দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ এপ্রিল: সরকারি চাকরিজীবীদের ন্যায় প্রবাসীদের জন্য পেনশন স্কীম চালু করতে চান বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। এজন্য তিনি সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।গভর্নর বলেন, অধিকাংশ প্রবাসী যা আয় করেন, তার পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে থাকেন। এতে দেখা যায়, তিনি যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন তার হাতে কোন টাকা থাকে না।এজন্য প্রবাসীরা যে রেমিটেন্স পাঠান এর থেকে কিছু অংশ কেটে রেখে যদি পেনশন স্কীম চালু করা যায়, তাহলে প্রবাসীরাও যেমন লাভবান হবেন, তেমনি তাদের পেনশনের অর্থ দিয়ে বড় তহবিল তৈরি হবে। যা অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।তিনি পেনশন স্কীম চালুর জন্য সরকারকে পৃথক একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, রেগুলেটরি সংস্থা গড়ে তোলা একটা সময়রে ব্যাপার। এজন্য যতদিন রেগুলেটরি সংস্থা গড়ে তোলা না যাচ্ছে,ততদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী আছে।
শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বেসরকারি সংগঠন সেন্টার ফর নন- রেসিডেন্ট বাংলাদেশীজ (এনআরবি)-ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নর এ কথা বলেন।বিনিয়োগ, রেমিটেন্স ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্রান্ডিং’ এই শ্লোগান সামনে রেখে সংগঠনটি এ বছর ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে সম্মেলন করবে।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বক্তব্য রাখেন।
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, আমেরিকান দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সিলর ডেনিয়েল কিন, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।দক্ষ জনশক্তি রফতানির ওপর গুরুত্বারোপ করে আতিউর রহমান বলেন, অভিবাসী গমনেচ্ছু শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তহবিল গঠন করবে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে এই তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে বলে তিনি জানান।বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বো”চ উল্লেখ করে গভর্নর বলেন,‘দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির গড় হার ২ শতাংশ হলেও আমাদের ৪ শতাংশের ওপরে। এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৩ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এর ৬৬ শতাংশ রেমিটেন্সের অবদান।
প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রেরণে সরাসরি নগদ সহায়তা না দিলেও অন্যভাবে তাদের সহায়তা দেওয়া হ”েছ। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ না করলে সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকা আরো বেশি শক্তিশালী হতো। এতে প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে তারা ৪/৫ টাকা কম পেতো। এছাড়া দ্রুততার সাথে রেমিটেন্স পৌঁছে দেওয়ার জন্য মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। প্রবাসীরা এর বড় সুবিধা পাচ্ছেন।অনুষ্ঠানে অর্থনীতিতে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ ব্যাংকিং খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ও বীমা খাতে গ্রীন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নাসির এ চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া গতবছর রেমিটেন্স আহরনকারী সেরা দশ ব্যাংককে পুরুস্কৃত করা হয়।