দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২৬ এপ্রিলঃ গাজীপুরে দ্বিতীয় দিন রবিবার দুপুরে ফের ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পে জেলার বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আতংকিত শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে কারখানা ভবন থেকে বেরোতে গিয়ে অন্ততঃ দেড়শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। এদিকে ভ’মিকম্পের সময় এক কারখানার আতংকিত শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল ও সর্টগানের গুলি ছুড়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের ৫ সদস্যসহ অন্ততঃ ১২ জন আহত হয়েছে। এঘটনায় জেলার অধিকংাশ গার্মেন্টস কারখানা ছুটি ঘোষনা করে কতৃপক্ষ।
পুুলিশ, শ্রমিক ও এলাকাবাসি জানায়, শনিবার ভ’মিকম্পের পর শিল্পাঞ্চল গাজীপুর জেলার অধিকাংশ কারখানাগুলোর শ্রমিকদের মাঝে কারখানা ভবনে ফাটল ও হেলে পড়াসহ নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে শ্রমিকদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয়। রবিবার দুপুরেও টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আকস্মিক ভূকম্পন শুরু হয়। এসময় গাজীপুর মহানগরের বড়বাড়ী এলাকার হোপ লোন ফ্যাশন, ভোগড়ার আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড, মোগরখাল এলাকার টিএনজেড ফ্যাশন,কাশিমপুরের মাল্টিফ্যাব, নাওজোড়ের রানা টাওয়ার, সদর উপজেলার মনিপুরের ইউটাহ ফ্যাশন লি:, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিন্স ও সফিপুরের নীট এশিয়া গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের মাঝে আতংক দেখা দেয়। এসময় এসব কারখানার আতংতিক শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে কারখানা ভবন থেকে বাইরে বেরোতে গিয়ে অন্ততঃ দেড়শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। এদের মধ্যে ৪৭ জনকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যদেরকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রেরণ করা হয়েছে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহতদের মধ্যে টিএনজেড ফ্যাশনের আয়েশা (২৫), কল্পনা (২০), পারভীন (২৬), মাসুদা (২০), শামীমা (৩০), নুপুর (২৫), পারভীন (২০), শহীদুল (৩০), ইউটাহ ফ্যাশনের আজিদা খাতুন (২০), রাশিদা (২১), জাকিয়া (২৮), শিরিন (২৩), লায়লা (৩৫), রতœা (২২), রাবেয়া (২৯) এবং রানা টাওয়ারের তানিয়া (১৮) রয়েছে।গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎক আব্দুস সালাম সরকার জানান, বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৩০ জন শ্রমিককে ভর্তি, দুই জনকে ঢাকায় রেফার্ড এবং ১৫জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে রোগী এখনো আসছে।
এদিকে শনিবার ভুমিকম্পের কারনে মাটি দেবে গাজীপুর মহানগরের তারগাছ এলাকার হোপ লোন ফ্যাশন কারখানা ভবন হেলে পড়েছে এবং ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ওই কারখানার শ্রমিকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এঘটনার পর রবিবার ফের ভ’মিকম্পের সময় ওই কারখানার শ্রমিকরা আতংকিত হয়ে উঠে। এসময় তারা দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। আতংকিত শ্রমিকরা কারখানার ভিতর থেকে বাইরে বের হতে চাইলে মালিকপক্ষের লোকজন বাধা দেয় বলে শ্রমিকরা জানায়। এনিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে বাধা উপেক্ষা করে শ্রমিকরা কারখানা থেকে সড়কে বেরিয়ে আসে। বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের মহাসড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিতে গেলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। এসময় পুলিশ শ্রমিকদের লাঠিচার্জ ও ধাওয়া করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে মহাসড়কে যানচলাচল শুরু হয়। এসময় পুলিশের ৫ সদস্যসহ অন্ততঃ ১২ জন আহত হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের এএসপি মাহবুব হোসেন কাজল জানান, তারগাছ এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের এক ইন্সপেক্টরসহ ৫ সদস্য আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল ও সর্টগানের গুলি ছুড়েছে। ভূমিকম্পের কারণে জেলার কোথাও কোন কারখানা দেবে যাওয়া বা হেলে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিকম্প আতংকে হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে শ্রমিক বেশ কিছু শ্রমিক আহত হয়েছে। এ ঘটনায় জেলার প্রায় ৯৯ ভাগ কারখানা রবিবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।