খালেদা জিয়া-Khaleda zia

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ এপ্রিল: সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলসমর্থিতদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও টাকা ছড়ানোর অভিযোগ এনেভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা বসাতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে নেমে দারুণ সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমি নিশ্চিত, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ একটুখানি সুযোগ পেলেই নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে অত্যাচারের বদলা নেবে, উপযুক্ত জবাব দেবে।রোববার বেলা ২টায় গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোটারদের প্রতি এ আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন বিএনপি চেয়ারপারসেন বেগম খালেদা জিয়া।প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।লিখিত বক্তব্যের একপর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাকে আন্দোলনে নামতে হয়েছে। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকার আমাকে গৃহবন্দি করে রাখে। সে সময় আমার ছোট ছেলে বিদেশে অসুস্থ ছিল। তখন তাকে বিদেশে দেখতে যাওয়ারও উপায় ছিল না। আমাকে কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। ফলে আমার প্রিয় পুত্রকে চিরতরে হারাতে হয়েছে।এসব কথা বলতে বলতে খালেদা জিয়া অশ্র“সজল হয়ে পড়েন। এসময় তিনি বারবার চোখ মুছছিলেন।

পরে আবেগ সংবরণ করে খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যকে হারালেও এখন আপনারাই আমার পরিবার। আপনাই আমার স্বজন। আমার সকল তৎপরতা আপনাদের ঘিরেই। আপনাদের অধিকার রক্ষায় আমার আন্দোলন চলবেই।এ সময় খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।সিটি নির্বাচনে নিজের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণাকালে হামলার ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীদের উস্কানির ফল বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।খালেদা বলেন, বারবার আমার প্রাণনাশের জন্য হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বারবার উস্কানির ফল এ হামলা। কারা এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের পরিচয় প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু জানি, এর বিচারও হবে না।গাড়ি বহরে পরপর তিনবারের হামলার শিকার হয়েও ভীত নন বলে দাবি করেন তিনি।তিনদিনের ঘটনার ও এতে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণও দেন খালেদা।ঢাকায় ভোটের প্রচারের সময় গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সুপরিকল্পিত উসকানির পর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা এই হামলা চালায়।

বর্তমান সরকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের নেই।ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের মগ মার্কা, উত্তরে তাবিথ আউয়ালের বাস মার্কা ও চট্টগ্রামে মনজুর আলমের কমলা লেবু মার্কায় ভোট চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আপনাদের ভোট অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক বিরাট শক্তি। সঠিকভঅবে সেই শক্তি প্রয়োগ করুন, নীরব বিপ্লব ঘটান।তিনি সবাইকে ২৮ এপ্রিল সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে এবং কোনো অনিয়ম দেখলে প্রতিবাদ করতে বলেন। আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ এনে ভোটারদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, টাকা নেবেন, কিন্তু বিবেক অনুযায়ী ভোট বেবেন।খালেদা জিয়া বলেন, বিকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা বসানোর জন্য আমি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ফল নিয়ে তবে বাড়ি ফিরবেন, যাতে আপনাদের দেওয়ার ভোটের ফল তারা বদলে ফেলতে না পারে।আন্দোলনের কর্মসূচি সামনে রেখে গত ৩ জানুয়ারি থেকে একটানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন খালেদা জিয়া। কার্যালয়ে অবস্থানকালে গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের প্রতি সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিশোধ নেয়ার আহ্বান জানালেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এছাড়া সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভোট শেষে ভোটকেন্দ্রে পাহাড়া বসানোর জন্যও সাধারণ ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা।দীর্ঘ লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই প্রতিবেশী নেপাল ও ভারতে সংঘটিত ভূমিকম্পে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া।তিনি বলেন, প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে প্রতিবেশী নেপাল ও ভারতে বহু মানুষের প্রাণহানি এবং আমাদের দেশের আহত ও নিহতের ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। বেদনার্ত মন নিয়ে অনেক দিন পর সরাসরি আপনাদের মুখোমুখি হয়েছি।

