দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ এপ্রিল: জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এই দুই খাতে ভর্তুকি কমাতে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ নাকচ করে দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।বরং আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা আর্থিক খাতের বিশ্ব মোড়ল বিশ্ব ব্যাংকের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।শুক্রবার সকালে বিশ্ব ব্যাংকের সদরদপ্তরে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সনের সঙ্গে বৈঠককালে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন।যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে শুক্রবার বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের বসন্তকালীন (স্প্রিং) বৈঠক শুরু হয়েছে। ১৯ এপ্রিল তিনদিনের এ বৈঠক শেষ হবে।
বেঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব ব্যাংক ভাইস- প্রেসিডেন্ট আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নিতে বলেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, আমাদের মতো দেশে সেটা সম্ভব নয়।তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ খাতে আর বাংলাদেশ সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নিতে বলেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, আমাদের মতো গরীব দেশে সেটা সম্ভব নয়।আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে সরকার বরং বিনিয়োগ বাড়াবে। আর এজন্য আরও বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হলে সেটাও দেবে সরকার।দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে এ খাতে ভর্তুকি কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের সরকারের।
বাংলাদেশে কয়েকটি মূল্যস্তরে বিদ্যুৎ বিল নেওয়ার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি তাকে আরও বলেছি, আমাদের ওখানে বিদ্যুতের দামে কয়েক ধরনের ধাপ আছে। ধনীদের জন্য একটু বেশি দাম। মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরীবদের জন্য বিদ্যুতের বিল কম আদায় করা হয়। দেশের সব মানুষকে যতদিন পর্যন্ত আমরা বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে না পারব ততদিন এ খাতে বিনিয়োগ করেই যাব আমরা। সেজন্য ভর্তুকিও অব্যাহত রাখতে হবে।তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ খাতে আর বাংলাদেশ সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
ডিজেল-অকটেন- পেট্টোল-কেরোসিনসহ সব ধরনের জ্বালানিতেই এখন মুনাফা করছে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি।বিপিসি চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় গত ডিসেম্বর থেকে আমাদের আর কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছিল। এবার ওই ব্যয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে বলে মনে করছেন বিপিসি চেয়ারম্যান।
বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর মুহিত বৈঠক করেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলির সঙ্গে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভারতের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ভারত সরকারের ১০০ কোটি ( ১ বিলিয়ন) ডলার ঋণের ১৬টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৬টির মধ্যে চার-পাঁচটির কাজ এখনও চলছে। নতুন ১০০ কোটি ডলারের ঋণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মে মাসে সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফর নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মুহিত।
আগামী ১৭-১৮ মে ঢাকায় সাউথ-সাউথ কনফারেন্সে যোগ দিতে ভারতের অর্থমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশে গম রপ্তানির আগ্রহ টওকাশ করেন জানিয়ে মুহিত বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দরে গম দিলে বাংলাদেশ ভারত থেকে তা আমদানি করবে বলে তিনি তাকে বলেছেন।ইবোলা মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের ভূমিকার ইতিবাচক মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের তিন দিনের এই বৈঠক শুরু হয়।জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান ছিলেন বৈঠকে।