দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ এপ্রিলঃ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরুপাক্ষ পাল। একইসাথে তিনি মুদ্রানীতি পূর্ণভাবে কার্যকরণের জন্য সুদহার নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেন।তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার ১৫ শতাংশ। সুদহার বেশি হওয়ায় কাঙ্খিত মাত্রায় বিনিয়োগ হচ্ছে না। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পারলে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে। মুদ্রানীতি পূর্ণভাবে কার্যকরণের জন্য সুদহার নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে দিতে হবে। এতে সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ আরো সহজ হবে।রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত অর্থনীতির বর্তমান হালচাল শীর্ষক এক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীও বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার কমানোর পক্ষে মত প্রকাশ করে বলেন, সুদহার কমানোর পাশাপাশি যোগাযোগ অবকাঠামো সুবিধাসহ নিরবচ্ছিন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অবককাঠামো খাতে ইতোমধ্যে অনেক কাজ করেছে। এর বড় প্রমাণ হলো-২০০৯ সালে যেখানে মাত্র ৪৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশে। সাধারণ মানুষের জীবনমানের অনেক উন্নতি হয়েছে।বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদের সভাপতিতে অনুষ্ঠানে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে বিরুপাক্ষ পাল ছাড়াও ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেন যোগাযোগ খাতে চলমান মেগা প্রকল্পের ওপর পৃথক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. বিরুপাক্ষ পাল বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রিয় ব্যাংকের প্রধান কাজ। গত কয়েকবছর বাংলাদেশ ব্যাংক ভালোভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সুদহার বেশি থাকায় বিনিয়োগ বাড়ছে না। সুদহারের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। যা বিনিয়োগের জন্য বড় বাঁধা। সঞ্চয়পত্রের বিদ্যমান সুদহারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সুদহার কমানোর বিষয়ে সরকারের কাছে মতামত জানিয়েছে।উল্লেখ্য, তুলনামূলক সুদহার বেশি হওয়ায় চলতি অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ৫ মাসে অতিক্রম করেছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১২ শতাংশ।বিরুপাক্ষ পাল বিনিয়োগ বাড়াতে যোগাযোগ অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ-গ্যাস পরিস্থিতির উন্নয়ন, গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত এবং বিচারিক কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যোগাােযগ অবকাঠামোসহ জ্বালানি খাতের চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন হলে জিডিপি ৭ শতাংশে উন্নীত হবে এবং দারিদ্র্যসীমা ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।