দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ এপ্রিল: ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে গণসংযোগকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। ওই হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। হামলাকারীরা খালেদা জিয়ার গাড়িতে ঢিল ছোড়ে। এতে তাঁর গাড়ির ডান পাশের কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলোপাতাড়ি ভাঙচুর করা হয় তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) তিন-চারটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এতে খালেদার একজন নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজন আহত হন। তাঁর গাড়ির সামনের অংশে রক্তের দাগও দেখা গেছে। তবে তিনি অক্ষত আছেন।
তাবিথের পক্ষে প্রচার চালাতে আজ বিকেলে কারওয়ান বাজারে যান খালেদা জিয়া। ওই এলাকায় যানজটের কারণে বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকে তাঁর গাড়িবহর। পৌনে ছয়টার দিকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উল্টো দিকে গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে পূর্বমুখী হয়ে বক্তব্য রাখছিলেন খালেদা জিয়া। এ সময় উল্টো দিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বেশ কয়েকজন যুবক তাঁকে জুতা ও কালো পতাকা দেখান। তাঁর বক্তব্যের শেষের দিকে গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ‘ধর ধর’ বলে ঢিল নিক্ষেপকারীদের ধাওয়া করেন। এক পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। খালেদা জিয়া আবার গাড়িতে ঢুকে যান। তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারে নেমে হামলার মুখে পড়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। হামলায় একটি গাড়ি এভাবেই ভাঙচুর করা হয়েছে। একই সময়ে উত্তর পাশ থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে শতাধিক লোক মিছিল নিয়ে আসে। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল লাঠি। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের কাছাকাছি গিয়েই তাঁরা হামলা শুরু করেন। এলোপাতাড়িভাবে ইট ও ডাবের খোল ছুড়তে থাকেন।
জটের কারণে খালেদার গাড়ি সামনের দিকে এগোতে পারছিল না। হামলাকারীদের অনেকে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকেন। তাঁর গাড়ির ছাদ ও কাচে বেশ কয়েকটি ইটের টুকরা পড়তে দেখা গেছে। এ সময় বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী ও খালেদা জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করার চেষ্টা করেন। তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটে যায়। গাড়িতে খালেদা জিয়া সাধারণত বসেন দ্বিতীয় সারিতে। ওই বরাবর তাঁর গাড়ির ডান পাশের কাচ ফেটে যায়।
একই সময়ে খালেদা জিয়ার গাড়ির ঠিক পেছনে তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত একাধিক মাইক্রোবাসে হামলাকারীরা লাঠি, লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাঙচুর চালাতে থাকে। গাড়ি সামনের দিকে এগোতে থাকলে হামলাকারীরাও ধাওয়া দিয়ে ভাঙচুর চালাতে থাকে। একপর্যায়ে বাম পাশ দিয়ে এফডিসি হয়ে মগবাজারের দিকে চলে যান খালেদা জিয়া। সেখান থেকে তিনি বেইলি রোড এলাকায় প্রচারে যান। কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাছের আড়তের কাছাকাছি পর্যন্ত হামলাকারীরা তাঁর গাড়িবহরকে ধাওয়া করে। পরে হামলাকারীরা কারওয়ান বাজারে মিছিল করে। এ সময় ‘কারওয়ান বাজারের মাটি, ছাত্রলীগের ঘাঁটি’ এমন স্লোগানও দেওয়া হয়।
হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সন্ধ্যায় পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি মিটিংয়ে ছিলাম। আমি এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছি। পরিদর্শন শেষে বলতে পারব।’ খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া কারওয়ান বাজারে একটি পথসভায় বক্তব্য শুরু করতেই সন্ত্রাসীরা সেখানে হামলা চালায়। একইসঙ্গে লাঠি-সোটা ও রড দিয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত গাড়িসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবাহিনীর অন্তত তিনটি গাড়িতে বেপরোয়া ভাঙচুর চালায়। এই হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যরাসহ প্রায় অর্ধশত দলীয় নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা চালিয়েছে বলে গাড়ি বহরে থাকা বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় থাকা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা টিম- সিএসএফের একটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তবে খালেদা জিয়া অক্ষত রয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।এর আগে গতকাল রোববারও খালেদা জিয়া প্রচার চালাতে উত্তরায় গেলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কয়েক দফায় কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।