DoinikBarta_দৈনিকবার্তা 070124739658

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ এপ্রিল: তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব মিলিয়ে ৮০ হাজার ফোর্স নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব সিরাজুল ইসলাম। শনিবার দুপুরে ইসি সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মোটামোটি হিসেব করে দেখেছি আনসার, পুলিশ, র‌্যাব কোস্টগার্ড, বিজিবি মিলে প্রায় ৮০ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী নির্বাচনে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা যখনই মনে করবেন, তখনই সেনাবাহিনী চলে আসবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের সব লজিস্টিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল প্রস্তুত করা হয়েছে এবং চট্টগ্রামের মালামাল শুক্রবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনী মালামাল দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।ইসি সচিব বলেন, ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন করে নিরাপত্তাকর্মী ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে যথাক্রমে ১০ ও ১২ জন সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন। এর বাইরে প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে।এছাড়া প্রতি ২ ওয়ার্ডে র‌্যাব সদস্যরা এবং বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তিন সিটিতে প্রায় ১০০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে ইসি।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রচারণা না চালাতে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব সিরাজুল ইসলাম।সিরাজুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া যানবাহন নিয়ে মুভ করতে পারবেন। তবে মটরকেড (গাড়িবহর) নিয়ে তার প্রচারণা করার সুযোগ নেই। কেননা, মটরকেড নিয়ে তিনি যেখানেই থামছেন, সেখানেই চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আচরণবিধিতে স্পষ্ট বলা আছে, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে প্রচারণা চালানো যাবে না। তবে তিনি প্রচারণা চালাতে পারবেন, এতে ইসির কোনো আপত্তি নেই।তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছি, তারা যেন আচরণবিধি মেনে প্রচারণা করেন। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেন কোনো অনাকাঙ্খিত না ঘটে।খালেদা জিয়া নির্দেশনার বাইরে প্রচারণা চালালে কি করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ইতিহাসে নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। নিজেদের মধ্যে কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি নেই। বরং তারা একসঙ্গে হাতে হাত ধরে টেলিভিশনে ছবি দেখিয়েছেন। যা সমগ্র জাতির জন্য আশার প্রতীক।এরপরও অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটি ইসি, নগরবাসী, দেশবাসী প্রত্যাশা করেনি। ভবিষ্যতে যেন তা না ঘটে, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।তিনি বলেন,হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সতর্ক করা হয়েছে। সরকারের সুবিধাভোগী হওয়ায় তিনি নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবেন না।গাড়িবহর ছাড়া বের হলে খালেদার নিরাপত্তা কে দেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রার্থীরা নিরাপত্তা চাইলে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কোনো ব্যক্তি কারো প্রচারণায় গেলে যদি নিরাপত্তা চান, সেটি তো নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। কারো পক্ষে প্রচারণায় যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা চাইলে কমিশন সেটি বিবেচনা করে দেখবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,সরকারের চাপে নয় বা কারো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, আগে থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সহস্র নাগরিক কমিটি আসার অনেক আগে থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ পর্যালোচনা করেই আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।শনিবার সকালে গাড়িবহর নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোনো ব্যাক্তি যেন নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে না পারেন,সেজন্য ডিএমপি, সিএমপি কমিশনার ও মহাপুলিশ পরিদর্শককে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতকেও আইন ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণা অংশ নেওয়ায় খালেদা জিয়াকে সতর্ক করে নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার সকালে এ সংক্রান্ত চিঠি বিএনপি প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে।গাড়িবহর নিয়ে ভোটের প্রচারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের’ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন।গত শনিবার থেকে ঢাকায় গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে থাকা বিএনপি নেত্রী খালেদা মাঝখানে একদিন বিরতি দিয়ে শুক্রবারও প্রচার চালিয়েছেন।সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন সরকারের লাভজনক কোনো পদে না থাকায় আইন অনুযায়ী তার ভোটের প্রচারে থাকতে কোনো বাধা নেই।বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন সহস্র নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুছ। এরপরই আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিঠি দিতে বলে কমিশন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ঠিকানায় ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে গত ছয় দিনে বিএনপি নেত্রীর প্রচার কার্যক্রম আচরণবিধি পরিপন্থি হওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় এবং তাকে বিধি লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।এতে বলা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর নিয়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর সময় সাধারণের চলাচলে বিঘœ ঘটছে। পাশাপাশি তার গাড়ি বহরের ওপর কিছু ব্যক্তি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

১৮ এপ্রিল থেকে তার কার্যক্রম তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, এসব কাজ আচরণবিধির পরিপন্থি, যা শাস্তিমূলক অপরাধ।এসব বিধি আপনাকে অবগত করে এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকার বিশেষ অনুরোধ করছি, লেখা হয়েছে চিঠিতে।এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকেও এ ধরনের চিঠি দেওয়ার পর তিনি নির্বাচনী প্রচার থেকে সরে যান।আচরণবিধির ৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো ব্যক্তি বিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার জরিমানা, সর্বোচ্চ ৬ মাসের দণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। এজন্য ২৬ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে সকল ধরনের প্রচার-প্রচারণা।