দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ এপ্রিল: ট্রান্সপারেন্সিইন্টারন্যাশনাল বংলাদেশের(টিআইবি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, রামপাল এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের নামে সরকার সংশ্লিষ্ট এলকার মানুষকে ভূমিচ্যুত করেছে। রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দুটি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রেও হয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি‘র কার্যালয়ে রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প: ভূমি অধিগ্রহণ ও পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ শেষে এ অভিযোগ তোলা হয়।সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের। রামপাল ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে সরকারকে এসব সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।সংবাদ সম্মেলনে, রামপাল ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ ও পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা বাস্তবায়নে সরকারের ঘাটতি ও দুর্নীতি তুলে ধরে টিআইবি।এছাড়া প্রকল্প এলাকার প্রাণী বৈচিত্র্য হুমকি বিবেচনা না করা, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন বিষয়ে অস্পষ্টতার কথা উল্লেখ করে সংকট সমাধানে ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি।
সুলতানা কামাল বলেন, ভূমি গ্রহণে সরকার মানুষের ন্যায্য অধিকার দেয়নি। পরিবেশগত জলবায়ু বিপর্যয়ের বড় ধরণের ক্ষতির বিষয়টিও সরকার আড়াল করেছে। এ প্রকল্পের কোনো তথ্যই জনগণকে জানানো হয়নি। দুটি প্রকল্পের তথ্য উন্মুক্ত করা বা স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রদানের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, এমনকি এখনো নেই। ভূমি অধিগ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যারা পাওয়ার কথা ছিল তারা পাইনি কিন্তু যারা পেয়েছে তারা অবৈধভাবে পেয়েছে। পরিবেশের দূষণ বিবেচনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুতের মত নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে।জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’র (জাইকা) বিরুদ্ধে একটি প্রকল্পে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এনেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প ‘মাতারবাড়ি’তে জাইকার ঋণের নামে জলবায়ু তহবিলের অর্থ বরাদ্দ দেওয়াকে প্রতারণা বলে এ অভিযোগ আনলো সংস্থাটি।টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাপান সরকারের জাইকা মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে যে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে সেটি এক ধরণের প্রতারণা। কারণ তারা জলবায়ু পরিবর্তনের তহবিল থেকে মাতারবাড়ি প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে। তারা নিজেরাই বলছে এটা জলবায়ু তহবিলেরৃ।তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে নিউ বা এডিশনালৃ নতুন বা অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা। এটা না করে তারা আমাদের লোন দিচ্ছে। যেটা আমাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার কথা। কাজেই এক ধরণের প্রতারণার মাধ্যমে জাপান এখানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
জাইকার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়,‘এ বিষয়ে টিআইবির কাছে দালিলিক কোনো প্রমাণ আছে কি-না?জবাবে টিআইবি নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা রিলায়েবল সোর্স (নির্ভরযোগ্য সূত্র) থেকে এটা জানতে পেরেছি।সংবাদ সম্মেলনে রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প দু’টিতে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা সম্পাদনে বিভিন্ন অনিয়ম ও জমি অধিগ্রহণে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতিসহ বিরাজমান সুশাসনের ঘাটতিজনিত বিভিন্ন সমস্যার ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন পাঠ করেন টিআইবি’র রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার েেমাহাম্মদ হোসেন।প্রতিবেদনে বলা হয়, রামপাল এবং মাতারবাড়ি প্রকল্পে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা সম্পাদনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
প্রকল্প এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের প্রতিটি স্তরেই অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রকল্পগুলোতে প্রতিটি ফাইল প্রসেসিংয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মোট ক্ষতিপূরণের ৩-১০ শতাংশ পর্য্যন্ত অগ্রিম ঘুষ প্রদান করছে।ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রকল্প করতে যেসব পূর্ব শর্ত রয়েছে তা মানা হয়নি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিচার করা হয়নি। যারা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা তারা পাননি। অন্যদিক এর প্রভাব পড়ছে সার্বিকভাবে আর্থ-সামাজিক খাতে।তিনি বলেন, সারাবিশ্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে।ড. ইফতেখারুজ্জামান সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারকে মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।