দৈনিকবার্তা-ভোলা, ২২ এপ্রিল: ভোলার চরফ্যাশনের চর কুকরি মুকরিতে কয়েক হাজার হেক্টর এলাকা নিয়ে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে মানবসৃষ্ট সুন্দরবন। কেবল প্রাকৃতিকভাবে নয়, বরং প্রকৃতি এবং মানুষের যৌথ অবদানে বিকশিত হচ্ছে এ সুন্দরবন। আগামী ১৫ বছর পর দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে সরকারী অর্থায়নে কুকরি বন গবেষণা বিভাগ এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই বনে কেওড়া, বাইন, গেওয়া, খলসী ও পশুরসহ বিভিন্ন চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ লক্ষে দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষিত করতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসিক হোটেল। ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ইতিপুর্বে বেড়ীবাধের কাজ সম্পন্ন করে নিরাপত্তার বিয়ষটি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রস্তাবনা রয়েছে বিছিন্ন ইউনিয়ন কুকরী মুকরীর সাথে কেবল কার স্থাপণ করা । যার ফলে নৌ পথের দুরত্ব কমে যাবে এবং দেশের প্রথম কেবল কার এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। কুকরী মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আবুল হাসেম মহাজন জানান, প্রায় ৫ শত বছর আগে এ চরটিতে বসতি শুরু হয়। বর্তমানে ১৪ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত ৮৫ বর্গ মাইল এলাকায় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে গাছ রোপন কওে সেই বাগানই এখন দৃষ্টিনন্দন দেশের ২য় সুন্দর বনের সৃষ্টি হয়েছে। কুকরী মুকরীর রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজেদুল আলম জানান, বাগানে ২০/২৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ রয়েছে। আরো আছে বন মোরগ, শৃগাল, সাপ, লাখো লাখো মৌচাক। মাঝে মাঝে চিতা বাঘের দেখাও মিলে।
জানা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা আর সাগর মোহনায় নতুন চরভূমিকে স্থায়ী করতে ১৯৭২ সালে চরফ্যাশনের চরকুকরি-মুকরিসহ জেলার দক্ষিণের উপকূলে তৈরি করা হয় ম্যানগ্রোভ। এরপর ১৯৯০ সালে প্রকল্প হাতে নেয় বন গবেষণা বিভাগ। এ প্রকল্পের আওতায় আন্ডার প¬ান্টিং প্রক্রিয়ায় বর্তমানে পরীক্ষামূলক ভাবে সুন্দরবন থেকে কেওড়া, বাইন, গেওয়া, খলসী ও পশুরসহ বিভিন্ন বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সেই চারা চর দিগল, নার্সারির খাল, চর শফি, চর জমির, চর ইসলাম, দিগল, পশ্চিম দিগল ও জাইল্যার খালের ১৬ হাজার একর বাগানে রোপণ করা হয়েছে। যার ৭০ ভাগ গাছই লম্বা হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত। বন প্রহরীরা জানান, যে চারা সুন্দরবন থেকে আনা হতো এখন বন বিভাগের বাগান থেকে সেই চারা পাওয়া যাচ্ছে। আর বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে সিডবেডে বীজের অঙ্কুরোদ্গমসহ বাগানের পরিচর্যায় কাজ করছেন নারী কর্মী। বন বিভাগের চর কুকরি মুকরির রেঞ্জার সাজেদুল আলম বলেন, বর্তমানে কুকরি মুকরিতে ১০ হাজার একর সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বাগান রয়েছে। কুকরির বন গবেষণা কেন্দ্রেও স্টেসন কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপকূলের ম্যানগ্রোভ বাগানের কেওড়া প্রজাতির বৃক্ষ মরে যাবে। যার শূন্যস্থান দখল করবে সুন্দরবন প্রজাতির বৃক্ষ। ১৬ হাজার একর বাগানে সুন্দরবন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। সুন্দরবন প্রজাতির বৃক্ষের বিকাশের চলমান ধারা অব্যহত রাখতে পারলে আগামী ১৫ বছর পর কুকরী হবে মানব সৃষ্ট প্রথম সুন্দরবন আর দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন ।