দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ এপ্রিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান উন্নয়ন কর্মকা- এগিয়ে নিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।এক্ষেত্রে তিনি সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য দায়ী প্রত্যেক অপরাধীকে গ্রেফতার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর যৌথ অভিযান অব্যাহত রাখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি না হয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে নিরাপত্তা দিতে এবং অপরাধীরা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।শেখ হাসিনা সোমবার বাংলাদেশ সবিচালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির উদ্দেশ্যে ভাষণকালে এ নির্দেশ দেন।তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, যে জেলা যে সম্পদের জন্য প্রসিদ্ধ তা মানুষের উন্নয়ন কাজে লাগিয়ে প্রত্যেক জেলাকে স্বনির্ভর ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমপক্ষে ২০ বছরের জন্য জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক জেলার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মানুষের কল্যাণে সম্পদ ব্যবহারের পদক্ষেপ নিতে হবে।তিনি বলেন, কোন আবাদী জমি চাষের বাইরে থাকবে না। মানুষকে ক্ষদ্র ও মাঝারী বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে সহায়তা দিতে হবে। নারীরা এখনো অবহেলিত। এজন্য তাদের শিক্ষা ও আয়বর্ধক কর্মকা-ে উৎসাহিত করতে হবে।শেখ হাসিনা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে কালবৈশাখীর পর মানুষের প্রয়োজনে দ্রুত এগিয়ে আসতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি নদী ভাঙ্গনে বাস্তুচ্যুতদের তালিকা তৈরি করে সরকারি খাস জমিতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার নির্দেশও দেন।আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের বিগত ৩ মাসের অস্থির রাজনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা ধ্বংসের পথ বেচে নিয়েছে এবং আমরা বিভিন্ন খাতে আমাদের দৃশ্যমান সাফল্যের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করছি।তিনি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর আরো গুরুত্ব দিয়ে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে তাঁর সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, হবিগঞ্জের জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ এবং বেশ কযেকজন সচিব এসময় উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম. মোশাররাফ হোসেন ভুঁইয়া ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা- এই চারটি নদী বেষ্টিত মানিকগঞ্জ দুর্যোগপ্রবণ ও নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। চাষাবাদের জন্য মানিকগঞ্জের মাটি খুবই উর্বর।তিনি বলেন, রাজধানীর প্রবেশপথ বিধায় এই জেলার উন্নয়ন দ্রুততার সঙ্গে হওয়া উচিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোন সরকার এই জেলার উন্নয়নের প্রতি গূরুত্ব দেয়নি।
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার মানিকগঞ্জের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা শহীদ রফিকের নামে সিঙ্গাইর সড়ক ও সেতু নির্মাণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করেছেশেখ হাসিনা বলেন, মানিকগঞ্জ বহু বিখ্যাত মানুষের জন্মস্থান। মানিকগঞ্জে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে- এ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এই জেলার সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হবে।প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আরিচা ফেরীঘাট স্থানান্তরিত হওয়ায় ওই খালি জায়গায় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হবে।মানিকগঞ্জে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি কর্মকর্তাদেরকে ঢাকার সাথে সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে এমন একটি জায়গা নির্বাচন করতে নির্দেশ দেন।সুনামগঞ্জের জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সাথে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী এই জেলায় পর্যটনের সুবিধাসহ সম্পদ কাজে লাগানোর নির্দেশ দেন।‘সুনামগঞ্জের বহু মানুষ বিদেশে থাকে, কিন্তু উন্নয়ন সন্তোষজনক নয়’ একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে আরও তৎপর হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, যেসব প্রবাসীর বিদেশে রেস্টুরেন্ট আছে, তারা প্রক্রিয়াজাতকৃত মাছ ও খাদ্য আমদানি করতে পারে। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে আগ্রহী উদ্যোক্তাদেরকে সহায়তা করার লক্ষ্যে সরকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।শেখ হাসিনা বলেন, দুর্গম হাওর অঞ্চলের যেসব জায়গায় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন, সেখানে সৌর বিদ্যুৎ খুবই প্রয়োজনীয় সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।নতুন প্রজন্ম যাতে দেশের ইতিহাস জানতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের আহবান জানান।