দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ এপ্রিল: অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এবার আমরা বেশি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্য নিয়োগ দিয়েছি এ কারণে সেনাবাহিনীর টহল আপাতত প্রয়োজন হবে না, বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ।বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদেও প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, আমি আগেও বলেছি, আজও বলেছি আমাদের আনসারসহ যেসব আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োগ দেয়া হয়েছে সবাই টহল অবস্থায় আছে। এছাড়া সেনাবাহিনীকে রিজার্ভ হিসেবে রেখেছি। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এবার প্রয়োজনের চেয়ে আমরা অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ দিয়েছি, সে কারণে সেনাবাহিনীর আলাদাভাবে টহল দেয়ার আপাতত প্রয়োজন দেখছি না। যখনই দরকার হবে তাৎক্ষনিক মোতায়েন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচন। এই মুহূর্তে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর যে যেখানে থাকা উচিত,সেখানেই অবস্থান করছে। যাতে করে সবাই সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যাদের দরকার তাদের সবাইকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে । এ কারণে আমরা তাদের চিঠি-পত্র দিয়েছি। আপনাদের একটা বিষয়ে ধারণা ক্লিয়ার করার জন্য বা ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আজকে কথা বলছি। সেনাবাহিনী কোথায় থাকবে সে বিষয়ে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। যেহেতু আমাদের সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে তার সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট রয়েছে। এ কারণে তাদের ক্যান্টনমেন্টেই অবস্থান করার জন্য বলেছি। সেনাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত থাকবে। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষনিক ম্যাজিস্ট্রেট অবস্থান করবেন। রিটার্নিং অফিসারের যখনই দরকার হবে তখনই তারা কাজে লেগে যাবেন। অর্থাৎ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রিটার্নিং অফিসারের চাহিদামত দায়িত্ব পালন করবে। কাজেই সেনাবাহিনী সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করবে।তিনি বলেন, ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী কাজ করলে যারা ভোট দিবেন বা ভোট চাইবেন তাদের কোন সমস্যা হবে না। আমাদের দেশের আরও কয়েকবার নির্বাচন হয়েছে। ভোটার ও প্রার্থীদের এত বেশি এ্যারোগেন্ট নয় যে, পাহাড়া না দিলে সমস্যা হবে।তারপরও আমরা ব্যবস্থা রেখেছি। সবার স্বস্তিবোধের কারণে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি।
চট্টগ্রামেও একইভাবে সেনাবাহিনী থাকবে। সীমান্তের কাছে চট্টগ্রামের সেনানিবাস রয়েছে। কাজেই ওখানেও কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়নের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এ প্রেক্ষিতে ইসি থেকে মঙ্গলবার (২১ এপিল) সশস্ত্র বিভাগকে সেনাবাহিনী ৩ ব্যাটালিয়ন সেনাসদস্য চেয়ে একটি চিঠি প্রদান করে। এরপরেই বুধবার (২২এপ্রিল) মঙ্গলবারের চিঠির ভাষা পরিবর্তন করে সেনাবাহিনী সেনানিবাসে থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে সশস্ত্র বিভাগকে আরেকটি চিঠি প্রদান করে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হলে ইসির পক্ষ থেকে এ বিফ্রিং করা হয়।সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এনে সশস্ত্র বিভাগকে সংশোধিত চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সেনানিবাসের (ক্যান্টনমেন্ট) অভ্যন্তরে অবস্থান করবে। কেবল রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন তারা। বুধবার বিকালে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এটি মঙ্গলবার পাঠানো চিঠির স্থলাভিষিক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।এর আগে মঙ্গলবার পাঠানো প্রথম চিঠিতে বলা হয়েছিল, প্রতিটি সিটিতে এক ব্যাটালিয়ন করে মোট তিন ব্যাটালিয়ন সেনা সদস্য চারদিনের জন্য স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় ইসির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের মানসিক স্বস্তির জন্য সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। সংশোধিত চিঠি পাঠানোর বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে সেনাবাহিনী। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বুধবার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সেনা সদস্যরা সেনানিবাসের ভেতরেই থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা অনুরোধ করলে তারা বাইরে আসবেন। বিএনপির ক্রমাগত দাবির মুখে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতে ভোটের জন্য তিন ব্যাটালিয়ন সৈন্য চেয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল ইসি। কিন্তু বুধবার হঠাৎ ইসি থেকে আরেকটি চিঠি যায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে। চিঠিতে দেখা যায়, মঙ্গলবারের তারিখেই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। দুটি চিঠির ভাষা প্রায় একই রকম। শুধু একটি স্থানে পরিবর্তন এসেছে। মঙ্গলবার পাঠানো চিঠিতে বক্তব্য ছিল- তারা মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকলেই তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন। নতুন চিঠিতে এ বাক্যটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে এভাবে- তারা ( সেনাবাহিনী) মূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন। চিঠির ভাষা পরিবর্তনের বিষয়ে সিইসিসহ কোনো কমিশনারই সাংবাদিকদের কাছে কিছু বলতে রাজি হননি।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েনের জন্য মতামত দিয়েছিলেন।
এদিকে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ থেকে ২৪ জন সদস্য অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় প্রস্তুত থাকবেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।বৃহস্পতিবার (সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে খসড়া সিদ্ধান্তটি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত করে পরিপত্র জারি করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (রাজনৈতিক শাখা) হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এবং ভোটের আগে বা পরে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ভোট গ্রহণের তিনদিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে আগামী ০১ মে পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু ভোট কেন্দ্রে নয়, পুরো নির্বাচনী এলাকায় আরোপ করা হয়েছে বৈধ সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাফেরা ও প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা। বৃহস্পতিবার বিকেলে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।