দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ এপ্রিল: স্বরাষ্ট্র প্রতমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার উপর হামলার ঘটনাটির জন্য তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবাহিনীই দায়ী। সিএসএফ’র অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণেই জনতা উত্তেজিত হয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে।মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।আসাদুজ্জামান বলেন, খালেদা জিয়া পুলিশকে না জানিয়ে হুটহাট করে যেকোনো স্থানে প্রচারণায় যাচ্ছেন। এ কারণে পুলিশের পক্ষেও জানা সম্ভব হচ্ছে তিনি কোথায় যাচ্ছেন। এছাড়া গত তিনমাস ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক সংহিসংতার কারণে জনতা তাদের উপর ক্ষেপে রয়েছে। এজন্য বিএনপি নেত্রী যেখানেই প্রচারণায় যাচ্ছেন সেখানেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। জনতা কালো পতাকা প্রদর্শন করছে।তিনি বলেন, সোমবার তিনি কাওরান বাজারের যেখানে গিয়েছিলেন সেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং জনগণ গত তিনমাসের রাজনৈতিক সংহিসতার শিকার হয়েছেন। তাদের মনে ক্ষোভ রয়েছে। আর এজন্যই খালেদা জিয়ার প্রচারণাকালে কালো পতাকা প্রদর্শন করে জনতা। এ সময় সিএসএফ’র কয়েকজন সদস্য স্থানীয় একজনকে মারধোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। এরপর জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে এমনও অভিযোগ এসেছে যে, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ জনতাকে চাপা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি নিজেও হাসপাতালে আহত কয়েকজনকে দেখতে গিয়েছি। অনেকের পায়ের আঙ্গুল থেতলে গেছে।হামলাকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মী রয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থাকতেই পারে। একশজন জনতার মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন রাজনীতি করতেই পারে।তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আরো একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। আমরা ঘটনা খতিয়ে দেখছি। কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এদিকে, মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে-ঘটনাটি শতভাগ সত্যি নয়। ৯২ দিন অবরোধ-হরতালে ওই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির ছিল। খালেদার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরা ক্ষুব্ধ জনতার ওপর চড়াও হওয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।তাই খালেদা জিয়া ওই এলাকায় গেলে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের তাড়া করে। এ সময় তার নিরাপত্তা কর্মীরা জনতার ওপর চড়াও হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটে।
তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।সরকারবিরোধী আন্দোলন শিথিল করে সিটি নির্বাচনে এসে প্রচারে নামা খালেদা জিয়া সোমবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হামলার মুখে পড়েন।লাঠিসোঁটা ও ইটের আঘাতে খালেদার গাড়ির কাচ ফাটলেও তিনি অক্ষত রয়েছেন। তবে আহত হয়েছেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী সিএসএফের সদস্যরা।এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা।
তবে ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সকালে বিএনপি নেতারা থানায় গেলে তাদের লিখিত অভিযোগ জমা নেওয়া হলেও মামলা হিসেবে তা এখনো নথিভুক্ত হয়নি।তাদের অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে কি না সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত হবে বলে থানার এক উপপরিদর্শক জানিয়েছেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের অধিকার আছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার। কারা মামলা নেয়নি সে বিষয়টি আমি দেখছি।সকালে সদরঘাটে সুন্দরবন-১১ লঞ্চ উদ্বোধন করে লঞ্চের ডেকেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।এদিকে পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ থেকে এখনো কাউকে সরাসরি শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।এর আগে ছাত্র ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল পহেলা বৈশাখের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দায়িত্বে অবহেলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করে।এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাদের কথা শুনেছি। তাদেরকে জানিয়েছি আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনো পুলিশ সদস্যের যদি দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।