দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ এপ্রিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান-আফ্রিকান দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার তিন দিনের সরকারি সফরে জাকার্তা পৌঁছলে তাঁকে বিমানবন্দবে উঞ্চ আন্তরিক অভ্যর্থনা জানানো হয়। বুধবার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার বালাই সিদাং কনভেনশন সেন্টারে ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল তিন দিনের এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হবে।প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে (জাকার্তা সময়) সুকর্ণ হাত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দবে অবতরণ করে।বিমানবন্দরে ভিভিআইপি লাউঞ্জে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ইন্দোনেশিয়ার বন ও পরিবেশ মন্ত্রী নুরবায়া বাকার। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্র্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
বিমান থেকে অবতরণের পর একটি ছোট্ট শিশু প্রধানমন্ত্রীকে পুস্পমাল্যে ভূষিত করে এবং ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিতা মেয়েরা তাঁকে স্বাগত জানায়।বিমানবন্দরে ইন্দোনেশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী প্রধানমন্ত্র্রীকে স্টেটিক গার্ড অব অনার প্রদান করে। উষ্ণ অভ্যর্থনা শেষে আনুষ্ঠানিক মোটরশোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে জাকার্তার হোটেল বরোবুদুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন।শেখ হাসিনা তাঁর এ সফরে সকাল ১০টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।এ সময় কেবিনেট সচিব এম মোশাররাফ হোসেইন ভূইঞা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কূটনীতিক কোরের প্রধান এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির বিকাশে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা জোরদারকরণ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীসহ ২৮টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।তিনি বলেন, এশিয়ান-আফ্রিকান মহাদেশের ৬৬টি দেশের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দেবেন। এছাড়া এতে জাতিসংঘ, আসিয়ান, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আফ্রিকান ইউনিয়ন, আরব লীগ ও সাউথ সেন্টার- এই ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও যোগ দেবে।এশিয়ান-আফ্রিকান সম্মেলনের ৬০তম বার্ষিকী স্মরণে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।পূর্ব এবং পশ্চিম এই দুই ব্লকের ¯œায়ুযুদ্ধের পটভূমিতে ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার বানদুং শহরে প্রথম এশিয়ান-আফ্রিকান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৫ সালে এই বানদুং চেতনা নতুন এশিয়ান-আফ্রিকান কৌশলগত অংশীদারিত্বে রূপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ এপ্রিল সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। তিনি তাঁর ভাষণে শান্তি, নিরাপত্তা এবং অর্ন্তভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন দ্রুততর করতে দক্ষিণ-দক্ষিণ ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করবেন।সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের দুই মহাদেশের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের জীবন-জীবিকা ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে পড়ার বিষয় উত্থাপন করবেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্যের কথাও তুলে ধরবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৩ এপ্রিল প্লেনারি সেশন-৪ এ সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি অন্যান্য রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ও ফার্স্ট লেডি ইরিয়ানা জোকো উইদোদোর জাঁকজমকপূর্ণ নৈশভোজে যোগ দেবেন।শেখ হাসিনা সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিয়েন শিয়ান, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী সিয়ানলুং, ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী ড. রামি হামদুল্লাহ এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা’র সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৩ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।