এরপর সাংবাদিকদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন আপনারা আমার সঙ্গে কষ্ট করেছেন। এখনো করছেন। এরজন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি, দেশ-জাতির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে সত্যের প্রতি এই অবিচল নিষ্ঠা আপনারা সাহসের সঙ্গে অব্যাহত রাখবেন। কারণ, দেশের মানুষ আপনাদের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে।এরপর তিনি ঢাকার দু’টি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছাড়াও দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং বর্তমান পরিস্থিতি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।এ সময় পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য স্থানে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনা ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের যে বোনেরা ও মেয়েরা ন্যক্কারজনকভাবে নির্যাতিত ও সম্মানহানির শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। এসব ঘৃণ্য অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।তিনি আরও বলেন, যে সরকার ও প্রশাসন কোনো সামাজিক উৎসবে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারেনা এবং এমন ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিকার করতে পারেনা, তাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ। ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিষ্ঠুর বিদ্রুপ করেছেন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া অবিলম্বে সালাহউদ্দিন সহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নিখোঁজ নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।তিনি বলেন, আমরা উৎকণ্ঠিত। আমরা তাদের সন্ধান চাই। তাদেরকে অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

দেশে কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই বলেই আশুলিয়ার দুধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো শান্তি-শৃঙ্খলা নেই। সৃষ্টি হয়েছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় দুর্র্ধষ ব্যাংক ডাকাতির সময় ৮ জন নিহত হবার ঘটনা এই পরিস্থিতির সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।নিজের বক্তব্যে পুনরায় তিনি সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীন ছাড়া দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এবং বেশিরভাগ মানুষের দাবি হচ্ছে, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন।

বিএনপি ও ২০ দলের সাম্প্রতিক আন্দোলনে পেট্রোল বোমা হামলা ও নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, একই সঙ্গে আমাদের কর্মসূচি ভঙ্গ করতে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিপির পাহারায় রাজপথে ও মহাসড়কে জোর করে যানবাহন নামিয়েছে। সে-সব যানবাহনে রহস্যজনক বোমা হামলায় অনেক নিরাপরাধ মানুষ নিহত ও দগ্ধ হয়েছে। সশস্ত্র প্রহরায় চলাচলরত যানবাহনে কিভাবে এমন হামলা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে কেন অপরাধীরা ধরা পড়েনি তা আজও রহস্যে ঢাকা। বোমা হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন,আমরা বোমা হামলায় নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। বোমা হামলায় এবং বিনা বিচারে প্রায় সমান সংখ্যক মানুষকে হত্যার ঘটনার ব্যাপারে আমরা আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছি।সরকার বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে দোধারা ছুরি’র মত কৌশল হাতে নিয়ে দাবি করে খালেদা বলেন, আমি আজ আবার তার পুনরুল্লেখ করে বলছি, হত্যা, নাশকতা, সন্ত্রাস ও লাশের রাজনীতি আমরা করি না। সন্ত্রাস-নির্ভর নষ্ট রাজনীতির চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এবারেও তারা জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ভীত হয়ে দু’ধারা ছুরির মতো অপকৌশল নিয়েছিল। আমাদের কর্মসূচি ভণ্ডুল করতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে সশস্ত্র প্রহরায় একদিকে পথে যানবাহন নামিয়েছে।অপরদিকে সেই যানবাহনে বোমা হামলায় মানুষ হত্যা করে তার দায় বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে হত্যা, নির্যাতন, গুম, গণগ্রেফতার ও একতরফা অপপ্রচারের পথ উন্মুক্ত করেছে।এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা মেরেও জিতেছেন,কেঁদেও জিতেছেন’ শীর্ষক কাদের সিদ্দিকীর একটি বক্তব্যের অবতারণা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা-রাজনীতিক জনাব সিদ্দিকীর সঙ্গে আমি একটু দ্বিমত পোষণ করতে চাই। মানুষ মারায় যদি জেতার প্রশ্ন আসে শেখ হাসিনা তাতে অবশ্যই জিতেছেন।

