দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ১৮ এপ্রিল: চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরীতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করছেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২০দলীয় জোট প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন সরকার দলীয় ক্যাডাররা।এসম তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনী ও রাউজান থেকে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা নগরীতে আসছেন বলে অভিযোগ করেন।
শনিবার বেলা সাড়ে এগারটার দিকে নগরীর মেহেদীবাগ এলাকায় নিজ বাসায় এক সাংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।আমীর খসরু বলেন, সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন অজুহাতে চট্টগ্রামে এসে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। সেনাবাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী এই ধরনের বক্তব্য দিতে পারেনা।সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলা ও ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে বারবার অভিযোগ করা হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেনাবহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর বিএনপির সহ-সভাপতি সামসুল আলম ও আবু সুফিয়ানসহ অন্যন্য নেতৃবৃন্দ।
ফেনী ও রাউজানসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারি দলের ক্যাডাররা চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।তিনি বলেন,তাদেরকে বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র দখলসহ ভোট কেড়ে নেওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটার কাজ তারা ইতিমধ্যে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিছু কিছু ওয়ার্ডে সন্ত্রাসীরা আটঘাট বেঁধে নেমেছে। সে সমস্ত এলাকায় তারা কোন পোস্টার, ব্যানার লাগাতে দিচ্ছে না।এমনকি ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ যারা নির্বাচনী কাজের সঙ্গে জড়িত তাদেরকেও ঢুকতে দিচ্ছে না।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ তুলে আমীর খসরু বলেন, কোন কোন ওয়ার্ডে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এমন অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে, সেখানে আমাদের প্রার্থী মনজুর আলম কোন নির্বাচনী কর্মসূচিও দিতে পারছে না। এরমধ্যে ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডে প্রায় ১৭টি ভোট কেন্দ্র আছে। যেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত করার কারণে আমাদের প্রার্থী মনজুর আলম সাহেব যেতে পারছেন না।এলাকায় সন্ত্রাসীরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।তিনি বলেন,ইতিমধ্যে সে এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয়ের উপর হামলা হয়েছে। বিএনপি’র নেতার উপরও হামলা হয়েছে। পুলিশ মামলা গ্রহণ করেছে। নির্বাচন কমিশন তিনদিনের মধ্যে সুরাহা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ অতিক্রমের পরও এর কোন প্রতিকার মেলেনি।
আমীর খসরু বলেন,১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর, তার পরিবার ও যারা প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করতে গিয়েছিল তাদের উপর হামলা হয়েছে। প্রার্থীর পক্ষ থেকে যখন মামলা করেছে তখন তার বাড়িতে হামলা হয়েছে। এরপর আবারও মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কিছু করা হয়নি।শনিবার সকালেও পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ইয়াছিন নামে একজন কর্মীকে মারধর ও পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনেন আমীর খসরু। তিনি বলেন,শুক্রবার রাতে লালখান বাজার ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালিয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমস্ত ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে তারা।হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা বলছে বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেবে না। এধরণের কর্মকাণ্ড ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোন প্রতিকারের লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে জনগণ এ নির্বাচনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সে আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
তিনি বলেন,নির্বাচন কমিশন যদি দায়িত্ব নিয়ে এ সমস্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সেখানে জনগণের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা আছে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের এ উপদেষ্টা বলেন,‘নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমে আসবে। পরিবেশ উন্নতি হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ক্রমান্বয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে, পরিবেশের অবনতি হচ্ছে। এ জন্য আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছি। কারণ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমরা কোনধরণের সমাধান পাচ্ছি না। এ নির্বাচন সেনাবাহিনী ব্যতিরেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি না আমার সন্দেহ আছে। শুধু নির্বাচনের দিন নয়, এক সপ্তাহ আগে থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা আছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গে অভিযোগ আনেন মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন,প্রায় প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামে একজন মন্ত্রী যাতায়াত করছেন। কোন সময় নাকি প্রেসক্লাবের মেম্বার হওয়ার জন্য আসছে।কোন সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে যাওয়ার নাম দিয়ে আসছে। উনি বলছেন, সেনাবাহিনী প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা জানতে চাই উনাকে এ দায়িত্ব কি নির্বাচন কমিশন থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে? উনি কি নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র হয়েছেন? এ কথাগুলো একজন মন্ত্রী কিভাবে বলতে পারেন? এ দায়িত্ব উনাকে কে দিয়েছেন?
