download

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ এপ্রিল: ডাকাতির উদ্দেশ্যে নয় দেশে নাশকতা সৃষ্টি করতেই আশুলিয়ার কাঠগড়ায় ব্যাংক ডাকাতি ও ৭ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা রেঞ্চের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান।বুধবার সাভার থানা কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, এ ঘটনায় যেসমস্ত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা কেবলমাত্র সামরিক বাহিনীর কয়েকটি ইউনিটে সীমিত আকারে ব্যবহার করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা শিবিরের সঙ্গে জড়িত।এর আগে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়ায় ডাকাতি ও ৭ খুনের ঘটনায় আটক ডাকাত সাইফুলসহ অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করে আলাদা আলাদা মামলা করেছে পুলিশ ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে দুর্ধষ ডাকাতি ও আট খুনের ঘটনা নিছক ডাকাতির উদ্দেশ্যেই নয়,নাশকতা ও জনমনে ভয় ভীতি সঞ্চারের জন্য ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।এ ঘটনা দেশের অপরাধমাত্রায় নতুন সংযোজন ও ঘটনার সাথে জঙ্গি ছাড়াও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও দাবি পুলিশের।দুপুরে সাভার মডেল থানায় আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতি মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে আয়োজিত পুলিশের বিশেষ বিফ্রিংয়ে এ কথা বলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান।

তিনি বলেন, কমার্স ব্যাংকে যে ঘটনা ঘটেছে তা মারাত্মক ধরনের অপরাধ। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এভাবে ইতোপূর্বে ঘটেনি।ছিনতাই-লুটপাট-ডাকাতি অনেক হয় তবে এভাবে মানুষ হত্যা করার নজির নেই।টাকার লোভেই যে এ ঘটনা ঘটেছে তা মনে করছি না আমরা’ যোগ করেন পুলিশর এই কর্মকর্তা।ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন,ডাকাতরা ইচ্ছে করলে ভল্ট খুলে কোটি কোটি টাকা নিতে পারতো।কিন্তু সেদিকে তারা যায়নি। আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদের কথামতো সবাই মেঝেতে শুয়েছে তা সত্ত্বেও ডাকাতরা নির্বিচারে গুলি ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে ব্যাংকের ম্যানেজারসহ অন্যদের।আসলে তাদের মূল উদ্দেশ ছিলো হত্যা করা,নাশকতা সৃষ্টি করা।তারা যে ধরনের অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে তা বাংলাদেশে আগে ব্যবহার হয়নি।সে দিকে এটি একটি নতুন ডাইমেনশন।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আরও বলেন,আমরা র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর খালিদের সাথে কথা বলেছি।তিনি আমাদের জানিয়েছেন,বিদেশ থেকে বিস্ফোরক উপাদান এনে ইম্প্রোভাইজ ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে।যে বোমা তারা ছুঁড়েছে তা অত্যাধুনিক।এগুলো কিন্তু বাইরে থেকে কেনা সম্ভব না।লুট করা ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১’শ ৯৩ টাকার মধ্যে আমরা ৬ লাখ ৭ হাজার ২’শ ৫৫ টাকা উদ্ধার করেছি।তিনি আরও বলেন, এখানে উল্লেখ করার বিষয়টি হলো স্থানীয় জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে এবং ডাকাতদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে।তিনজনকে তারা ধরেছে। একজনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরেছে।জনগণের এই প্রতিরোধ ভালো লক্ষণ।কারণ জনগণ এই ধরনের নাশকতা কখনও গ্রহণ করেনি এবং করবেও না।

ডিআইজি নুরুজ্জামান আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছি।তার নাম বোরহান মৃধা। সে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বাসিন্দা। বোরহান শিবিরের কর্মী।তারেেগাটা পরিবারই শিবিরের সাথে সংযুক্ত। তদন্ত চলছে। ব্যবহৃত পাঞ্জাবিতে রক্ত লাগার পর সে বেশ পরিবর্তনের চেষ্টা করে।তার কাছ থেকে আমরা বেশকিছু শিবিরের জিহাদী বই পেয়েছি ।আটক অপরজনের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বলে উল্লেখ করেন তিনি। যেহেতু সূত্র পাওয়া গেছে সঠিক তদন্তে আর অসুবিধা হবে না। ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে এলে তারা কিন্তু মানুষ মারতো না।

যারা বাংলাদেশের পতাকা, মানচিত্র মানে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ কিংবা জিহাদ ঘোষণা করেছে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে যোগ করেন পুলিশের এই বিভাগীয় কর্মকর্তা। প্রেস বিফ্রিংয়ে উদ্ধার হওয়া লুণ্ঠিত টাকা,বেশকিছু জিহাদী বই ও ডাকাতির ঘটনার ব্যবহৃত একটি ছোরা প্রদর্শন করা হয়।এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম,সাভার মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, আশুলিয়া থানার সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, ওসি মোস্তফা কামাল, সাভার মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান।এদিকে, আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত দলের সদস্য সাইফুলের নাম উল্লেখ্য করে ১২জনের নামে থানায় মামলা করেছে পুলিশ।বুধবার সকালে আশুলিয়া থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।এদিকে ডাকাতের হামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা-নিরাপত্তা প্রহরীসহ স্থানীয় ৮জনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।অন্যদিকে এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ডাকাত আতঙ্ক।

সকাল থেকেই কাঠগড়া বাজার এলাকায় ব্যাংকটির সামনে ভিড় করছে শত শত মানুষ। ডাকাতের হামলায় নিহতের প্রতিবাদে পুরো বাজার এলাকায় কালো পতাকা লাগিয়ে শোক পালন করছে স্থানীয়রা। এছাড়াও কাঠগড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও শোক পালন করা হচ্ছে। প্রতিবাদে সকাল থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও ডাকাত দলের এলোপাথারী গুলি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহতদের জানাজা আদায়ের জন্য স্থানীয় স্কুল মাঠে নামাজের আয়োজন করা হয়েছে।আব্দুস সাত্তার মোল্লা, মানিকসহ একাধিক এলাকাবাসী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তাদের কাঠগড়া এলাকায় প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ডাকাতির পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও মামলা দিতে গেলে চুরির মামলা দায়ের করে। পুলিশের নিরাপত্তা অবহেলার কারণে ব্যাংকে ভেতরে দিন-দুপুরে ডাকাতি করেছে দুর্বৃত্তরা।এ ছাড়াও এতোগুলো মানুষের প্রাণহানীর ঘটনায় তাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ডাকাতির ঘটনায় ১২জনের নামে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য মঙ্গলবার রাতে থেকেই বিভিন্ন এলাকায় অভিযানন অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।