দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৭এপ্রিল : প্রার্থীদের অঙ্গীকারের পাশাপাশি এবার শপথ নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটাররা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশান-১ এর ইম্যানুয়েলস ব্যাংকুয়েট হলে আয়োজি এক অনুষ্ঠানে এ অঙ্গীকার ও শপথ অনুষ্ঠিত হয়।ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র প্রার্থীদেরকে জনগণের মুখোমুখি করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণফোরাম (নাসফ)।বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থীদের নিয়েও এক অনুষ্ঠান হয়। শুক্রবায় হয় উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের নিয়ে। এসময় মেয়র প্রার্থীরা জনগণের উদ্দেশে বিভিন্ন বক্তব্য ও তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ্য একটি রাষ্ট্রে নাগরিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ নেই।সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের পরিচালনায় এতে উপস্থিত প্রার্থীরা নিজেদের কথা জনগণের সামনে তুলে ধরছেন ও নাগরিকদেও প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মো. জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি, আনিসুজ্জামান খোকন,শেখ শহীদুজ্জামান,মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, নাদের চৌধুরী, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম,মো. জামান ভূঞা, শেখমো.ফজলে বারী মাসউদ ও সুজনের সদস্যরা।নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সভাপতি মু. হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ১২ মেয়র প্রার্থীসহ উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার চার শতাধিক ভোটার।
সুজনের ১৩ দফা অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে- সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব না খাটানো ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা। আচরণবিধিসহ সকল প্রকার বিধি-নিধান মেনে চলা। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত, কার্যকর ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলা। সকল কাউন্সিলরদের দিয়ে যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করা। পরাজিত হলে গণরায় মাথা পেতে নেয়া। সিটি করপোরেশনের সম্পদ বৃদ্ধিসহ স্থায়ী সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা। খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা প্রভৃতি মৌলিক মানবিক চাহিদা নিশ্চিতত করতে সবাইকে একত্রিত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। করপোরেশনের অর্থের উন্নয়ন বছর ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ। জনঅংশগ্রণমূলক প্রক্রিয়ায় বার্ষিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাজেট ঘোষণা ও উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা করা। সকল কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত। দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি পরিহার। নারীর অবস্থান উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে করপোরেশনের সকল মানুষের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করা। ইভটিজিং বন্ধসহ বাল্যবিয়ে, যৌতুক, ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা। মুক্তিযোদ্ধা, পগু, প্রতিবন্ধী, আহত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ। আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। দখলকৃত ভূমিসহ সব ধরনের জলাশয় উদ্ধার করে প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচিত হলে প্রতিবছর ব্যক্তিগত ও পরিবারিক সম্পদ, আয় ব্যয় ও দায় দেনার হিসাব প্রকাশ করা।এরপর ভোট প্রদানকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীর স্বপক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগের শপথ করেন ভোটাররা। শপথ বাক্যে রয়েছে- আমরা অর্থ বা অন্যকিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো না। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মিথ্যাচারী, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ঋণ খেলাপী, বিল খেলাপী, ধর্মব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু ও কালোটাকার মালিককে ভোট দেবো না।এসময় তারা স্লোগান দিয়ে বলেন, আমার ভোট আমি দেবো, জেনে-শুনে-বুঝে দেবো। সৎ-যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিকে দেবো।’নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদল নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এক টেবিলে বসানোর জোর চেষ্টা করবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী মো. জামান ভূঞা।
মো.জামান ভূঞা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদল নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকা উত্তরের ভোটার। এ তিন নেত্রীকে এক টেবিলে বসাতেই হবে। এজন্য ‘টেবিল’ মার্কায় নির্বাচন করছি। আমি মেয়র হলে এই তিন নেত্রীকে এক করার চেষ্টা করবো। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের জনগণের মুখোমুখি করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। অনুষ্ঠানে বিলম্বে আসায় প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়রপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফির ক্ষোভের মুখে পড়েন আনিসুল হক। উত্তরে নিজের দোষ স্বীকার করে বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিলেন আনিস।
অনুষ্ঠানে আনিসুল হক বিলম্বে আসায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি মঞ্চে উঠতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী উচ্চস্বরে বলেন, আমরা প্রচারণা বাদ দিয়ে জনগণের সম্মানে এসেছি এখানে। আর তিনি এলেন এখন! এটা কী? এখনই এমন, মেয়র হওয়ার পর কী করবেন তিনি?তার এ মন্তব্যে কাজী শহীদুল্লাহও সায় দেন।কিন্তু বিতণ্ডায় অংশ নিলেন না আনিস। বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন বুদ্ধিমান এ মেয়রপ্রার্থী।
তিনি বলেন, আমার আচরণ যদি আপনাদের আহত করে আমি ক্ষমা চাইছি। বিশেষ করে ক্বাফির কাছে। বসিলাতে একটি সাইকেল চালনার অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে বেশ ক’জন তরুণের সঙ্গে সাইকেল চালনায় যোগ দিয়েছি আমি। তাই আসতে দেরি হয়ে গেল। পোশাক না বদলে তাই এখানে ছুটে এসেছি।এরপর নিজের খোলা চিঠি থেকে একটি অংশ পড়ে শুনিয়ে বলেন, তিনি মেয়র হলে এই ঢাকা হবে আরও নিরাপদ।নির্বাচনকালীন এ বিনিয়োগ (ব্যয়) তিনি কীভাবে সামাল দেবেন- এমন প্রশ্ন করেন এক নাগরিক।
কৌশলে এর উত্তর দেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ মেয়রপ্রার্থী। তিনি বলেন, বিনিয়োগ আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আমার মা-বাবার স্মৃতি।পুলিশ ম্যাপিং এর মাধ্যমে অপরাধপ্রবণ এলাকা মনিটরিং করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা সিটি নির্বাচনে উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।তবে তিনি এও বলেন, যেহেতু পুলিশ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নয়। তাই সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্থানে পহেলা বৈশাখে আমাদের বোনেরা নির্যাতিত হয়েছেন, সেটি অভিজিতের ঘটনার স্থান থেকে খুব দূরে নয়। একই জায়গায় পুলিশের সামনে কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে- সেটি দেখতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিতে হবে।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলের সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ বলেন, জনগণের প্রতিনিধিদের অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পরপর নিজেদের সম্পদের হিসেব জনগণকে দেওয়া উচিত। সে সময়টি হতে পারে তিন বছর।তিনি বলেন, কারও কারও দাবিগুলো মেয়রের এখতিয়ারের বাইরে। তবু যার যার স্থান থেকে চেষ্টা করা যায়।অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন উন্নয়নমূলক কাজ শুরুর সময় এটি কবে শেষ হবে, সে সময়সীমা জানিয়ে দেওয়া উচিত।এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি মনিটরিং সেল তৈরি করে কাজের অগ্রগতি মনিটর করা যেতে পারে।