দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ এপ্রিল: মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছে।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল বুধবার এ আদেশ দেয়। বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই রাজাকার মাহিদুর ও চুটুর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাদের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। এর আগে গত ১৫ ও ২০ এপ্রিল মাহিদুর ও চুটুর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। এটি ট্রাইব্যুনালে ১৯ তম মামলা যা বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার পর্যায়ে পৌঁছল।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাকার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যে কোন দিন রায় ঘোষণার (সিএভি) জন্য রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ আদেশ দেয়। এটি হলো ট্রাইব্যুনালে ১৮ তম মামলা যা বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার পর্যায়ে পৌঁছল। এর আগে পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনালে আরো ১৭ মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনাল-১এ ৮টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৯টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। পৃথক দুই ট্রাইব্যুনালে এখন আরো দুই মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হলো।গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) জেডএম আলতাফুর রহমানসহ প্রসিকিউশনের মোট ১০ জন সাক্ষী। তবে মাহিদুর ও আফসারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।
এর আগে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে গত বছর ১ ডিসেম্বর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গত ২৪ নভেম্বর আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে গত ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান এ অভিযোগ দাখিল করেন। ওইদিন তাদেরকে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় আটক দেখানোর জন্য (শ্যোন অ্যারেষ্ট) প্রসিকিউশন আবেদন করেছিল। ২৪ নভেম্বর এ আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল।
তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ছয়টা থেকে পরদিন ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত মাহিদুর ও চুটুর সহযোগিতায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর থানার চাঁদশিকারী, চামাটোলা, বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদশিকারী গ্রাম থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে ফিরোজের আম বাগান এবং কবিরাজটোলায় যৌথ আক্রমণ চালায়। তারা এসব গ্রামের ৩৯ জনকে আটক করে। কাউকে কাউকে অপহরণ করে। এক পর্যায়ে নির্যাতনের পর ৩৯ জনের মধ্য থেকে ২৪ জনকে হত্যা করে।দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর দুপর একটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ আসামিদের সহযোগিতায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর থানার এরাদত বিশ্বাসের টোলা এবং কবিরাজটোলা গ্রামে যৌথ আক্রমণ চালায়। এদিন তারা এ দুই গ্রামের ৭০টি বাড়িতে লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর দুপর দুইটা থেকে পরদিন ৩ নভেম্বর রাত পর্যন্ত এ আসামিদের সহযোগিতায় রাজাকার বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার শেরপুর ভান্ডার (লক্ষীপুর), আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ, শিবগঞ্জ সিও ডেভ অফিস এবং উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ইয়াকুব বিশ্বাসের আমবাগান এলাকার চার জনকে অপহরণ করে আটকের পর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।এ দুই আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।