1429879689

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ এপ্রিল: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেনা মোতায়েন হলে ভোটার ভয়হীনভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু সেনা মোতায়েন না করে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগ) সেনাবাহিনী মোতায়েনে ভয় পায় কেন?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মর্যাদা উজ্জল করেছে। তারপরও তারা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সাহস পাচ্ছে না। কারণ তারা পিলখানায় ষড়যন্ত্র করে সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে, সেনাবাহিনী ধ্বংসের চক্রান্ত করেছে।’ ‘‘ একজন পথচারী আমাকে বলছেন, নির্বাচনে সেনা বাহিনী মোতায়েন করলে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারতো। আমরাও তা বিশ্বাস করি। সেনা মোতায়েনের দাবি ছিলো, জনগনের দাবি।’’ নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন,‘‘ বর্তমান নির্বাচন কমিশন এই সরকারের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।তারা সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ক্যান্টনমেন্টে বসে থাকলে সেনারা ভোটার নিরাপত্তা দিতে পারবে না।’’

1429879661মা-বোনদের প্রতি তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভয় পাবেন না। সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। ভোটগ্রহনের দিন কেন্দ্রে ‘অন্যকিছু’ করলে জনগন সমচিত জবাব দেবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। গুম-খুন-নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ঢাকা সিটি উত্তরে আমাদের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে বাস মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করুন।’তিনি বলেন, ‘‘ আজ ঢাকার মানুষ পরিবর্তন চায়। ভোটারদের বলছি, ঢাকা শহরের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাইলে, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে চাইলে, গ্যাস-বিদ্যু-পানি চাইলে আপনারা ২৮ এপ্রিল সঠিক জায়গা ভোট দিন। দয়া করে সকলে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেবেন।’’ ‘‘ আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, ভোট কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনরা অন্যকিছু করলে আপনারা এর জবাব দেবেন।’’

শুক্রবার বিকেলে ৬ষ্ঠ দিনের নির্বাচনী প্রচারনায় রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের মূল গেইটে এক পথসভায় খালেদা জিয়া এ সব কথা বলেন। ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়ালের পক্ষে প্রচারণায় নেমে তিনি এ দাবি জানান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ বর্তমান সরকার জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আজ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাকে হত্যার উদ্দেশে পরপর তিনদিন হামলা করা হয়েছে। পথে পথে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি ভয় পাই না। আমি পিছু হটব না, প্রচারণা চালিয়ে যাব। উপরে আল্লাহ আছেন।’ খালেদা জিয়া সরকারকে ‘জালিম’ বলে অভিযুক্ত করে বলেন, “টিএসসিতে মা-বোনদের ওপর যে ঘটনা ঘটালো তাদের গুণ্ডা বাহিনী, এর এখনো কোনো বিচার হয়নি এখনো। আমি যেন নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে না পারি এবং আমাদের প্রার্থী যেন জয়ী হতে না পারে, সেজন্য আমার গাড়িবহরেও হামলা চালিয়েছে সরকারের গুণ্ডা বাহিনী।” তিনি বলেন, “এই সরকার সন্ত্রাসী, জনসমর্থনহীন। তাদের প্রার্থীদের ভোট দিলে জনগণ নিরাপত্তা পাবে না। পহেলা বৈশাখে সরকারের গুণ্ডাবাহিনী নারীদের ওপর নির্যাতন করেছে। এই সরকারের জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।”

44255_00000ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরবাসীকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা সকাল-সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ঢাকার মির্জা আব্বাস, তাবিথ আওয়াল ও চট্টগ্রামে মনজুর আলমের নির্বাচনী প্রতীকে ভোট দিবেন। ‘‘ এদের (আওয়ামী লীগ) আর ভোট দেবে না। মির্জা আব্বাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাকে আটকে রাখা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় মির্জা আব্বাস বের হতে পারছে। এ সরকার জুলুম-নির্যাতন করে তার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চায়।’ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্যও তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া নতুন বাজার, প্রগতির সরনী, যুমনা ফিউচার সড়ক, বাড্ডা সড়ক, গুলশান লিংক সড়ক, গুলশান এক ও দুই নম্বর সড়ক, বনানী এলাকায় প্রচারনা চালান। তার গাড়ির সামনে কয়েক‘শ ছাত্র দলের নেতা-কর্মী কর্ডন করে ধীর গতিতে চলে গাড়ির বহর। বহর থেকে হ্যান্ড মাইকে বলা হয়- মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও মির্জা আব্বাসকে ভোট দিন, খালেদা জিয়ার সালাম নিন। এ সময়ে নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুই ধারে লিফলেট বিতরণ করে।

বেগম জিয়াও মাঝে মধ্যে রাস্তার পাশের লোকজনকে ঢেকে গাড়িতে বসা অবস্থায় লিফলেট দেন। এসব সড়কে দুই পাশের পোষাক কারখানার ভবনগুলোকে নারী শ্রমিকরা হাত তুলে খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানাতে দেখা যায়। গত ১৮ এপ্রিল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় মির্জা আব্বাস ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচারনা চালান। ওই প্রচারনার প্রথম দিনের পরদিন থেকেই ক্ষমতাসীন দলের সংগঠন যুবদল, ছাত্রলীগের কর্মীরা কালো পতাকা প্রর্দশন করে খালেদা জিয়ার গাড়িসহ তার বহরে হামলা চালায়। এতে বেগম জিয়ার নিশাল প্রেট্রোল গাড়িসহ তার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ৮টি গাড়ির গ্লাস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হামলায় খালেদা জিয়ার নিশান প্রেট্রোল গাড়িসহ তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর মাইক্রোবাসগুলো মেরামতের জন্য একদিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার প্রচারণা নামলেন বেগম জিয়া।