দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ এপ্রিল: প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ের লাকসাম থেকে চিকনি আস্তানা পর্যন্ত নবনির্মিত ডাবল লাইনের উদ্বোধন করবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করবেন। একই সময়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং কাজের উদ্বোধন, লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর কাজের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।এ বিষয়ে শুক্রবার রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি ডাবল রেললাইন পরিদর্শন করেছেন। তিনি সকাল ১১টায় লাকসাম রেলওয়ে জংশনে উপস্থিত থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করেন।স্থানীয় সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যাত্রীসেবা উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর অনেক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পর্যায়ক্রমে পুরো রেলপথে ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ের প্রায় ৩২১ কিলোমিটারের মধ্যে ২০৪ কিলোমিটার রেলপথে সিঙ্গেল লাইন রয়েছে। সিঙ্গেল লাইনে প্রতিদিন ৩৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারতো। ডাবল লাইন উদ্বোধনের পর এতে ৭০ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এর ফলে দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে একটি লাইন বন্ধ থাকলেও ট্রেন চলাচল চালু রাখা সম্ভব হবে।রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৬০৭ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লাকসাম-চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মার্চ। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬১ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ হয়েছে। ওই পথে ৮টি মেজর সেতু, ৩৪টি কালভার্ট এবং ১১টি পাইপ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। শর্শদী, গুণবতী, চিনকি আস্তনা ও হাসানপুরে ৪টি স্টেশনে নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ হয়েছে। ৮টি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ, ৪টি স্টেশনে ক্যানোপি এবং ১৩টি নতুন প্ল্যাটফরম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২টি স্টেশনে টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নতুন এ লাইন দিয়ে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো সম্ভব। তবে অনুমোদিত গতিবেগ ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।এই রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত হওয়ায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং কাজও শেষ হয়েছে। যা একইদিনে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। স্টেশন বড় করতে, প্ল্যাটফর্ম তথা লাইন বাড়াতে প্রায় ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়তি ৩টি লুপ ও একটি শেডসহ প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য নতুন ত্রিকোণা লাইন নির্মিত হয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম মার্শালিং ইয়ার্ড ও পাহাড়তলী স্টেশনের মধ্যে ৮০০ মিটার রেলওয়ে ট্র্যাক পুনর্বাসন করা হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজসহ ৩০০ বর্গফুট প্ল্যাটফর্ম ক্যানোপি, ১০০০ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল, ২৭০০ বর্গফুট সংযোগ সড়ক ও ২০০০ মিলিমিটার পানি সরবরাহের ব্যব¯’া করা হয়েছে। এর ফলে আগে যেখানে ২৩ জোড়া ট্রেন পরিচালনা করা যেতো এখন সেখানে ৫০ জোড়া ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ডাবল লাইন নির্মাণ ও স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিংয়ের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচলে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে।
একই দিন লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৬ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে ২০২০ সালের জুন মাসে। এ প্রকল্পে ৭২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করা হবে। মেইন লাইন ১৪৪ কিলোমিটার ও লুপ লাইন ৪০ কিলোমিটার মোট ১৮৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ শেষে এ লাইনে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।