DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ এপ্রিল: সকল ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের নিজস্ব রাজনৈতিক দলের প্রতীক বরাদ্দ ও ব্যবহার করতে কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন(নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ৬(২)(ঙ), ইউনিয়ন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ৬(২)(ঙ),পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ৬(২)(ঙ) এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৮(৪) কে কেন সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও আইন সচিব এবং নির্বাচন কমিশনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো: সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের পক্ষে মুহাম্মদ আমিনুর রহমান এ রিট দায়ের করেন।আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট উজ্জ্বল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। আইনজীবী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের তৈরি করা এসব বিধিমালার উপবিধিগুলো সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী।

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রার্থী কোনো না কোনো দলের নেতা বা কর্মী। অথচ হলফনামায় লিখতে হয়, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। হলফনামায় প্রার্থীকে মিথ্যা লিখতে হয়। এটা বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী।উল্লেখিত উপবিধিতে বলা হয়েছে- নির্বাচনী প্রচারণায় কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ব্যতীত কোন রাজনৈতিক দলের নাম বা প্রতীক বা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম বা ছবি ছাপাইতে কিংবা ব্যবহার করিতে পারিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, কোন প্রার্থী প্রতীক ব্যবহার বা প্রদর্শনের জন্য একাধিক রং ব্যবহার করিতে পারিবেন’।সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের কেন নিজস্ব রাজনৈতিক দলের প্রতীক বরাদ্দ ও ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪১তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট এর নির্বাহী প্রধান মুহাম্মদ আমিনুর রহমান এই রিট আবেদন করেন। ২০১০ সালের সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার ৬ (২) (ঙ); ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার ৬ (২) (ঙ); পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার ৬ (২) (ঙ) এবং ২০১৩ সালের উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার ৮ (৪) বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এই আবেদন করা হয়।আচরণ বিধিমালার ওই চার বিধিতে ভোটের প্রচারে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল বিলির বিষয়ে বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের নাম বা প্রতীক বা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম বা ছবি ব্যবহার করতে পারবে না।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীরা ভোটের সময় দলীয় প্রতীকও ব্যবহার করতে পারেন না। ওই চার বিধি কেন সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না- রুলে তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। আদেশের পর উজ্জ্বল হোসেন বলেন, এসব বিধি সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী, কেননা এর মাধ্যমে প্রার্থীদের রাজনৈতিক মত প্রকাশ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আগে সব ধরনের নির্বাচন দলীয়ভাবে হলেও বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার ব্যবস্থা হয়।এর পর থেকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কাগজে কলমে নির্দলীয়ভাবে হলেও প্রার্থীদের দলীয় সমর্থনসহ মাঠের চিত্রের তেমন কোনো হেরফের হয়নি। ফলে এ ধরনের আইনের যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৪ সালে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ভবিষ্যতে স্থানীয় নির্বাচনও দলীয়ভাবে করার পক্ষে অবস্থান জানিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগের কথা বলেছিলেন।

চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই মত দেন। জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও হিসাব-নিকাশ হয় দলীয়ভাবে। কোন দল থেকে কতজন জিতল বা হারল, সেই হিসাব করা হয়।কিন্তু, দলীয়ভাবে নির্বাচন না হওয়ার কারণে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। তারা কোনো অন্যায় করলে ব্যবস্থা (সাংগঠনিকভাবে) নেওয়া যায় না। কাজেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য জাতীয় নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও দলীয়ভাবে হওয়া উচিৎ।