দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ এপ্রিল: শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করায় দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।তিনি আঙ্কটাডের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২০১৪ সালে দেশে এক দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে যা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ২৪ ভাগ বেশি। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় চীনের উদ্যোক্তারা এখন তাদের শিল্প কারখানা স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছেন।
রোববার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত ‘ম্যাক্রো-ইকোনোমিক পলিসিজ কনভার্জেন্স’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বীরুপাক্ষ পাল ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. মোঃ ইউনুস।
বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন,কিছুদিন আগেবিনিয়োগ বোর্ডে ভিসা সার্ভিস, ওয়ার্ক পারমিট এবং লিয়াজোঁ বা শাখা অফিস স্থাপনে অনলাইন কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে দেশেই যাচ্ছেন, সেখানে তিনি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনেয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছেন। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার সমন্বিতভাবে কাজও করছে। এ সব উদ্যোগের কারনে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আমু বলেন,শিল্পায়নের স্বার্থে ব্যাংকসুদের হার কমিয়ে আনার বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। শিগগিরই এটি সিংগেল ডিজিটে নেমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বলেন, নতুন শিল্পনীতিতে বিষয়টির প্রতি বিশেষ নির্দেশনা থাকবে।অর্থনৈতিক উন্নতির গতি নির্ধারণে মুদ্রানীতির ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, সরকার দক্ষতার সাথে সময়োপযোগী মুদ্রানীতি অনুসরণ করে আসছে। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি করছে। এর বড় প্রমাণ গত ৬ বছরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুতহারে বেড়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দেশে মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ৪৫ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৭০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে।
তিনি টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, প্রকৃত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সবক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এর গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে এনার্জি রিসার্চ কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনি জানান।মূল প্রবন্ধে ড. মোঃ ইউনুস বলেন, বিনিয়োগের জন্য যেসব উপদান প্রয়োজন, তার সহজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। বিনিয়োগের জন্য জমি পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। এর পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুৎ তো রয়েছে। তিনি এসব চ্যালেঞ্জ নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।