দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ২২ এপ্রিল: গ্রিন মেগাসিটি ও ডিজিটাল চট্টগ্রাম গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন নাগরিক কমিটি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। ইশতেহারে ৩৬ দফা উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা তুলে ধরেছেন নাছির। সমগ্র নগরীতে ওয়াইফাই জোন করার প্রতিশ্র“তি এসেছে তার ইশতেহারে।বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির এ ইশতেহার দেন। স্বপ্নের মেগাসিটি গড়তে চাই, জলাবদ্ধতামুক্ত জনবান্ধব চট্টগ্রাম শিরোনামে এ নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরা হয়।ইশতেহার ঘোষণার জন্য নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন নাছির। অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপরই নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ করেন নাছির।
পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে মেগাসিটি বানানোর কথা বলেছেন আ জ ম নাছির। ইশতেহারে তিনি বলেন, ‘স্রেফ কোন ফ্রেমবন্দি দফায় সীমাবদ্ধ না থেকে বন্দরনগরীকে মেগাসিটির নাগরিক সুবিধায় উন্নীত করতে যা দরকার সবকিছুই করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।নাছিরের প্রত্যাশা, চট্টগ্রাম হতে পারে একটি আইডল গ্রিন মেগাসিটি’। এজন্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের কথা বলেছেন তিনি।মেগাসিটি করতে একটি শহরে কি পরিমাণ জনসংখ্যা লাগে এবং সেটা চট্টগ্রামে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতিসংঘের হিসেবে চট্টগ্রামে এক কোটি জনসংখ্যা প্রয়োজন। চট্টগ্রামে এখন সেটা নেই। তবে টানেল হচ্ছে। টানেল হলে শহর সম্প্রসারণ হয়ে যাবে।ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসনে ছয় দফা কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন আ জ ম নাছির। এর মধ্যে আছে, খাল ও নালাগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া এবং খালের গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে তদারকি বোর্ড গঠন, নতুন খাল খনন, কর্ণফুলীর মুখে স্লুইস গেইট নির্মাণ, কর্ণফুলীর মাঝে জেগে ওঠা চর খনন করা ও ১৯৯৫ সালে সিডিএ প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান যুগোপযোগী করে বাস্তবায়ন।
মেয়র নির্বাচিত হলে ‘কর্ণফুলী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও কর্মসূচি চালু করারও ঘোষণা দিয়েছেন নাছির। কর্ণফুলী নদীকে নিয়মিত মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং এবং ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে রক্ষার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।পাশাপাশি দখল ও দূষণের হাত থেকে উদ্ধারের কথা বলেছেন নাছির।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা নদী, খাল দখল করে আছে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। এক্ষেত্রে একচুল পরিমাণও ছাড় দেয়া হবেনা।মেয়র নির্বাচিত হলে আ জ ম নাছির নগরীর গণপরিবহনে ভাড়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ভর্তুকি দেবেন বলে জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ ছাড় পাবেন।এছাড়া নারীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালুর ঘোষনাও দিয়েছেন তিনি।
নাছির বলেন, আমাদের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নারীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করেছিলেন। মনজুর সাহেব মেয়র হয়ে সেটা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি মেয়র হলে সেটা নিবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখব।পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নগরবাসীকে দু:সহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে সেন্ট্রাল স্যুয়ারেজ পাইপলাইন স্থাপন ও বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন, ওয়ার্ডভিত্তিক জোন ভাগ করে আধুনিক ঢাকনাসহ ডাস্টবিন স্থাপন, নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলা ও তা নিশ্চিত করা এবং আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার অঙ্গীর করেছেন নাছির।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শ্লোগান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেই আদলে নাছির এনেছেন ‘ডিজিটাল চট্টগ্রাম শ্লোগান।নাছির জানিয়েছেন, ডিজিটাল চট্টগ্রাম গড়তে নগর ভবনে ওয়ানস্টপ সুবিধা নিশ্চিতকরণ, করপোরেশনকে ই-গর্ভনেন্স স্কিমের আওতায় আনা, কর ও বিল প্রদানে স্মার্ট কার্ড স্কিম বাস্তবায়ন, সম্পূর্ণ নগরীকে ওয়াইফাই জোনের আওতায় নেয়া হবেশ্র্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের আবাসন সংকট নিরসনে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এসব ভবনের ফ্ল্যাট সহজ শর্তে ও স্বল্পমূল্যে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নাছির।কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ হোস্টেল নির্মাণের প্রতিশ্র“তিও এসেছে তার ইশতেহারে।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন আ জ ম নাছির।
সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে স্থাপিত বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওষুধ কারখানা চালু করবেন আ জ ম নাছির। সিটি করপোরেশনের ভূমিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হবে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কলকারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানালেন নাছির।এছাড়া ইশতেহারে পাহাড় রক্ষা, বনায়ন, শিক্ষা –সাহিত্য উন্নয়ন, বিনোদন, ক্রীড়ার উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন নাছির।তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরকে নান্দনিক, জনবাধন্ব, যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতামুক্ত ও দূষণমুক্ত নগরী গড়তে টেকসই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।নির্বাচিত হলে দলমতের উর্ধে উঠে কার্যক্রম পরিচালনা করারও ঘোষণা দিয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন।ভূমিকা বক্তব্যে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি কয়েকবার নির্বাচন করেছি। কয়েকবারের অভিজ্ঞতা আমার আছে। ইশতেহার আমার লিখিত হলে আরও ভাল হত। আমার সহযোগিতা নিলে আরও ভাল হত। তারপরও ভুলত্রুটি থাকলে আপনারা সংশোধন করে নেবেন।
আ জ ম নাছিরের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন, সাবেক সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি, সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, নিজামউদ্দিন হাজারী, নাট্যভিনেতা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ নাগরিক কমিটি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।