দৈনিকবার্তা-খাগড়াছড়ি, ১৮ এপ্রিল: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পানছড়ি উপজেলাতে সাওতাল পাড়ায় হয়নি পানবাহা উৎসব, ঝুটেনি ভাগ্যে ১লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ। পাহাড়ের প্রানের উৎসব ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইং ও চাকমাদের বিজু’র ত্রি আদ্যক্ষরে মিলিত বৈসাবিকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা আনন্দ উৎসব মেতে উঠলেও খাগড়াছড়িতে একমাত্র বসবাসরত সাওতাল পরিবারের এবার হয়নি প্রধান সামাজিক উৎসব পানবাহা । এ আদিবাসী দারিদ্রতা সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসনও তাদের কখা একটু পর্যন্ত ভাবেনি । তাইতো যে সময়ে সাওতালরা তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব পানবাহা করার কথা অথচ উৎসবের কোন আমেজ ও আয়োজন নেই। শুধু তাই নয়, বাংগালীর বর্ষবরন ১৪২২উৎসবেও বসবাসরত এসব সাওতাল পরিবারের ভাগ্যে ঝুটেনি পান্তা ইলিশ । বরং বিরাজ করছে সাওতাল পাড়া দারিদ্রতার সাথে যেন দীর্ঘ বছরের যুদ্ধের চিত্রের ইতিহাস বহন করছে । নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থায়ও গত বছর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান হলেও এবার ”পানবাহা উৎসব” করতে পারেনি সাওতালরা । দারিদ্রতার করাল গ্রাসে হুমকির মুখে আজ তাদের জীবন । সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত ’সাওতাল’ জনগোষ্ঠীর জীবন যেন বিপন্ন হওয়ার পথে।
কাপ্তাই বাধে ক্ষতিগ্রস্থ এসব সাওতাল পরিবার খাগড়াছড়ি পানছড়ির বড় সাওতাল পাড়া, মঙ্গল কার্বারী পাড়া ও রামদাস কার্বারী পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল ষাটের দশকে । তাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই। অনেকটা উদ্ভাস্তর মতো তাদের যাপিত জাীবনের চিত্র অমানবিক ও অবর্ণনীয়। পাহাড়ে বর্ষবরণ ও বৈসাবি উৎসব ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়লেও ব্যতিক্রম শুধু সাওতাল গ্রামে। অথচ এখন তাদের ’পানবাহা’ উৎসবের সময় । বাংলা নববর্ষের দিন শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে বাহামি, পাতা ও ছাতা নামে তিনদিন ধরে প্রথাগত এই উৎসব উদযাপন করার কথা ।পানছড়ি সাওতাল পাড়ার কার্বারী পাড়ার সম মাদ্রি ও রামদাস সরেনসহ বাসিন্দাদের প্রত্যেকে জানালেন, তাদের অভাব-অভিযোগের কথা কখনো শুনতে আসেননি বিত্তবানরা। খবরও রাখেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গুনীজন ব্যক্তিত্ব কেউ । নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী ধর্মীয় রীতিগুলোই শুধু পালন করা হয়েছে । পানবাহা উৎসব প্রতিকী পর্যন্ত হয়নি ।
সাওতাল পাড়া যুব কমিটি’র সাধারন সম্পাদক সুজন সাওতাল জানান, অভাবের কারনে পানবাহা উৎসব এবার করতে পারেনি। তবে ঘরোয়া ভাবে ধর্মীয় রীতি-আচার-প্রথা পালন করা হয়েছে । কিন্তু ইচ্ছা থাকার স্বত্বেও অভাবের তারনাই এবার পানবাহা উৎসব আয়োজন নেই ।সাওতাল বাসী অনেকেই আক্ষেপ সহকারে জানান, নিজেদের বৈধ জমি নেই, তাই অন্যের বাড়ীতে শ্রম দিলে এক মুঠো ভাত মেলে। অন্যথায় পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারী-বেসরকারী ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও সাওতাল জনগোষ্ঠীর জন্য ছিটেফোটাও আর্থিক সাহায্য জোটে না। ফলে সময়ের সংগে সংগে অন্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও ঘোরেনি সাওতালদের কপাল ।
বয়োবৃদ্ধ দেনা মুরমু সাওতাল জানান, পানছড়ি সাওতাল পল্লীতে বর্তমানে শতাধিক পরিবার বাস করছে। পাড়ার প্রধান তিন কার্বারী দায়িত্ব রয়েছে। যারা সামাজিক সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন । তিনি আরো জানান, অনেকে বাংগালী ও অন্য সম্প্রদায়ের সংগে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন । ফলে সাওতালদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে ।
সাওতাল পরিবার গুলোর অভাব-অভিযোগের কথা স্বীকার করে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা বলেন, ’এবার তারা পানবাহা উৎসব করতে পারেনি। আর উপজেলা পরিষদ থেকেও সহায়তা করার মতো সামর্থও নেই, তেমন পায়নি বরাদ্ধ ।