দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ এপ্রিল: সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিলের অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থাটি বলেছে, রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২৭ কোটি টাকা হলেও এখনো অব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা।মঙ্গলবার তেরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গৃহীত পদক্ষেপের ওপর এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে টিআইবি এ কথা বলেছে। মঙ্গলবার সকালে ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ: গত এক বছরের অগ্রগতি পর্যালোচনা শীষর্ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) নাজমুল হুদা মিনা। উপস্থিত ছিলেন- উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একশ সাতাশ কোটি টাকা সংগৃহীত হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয় হয়েছে মাত্র উনিশ কোটি টাকা। প্রকৃত অর্থে একশ সাতাশ কোটি টাকাই ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাপ্য। তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান অভিযোগ করেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি পেলেও তা জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি সময়মত তাদের প্রাপ্য মজুরিও শ্রমিকরা পান না। দুর্ঘটনা পরবর্তী বিভিন্ন আইন করা হলেও আইনের অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি আরো বলছে, রানাপ্লাজা ট্রাজেডি-উত্তর পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকার ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের বহুমুখী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে গত এক বছরে ৬০ শতাংশ অগ্রগতি হলেও শ্রমিক অধিকার, চাকরিকালীন নিরাপত্তা ও বিবিধ সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন কারণে অনেক প্রকল্প প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি।২০১৪-১৫ সালের নতুন একটিসহ ৫৫টি সূচকে চলমান ৮০টি উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে টিআইবি বলেছে, গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়ন সম্পন্ন এবং ৪৮টির বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও এর মধ্যে ১২টি উদ্যোগের বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং অন্য ২০টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়ায় পোশাক খাতে অর্জিত সুশাসনের অগ্রগতি ধরে রাখা এখন বিবিধ চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে।
২০১৪-১৫ সালের নতুন একটিসহ ৫৫টি সূচকে চলমান ৮০টি উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে টিআইবি বলেছে, গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়ন সম্পন্ন এবং ৪৮টির বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও এর মধ্যে ১২টি উদ্যোগের বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং অন্য ২০টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়ায় পোশাক খাতে অর্জিত সুশাসনের অগ্রগতি ধরে রাখা এখন বিবিধ চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ১২৭ কোটি টাকা (প্রায় ১৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার) জমা হয়েছে। যেখানে অব্যবহৃত রয়েছে ১০৮ কোটি টাকা (প্রায় ১৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার)।রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়ে টিআইবির প্রতিবেদনের পর্য্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশিত নেই, পরিমাণ নির্ধারণে ও বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, বণ্টনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা এবং ট্রাস্ট ফান্ড পরিচালনা ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশিত হয়নি।এছাড়া আরও বলা হয়েছে, রানা প্লাজার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ১৪টি রিটেইলার ব্র্যান্ড (লি কুপার, জেসি পেনি, মাটালান, কারিফোপর) ট্রাস্ট ফান্ডে সহায়তা দেয়নি। এমনকি ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান যাদের বার্ষিক রেভিনিউ ৪৮৫ বিলিয়ন ডলার, তারা মাত্র ১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।এ বিষযে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, রানা প্লাজায় এত মানুষ প্রাণ দেওয়ার পরেও এ বিষয়ে যথেস্ট অবহেলা পরিলক্ষিত হয়েছে। এখানে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্যই ১২৭ কোটি টাকা (প্রায় ১৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার) জমা হয়েছে। যেখানে অব্যবহৃত থেকে যায় ১০৮ কোটি টাকা (প্রায় ১৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার)।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওই তহবিলের অর্থ ছিল শুধু রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য। কিন্তু সেখানে আর কোনো টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়নি।বায়ার ও আর্ন্তজাতিক সংগঠনের সাহায্যের বিষয়ে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ক্ষতিপূরণে আর্ন্তজাতিক সংগঠনগুলোর প্রতিশ্র“ত তহবিলের পরিমাণ ছিল ৪০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল রানা প্লাজা ডোনার’স ট্রাস্ট ফান্ডে জমা পড়া তহবিলের পরিমাণ প্রায় ১৯ মিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রানাপ্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি পেলেও তা জীবনযাত্রার মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি সময়মত তাদের প্রাপ্য মজুরিও শ্রমিকরা পান না।তিনি আরও বলেন, এসকল দুর্ঘটনা পরবর্তী বিভিন্ন আইন করা হলেও আইনের অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনেরও দাবি জানান ইফতেখারুজ্জামান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রানাপ্লাজা ট্রাজেডি-উত্তর পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকার ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের বহুমুখী উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নে গত এক বছরে ৬০ শতাংশ অগ্রগতি হলেও শ্রমিক অধিকার, চাকরিকালীন নিরাপত্তা ও বিবিধ সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন কারণে অনেক প্রকল্প প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি।
২০১৪-১৫ সালের নতুন একটিসহ ৫৫টি সূচকে চলমান ৮০টি উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে টিআইবি বলেছে, গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়ন সম্পন্ন এবং ৪৮টির বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও এর মধ্যে ১২টি উদ্যোগের বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং অন্য ২০টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়ায় পোশাক খাতে অর্জিত সুশাসনের অগ্রগতি ধরে রাখা এখন বিবিধ চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৈরি পোশাক খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত ৬৩টি বিষয়ের মধ্যে ৫৫টি বিষয়ে উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে শ্রম অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিবন্ধনের পূর্বেই মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের তালিকা সরবরাহের ও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রদানে ৫-২০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী ১৪২টি ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসনে দু’টি কমিটি গঠিত হলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তা বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।ফায়ার সার্ভিস এর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কারখানা অধ্যুষিত ঢাকা অঞ্চলে ৯টি নতুন ফায়ার স্টেশন স্থাপন এবং মুন্সিগঞ্জে পোশাক পল্লী স্থাপনে দীর্ঘসূত্রিতার কথাও উল্লেখ করা গয়েছে এই গবেষণায়।
তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় টিআইবির উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো— তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীভূত তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা; অংশীজন কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগের বাস্তবায়ন সমন্বিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা; সাব-কন্ট্রাক্ট ও ক্ষুদ্র কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা; শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠনের জন্য পোশাকের সংখ্যা প্রতি এক থেকে দেড় সেন্ট প্রদানের মাধ্যমে একটি ফান্ড গঠন করা; যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিক ডাটাবেজ গঠন করা; সব ধরনের সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরির সমন্বিত তালিকা তৈরি করা; শ্রম পরিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিক সংগঠন ও যৌথ দরকষাকষির অধিকার অবস্থা নিরূপণে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা; সকল বায়ারকে তাদের ওয়েবসাইটে নিজ নিজ বাংলাদেশি ব্যবসায়িক অংশীদার কারখানার নাম প্রকাশ করা; রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তদের তালিকা ও প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রকাশ করা।