এর আগে সরকারের মন্ত্রীরা রুদ্ধদ্বার সভা করেছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন,সমস্ত নির্বাচনী কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। কিছু বলতে হলে সেটা নির্বাচন কমিশন থেকে আসতে হবে। কিন্তু মন্ত্রী এ নিয়ে মন্তব্য করছেন। উনি কি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি? উনি আরও কিছু কিছু রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রকাশ্যে উন্নয়নের আশ্বাসও দিয়ে যাচ্ছেন। এটাও আচরণবিধির লঙ্ঘন। অথচ নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে নির্লিপ্ত। তাদের পক্ষ থেকে কোন কিছু বলা হচ্ছে না। কোন কিছু করাও হচ্ছে না।এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হবে জানান তিনি।আমীর খসরু বলেন,ঢাকাতে দেখলাম ১৬ জন প্রার্থীর মামলা খারিজ হয়ে গেছে। নির্বাচনের ১০-১২দিন আগে প্রার্থীর মামলা খারিজ হয়ে গেল! চাঁদাবাজি, মারধর ও হত্যা প্রচেষ্টার জন্য চট্টগ্রামের সরকারি দলীয় প্রার্থীও ১৬ বছর পর মামলার জামিন নিয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব কাজগুলো হচ্ছে। সুতরাং সরকারের উদ্দেশ্য কি?এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিশ্চুপ কেন জানতে চেয়ে আমীর খসরু বলেন, কার মদদে এ সমস্ত ঘটনা ঘটছে। অথচ বিরোধী দলের প্রার্থীরা মামলার ভয়ে এলাকায় যেতে পারছে না। মামলা খারিজ হওয়াতো দূরের কথা। তাদের বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। যারা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে একটু সক্রিয় ভূমিকা রাখছে তাদের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন।
সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমীর খসরু বলেন,সরকার কি পাঁচ জানুয়ারীর মতো আরেকটি কেড়ে নেওয়ার নির্বাচন করছে। নাকি বাংলাদেশের জনগণকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার নির্বাচন করছে। এ প্রশ্ন শুধু আমার নয়, পুরো চট্টগ্রামবাসীর।তিনি বলেন,সরকারি দলের যে কর্মকাণ্ড, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যে নির্লিপ্ততা এবং যে হারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের মনোনিত প্রার্থী মনজুর আলমের কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কাউন্সিলরদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে, জনগণের মধ্যে এ প্রশ্ন উঠছে।তিনি বলেন, মন্ত্রীদের ঘন ঘন আসা যাওয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের এখানে অনুপ্রবেশের যে খবর আসছে সবকিছু মিলিয়ে সবার মনে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।
আমীর খসরু মাহমুদ বলেন,দয়া করে এসব বন্ধ করুন। বাংলাদেশের জনগণ ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। জনগণ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে তাদের মূল্যবান ভোট, তাদের নাগরিক অধিকার, তাদের সাংবিধানিক অধিকার, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার একটি ভোট দেওয়া। সে ভোটটি যেটি পাঁচ জানুয়ারী দিতে পারেনি সেই ভোটটি দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ঠিক এ সময়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে ধরণের ভূমিকা আমরা লক্ষ্য করছি। এটা সন্দেহের উদ্রেক হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিন। পাঁচ জানুয়ারীর মতো দেশের মানুষের ভোটটা কেড়ে নেবেন না। ভোটটা দেওয়ার সুযোগটা তাদেরকে দেন আপনারা।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, নগর বিএনপি’র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান, শামসুল আলম ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সদস্য মাহবুবুর রহমান শামীম।