তবে কেঁদে তিনি জিততে পারেননি। শেখ হাসিনার পরিকল্পিত নৃশংসতার শিকার হয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের জন্য তার কান্নাকে এদেশের বেশির ভাগ মানুষ কান্নার অভিনয় হিসেবেই মনে করেন। তাই তিনি যত কাঁদেন এবং যত অপপ্রচার করেন, মানুষ ততো বেশি মুখ ফিরিয়ে নেয় তার দিক থেকে।খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় তার গাড়ি বহরের ওপর শাসক দল সমর্থিত সন্ত্রাসীদের হামলার বিষয়ে বলেন, এতোদিন তারা প্রচার করতো যে, আমি নাকি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের কোনো জনসমর্থন নেই। কিন্তু আমি জনসংযোগে নামতেই যে-দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে, তাতে তাদের এত দিনের সব প্রচারণা মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উত্তরা, কারওয়ান বাজার, ফকিরেরপুলের কাছে ও বাংলামোটরে আমার গাড়িবহরে পরপর চারদিন হামলা করেছে। বাংলামোটরে আমাকে বহনকারী গাড়ির উপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেয় এবং হামলাকারীদের পুলিশ পুরোপুরি সহযোগিতা করে। সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে কারওয়ানবাজারে। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। বহরের অনেকগুলো গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে।

হামলার সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আমি তখন সবেমাত্র গাড়িতে উঠে বসেছি। আমি যে-পাশে বসা ছিলাম, সেই পাশেই গাড়ির জানালার কাঁচে গুলি লাগে। এতে গ্লাস ভেদ না করলেও তা ফেটে যায়। আল্লাহর রহমতে অল্পের জন্য আমার জীবন রক্ষা পায়। কতটা মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করলে বুলেটপ্র“ফ গাড়ির কাঁচ ফেটে যায়, তা সবাই বোঝে। এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।প্রতিটি হামলার জন্য তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, প্রতিটি হামলার ঘটনাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সরাসরি উস্কানির ফল এবং সুপরিকল্পিত। এসব হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অংশ নেয়।

তবে এসব হামলাকে ভয় পান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু এতে আমি ভয় পাইনা। জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। তিনি রক্ষা করলে আমাকে কেউ হত্যা করতে পারবে না। আমি এ কথাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্ একদিন এই অন্যায়-অবিচার, এই সন্ত্রাস, এই মিথ্যাচার এবং এই হত্যাচেষ্টার ন্যায্যবিচার করবেন।সরকার ক্ষমতার দম্ভে অন্যায় আচরণ করছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আত্মীয়।তিনি বলেন,আপনারা দেখছেন, ক্ষমতার দম্ভে আমার সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করা হচ্ছে! আমার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে ভালোবেসে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। অল্প কিছুদিন আগে আমি আমার আদরের ছোট ছেলেটিকে চিরকালের জন্য হারিয়েছি। আমার একমাত্র জীবিত সন্তানটি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দূরদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জীবনের এই প্রান্তে এসে প্রিয় মাতৃভূমিতে স্বজনহীন পরিবেশে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এখনো আমি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমতো সংগ্রাম করে যাচ্ছি। এখন আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আত্মীয়।এপ্রিল তিন সিটির নির্বাচন ঠিকভাবে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে ভয় না পেতে আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, আপনাকে নিরাপদে নামতে সাহায্য করবো।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি বিনা ভোটে ক্ষমতায় বসে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। এ দম্ভ ত্যাগ করুন। দিন সব সময় সমান যায় না। সিটি নির্বাচন ঠিকভাবে হতে দিন। ক্ষমতা যাবে না আপনার। এখন আপনার অবস্থাবাঘের পিঠে সওয়ারের মতো। নামতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু ভয় পাবেন না। আমরা আপনার মতো জিঘাংসাপরায়ণ নই। বলছি, সংলাপ-আলোচনার পথে আসুন। আমরা আপনাকে নিরাপদে নামতে সাহায্য করবো।সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা।