DoinikBarta_দৈনিকবার্তা khaleda

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ এপ্রিল: আইনজীবীদের আবেদন নাকচ করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, গ্যাটকো ও নাইকো এই তিন দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি শুরু করেছে আদালত।রোববার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্টে বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়। প্রথম দিনের শুনানি শুনে আদালত বুধবার পর্যন্ত তা মুলতবি করেন।আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা শুনানি মুলতবির আবেদন জানান। আবেদনের কারণ হিসেবে আসন্ন বার কাউন্সিল নির্বাচনকে দেখান ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল।

মামলাকারী দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত তা নামঞ্জুর করে শুনানি শুরুর নির্দেশ দেন।বুধ ও বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় শুনানির জন্য খালেদার আবেদনগুলো আংশিক শ্র“ত হিসেবে আদালতের কার্যতালিকায় আসবে বলে তিনি জানান। রোববার শুনানির জন্য খালেদার চারটি আবেদন কার্যতালিকায় ৮৯, ৯০, ৯১ ও ৯২ নম্বর ক্রমে ছিল। এতে সময় লেখা ছিল ২টা।গত ৫ এপ্রিল কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বাড়িতে খালেদা জিয়া। এরপর শুধু একবার আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারতে বেরিয়েছিলেন তিনি।গত ৫ এপ্রিল কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বাড়িতে খালেদা জিয়া। এরপর শুধু একবার আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারতে বেরিয়েছিলেন তিনি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার বিরুদ্ধে এই তিনটি মামলা হয়। আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নেয় দুদক।

বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি মামলায় খালেদার পাশাপাশি তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনকে আসামি। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি মামলার পর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক।চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে এই মামলায়।২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর খালেদার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাই কোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিল বিভাগও বহাল থাকায় আটকে যায় বিচার।

সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়।গত ৩ ও ৫ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানির পর আদালত রায়ের জন্য ১০ মার্চ দিন রাখে। পরে তা পিছিয়ে ৫ এপ্রিল ( রোববার) নতুন তারিখ রাখা হয়।এরই মধ্যে খালেদার আইনজীবীরা বেঞ্চ পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। এরপর গত ২ এপ্রিল তারা ওই আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে দেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি খালেদার আবেদন শুনানির জন্য বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্টে বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।নাইকো দুর্নীতি মামলা হয় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর, পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।রোববার সকালে মামলাগুলোর রুল শুনানি পেছাতে সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন খালেদার আইনজীবীরা। সেগুলো খারিজ করে দিয়ে শুনানি শুরুর আদেশ দেন আদালত।এর আগে গত ৯ এপ্রিল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন একই আদালত।

মামলা তিনটির রুল নিষ্পত্তির জন্য গত ৭ এপ্রিল এ বেঞ্চের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)।এসব মামলার বেঞ্চ পরিবর্তনে গত ২ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার আইনজীবীদের এ সংক্রান্ত চারটি আবেদন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।গত ৫ এপ্রিল পূর্ববর্তী স্ব স্ব হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাগুলোর বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।মামলাগুলোর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি শেষ হয়েছিল। এর রায়ের দিন গত ৫ এপ্রিল ধার্য ছিল বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে। এর মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছিল।অন্যদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলা ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি শুরুর অপেক্ষায় ছিল।খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা এসব মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল। সম্প্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় দুদক।এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: ঢাকা ও চট্টগ্রামে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক।

মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়।এ মামলায় ২০০৮ সালের ১০ জুলাই খালেদা জিয়া, সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় দুদক। এরপর চার্জশিটভুক্ত আসামি খালেদা জিয়াসহ আসামিদের কয়েকজন ওই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।এর মধ্যে খালেদা জিয়ার করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০০৭ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন।নাইকো দুর্নীতি মামলা: কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।

অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্স্’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা: জরুরি অবস্থার সময়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে।কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি) বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম। একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়।মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এতে চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মরহুম), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরহুম), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।মামলার অভিযোগে বলা হয়, কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সিএমসির সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করায় সরকারের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না জানতে চেয়ে সরকারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। পরে সময়ে সময়ে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়।দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তবে আসামিপক্ষ শুনানিতে অংশ নেননি। গত ৪ মার্চ তারা সময়ের আবেদন জানালেও আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

তিনদিনের রুল শুনানি শেষে গত ৫ মার্চ এর রায় দেওয়ার জন্য ১০ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে এর আগেই ৮ মার্চ খালেদার পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে গিয়ে শুনানির সুযোগ চান।আসামিপক্ষের এ আবেদনে রায়ের দিন পিছিয়ে ১৫ মার্চ পুনর্র্নিধারণ এর মধ্যে শুনানি করতে বলেন আদালত।১৫ মার্চ শুনানি করতে এবং রায়ের দিন পেছাতে ফের সময়ের আবেদন জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে রায়ের দিন ৫ এপ্রিল পুননির্ধারণ করেন বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ সময়ের মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করারও আদেশ দেন আদালত।

এদিকে এ মামলার রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ বদলের আবেদন জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গত ১১ মার্চ আদালত পরিবর্তন করে মামলাটি অন্য আদালতে বদলির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন জানান। গত ২ এপ্রিল ওই আবেদনটিই তারা প্রধান বিচারপতির কাছে দেন।সর্বশেষ রুল নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতি গঠিত হাইকোর্টের নতুন বেঞ্চ গত ৯ এপ্রিল এ মামলার কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন।এ মামলা বাতিলে অপর দুই আসামি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দুটি আবেদন করেছিলেন, যা আগেই খারিজ হয়ে গেছে।