দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ এপ্রিল: সিটি করপোরেশন পরিচালনার জন্য নগর সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা জানানো হয়।সিটি নির্বাচন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে প্রচলিত সরকার ব্যবস্থার বিপরীতে নগরের জন্য আলাদা নগর সরকার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।নগর সরকারই সমাধান’এ প্রতিপাদ্যে আলোকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।তিনি বলেন, এর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই। তবে সিটি নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এমন দাবির বিরোধিতাও করেছেন কেউ কেউ। ঢাকা মহানগরের সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে নগর সরকার ব্যবস্থার বিকল্প কিছু হতে পারে না।
পরে আলোচনায় নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ রাখতে হবে। তবে এটি এ মুহূর্তে নয়। যেহেতু সিটি নির্বাচন সন্নিকটে, সেহেতু এ মুহূর্তে এমন ধারণা বিভ্রান্তির জন্ম দিতে পারে।এ সময় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, মেয়র চাইলেও দলীয় সরকারগুলো নগর সরকার হতে দেয় না।নির্বাচনে নগর সরকার সম্পর্কে প্রার্থীদের সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।শুরুতেই সংগঠনের সদস্য মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মূল প্রবন্ধে লিখিত বক্তব্যে নগর সরকারের ধরন সম্পর্কে তিনি বলেন, কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা যেমনিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে, তেমনি মেয়রের নেতৃত্বে একটি নগর নির্বাহী পরিষদ নগররের শাসন পরিচালনা করবে। নগর সরকার হবে একটি পৃথক প্রশাসনিক কাঠামো। নগর সংসদ, নগর প্রশাসন ও নগর আদালত মিলে নগর সরকার গঠিত হবে। মেয়র হবেন এই সরকারের প্রধান। কাউন্সিলররা নগর সংসদের সদস্য হবেন।
তিনি বলেন, নগর কাউন্সিলের সদস্যরা নগর পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে নগরের জন্য নীতি প্রণয়ন করবেন এবং নগর সংসদে নগরের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। একইসঙ্গে নগর নির্বাহী পরিষদকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখবে নগর সংসদ। মেয়রের নির্বাচনী এলাকায় কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন না। নগরীর সব সেবাদনকারী প্রতিষ্ঠান নগর পুলিশের (মেট্রোপলিটন পুলিশ) মাধ্যমে নগরীর শান্তি-শুঙ্খলা রক্ষা করবেন।সুজনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বর্তমান সিটি করপোরেশনগুলোতে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তা ত্রুটিপূর্ণ। এখন মেয়র নির্বাচিত হন ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে। বৃহত্তর ঢাকা শহরেই ৮ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর দুজন মেয়রকে নির্বাচিত হতে হয় ৮ জন সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকায়। মেয়র প্রার্থীর পক্ষে এটা খুবই ব্যয়বহুল, পরিশ্রম ও শ্রমসাপেক্ষ কাজ। মেয়র তার কাজে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে না পারলে বা ব্যাপকভাবে দুর্নীতি করলেও তাকে পদ থেকে সরানোর কোনো সুযোগ নেই।
কারণ তিনি ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। অন্য কোনো আইনেও অযোগ্য মেয়রকে সরানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নির্বাচিত মেয়রের কাছে জনগণ ৫ বছরের জন্য জিম্মি হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে সুজন থেকে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচিত হচ্ছে সংসদীয় পদ্ধতিতে, কিন্তু একই দেশের সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হচ্ছে ‘রাষ্ট্রপতি পদ্ধতিতে’। এটা ঠিক নয়। এক দেশে দুই পদ্ধতির নির্বাচন হতে পারে না। এক্ষেত্রে দলীয় ভিত্তিতেই এই নির্বাচন হতে পারে। কারণ বাংলাদেশে দলের বাইরে কোনো বড় নির্বাচন হয় না। যেসব নির্বাচনে দলের কথা বলা হয় না সেসব নির্বাচনেও পরোক্ষভাবে দল ভূমিকা পালন করে। বৈঠকে স্থপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মোবাশ্বর হোসেন বলেন, ‘এমপিরা ইচ্ছা করলে প্রতিমাসে প্রধানমন্ত্রীকে পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু একজন মেয়রকে সরাতে হলে হয় তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে না হয় পাগল বলে ঘোষণা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘এখন ঢাকার উন্নয়ন করে কোনো লাভ হবে না। এক্ষেত্রে ঢাকাকে গ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। কারণ এখন মানুষ দুরত্ব মাইল বা কিলোমিটার দিয়ে মাপে না। সেখানে যেতে কত সময় লাগে সেটা দিয়ে মাপে।’পরিকল্পনাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বজলুর রহমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ঢাকার প্রশাসক চান ভালো কথা। কিন্তু আগে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটটা হতে দিন। কায়দা কানুন করে এটাকে বিতর্কিত করবেন না। প্রচারণায় কাওকে বাধাগ্রস্থ করে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করবেন না।গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুজনের নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বোরহান উদ্দিন সিদ্দিকী, ইকবাল হাবিব, মেয়র প্রার্থী বজলুর রশীদ ফিরোজ, অধ্যাপক মো. জামান ভূঁইয়া, ড. ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম, বাহারানে সুলতান বাহার, মো. জামান ভূঁইয়া প্রমুখ।