তারা তাদের চিঠি বদল করে নতুন সংশোধিত চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সেনা ছাউনিতেই থাকবেন রির্জাভ ফোর্স হিসাবে। রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনবোধে ডাকলেই কেবল তারা কোথাও যেতে পারবেন এবং ম্যাজিস্টেটের নির্দেশে কাজ করবেন। এটা অর্থহীন এবং পুরোই প্রতারণামূলক। সশস্ত্রবাহিনীর ওপর যে তাদের কোনো আস্থা নেই এতে তা আবার প্রমাণিত হলো। প্রমাণিত হলো যে, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি ও কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে ফেলার এবং ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানোর যে পরিকল্পনা এঁটেছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে তারা বাধা বলে মনে করছে। আর ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস ও কারচুপির পরিকল্পনায় সহায়তা দিতেই নির্বাচন কমিশন এ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা বিচারিক ক্ষমত