দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ এপ্রিল: সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেছেন,জনগণের হাতেভোট পরিচালনার দায়িত্ব তুলে না দেয়া পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আর যতোদিন পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে নির্বাচনের দায়িত্ব থাকবে ততোদিন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই প্রশাসনকে নির্বাচন থেকে বের করে আনতে হবে।বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপ লাউঞ্জে সেন্টার ফর ন্যাশনালিজম স্টাডিজ আয়োজিত ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই দিতে পারে চলমান সঙ্কটের সমাধান শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার ফাতেমা আনোয়ার। এসময় আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহম্মদ আজম খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, সংগঠনের ট্রাস্টি ড. এন ওসমানি প্রমুখ।
আব্দুর রউফ বলেন,জনগণের কাছে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আমি বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়েছিলাম।তারা হয়তো আমারসেই কাগজপত্রগুলো পুড়িয়ে ফেলেছে।নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আব্দুর রউফ ইসিকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।উল্লেখযোগ্য পরামর্শগুলো হলো- রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী দেয়া বন্ধ করতে হবে। প্রশাসনকে নির্বাচন থেকে বের করে আনতে হবে। জনগণের কাছে নির্বাচনের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে এবং চার অথবা পাঁচ বছর শেষে একটা সুনির্দিষ্ট তারিখে নির্বাচন করতে হবে।
সাবেক এই বিচারপতি বলেন, দেশের চলমান সংকটের মূল কারণ হলো সকল কিছুতেই নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম। সংবিধান থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে নিয়মবহির্ভূত কাজ করছে ।অবশ্য ব্রিটিশরা আমাদের আইন করে এসকল নিয়ম ভঙ্গের অনেক কারণ শিখিয়েছে।স্বাধীনতার পর দেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোর চরিত্র এক মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভোটাররা যতদিন তাদের নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। আর তার জন্য নির্বাচন জনগণের হাতে দিতে হবে। কারণ আমরা নির্বাচনের চরিত্র নষ্ট করে ফেলেছি।নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে অবশ্যই ভোটারদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। যতদিন ভোটারদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা থাকবে ততদিন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ প্রশাসন মনে করে খেলাটা তাদের, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মনে করে খেলাটা তাদের, রাজনীতিবিদরা মনে করে খেলাটা তাদের। আর ভোটাররা শুধু উপলক্ষ।সাবেক এই বিচারপতি বলেন, দেশের এই সংকটের মূল কারণই হলো নিয়মের বাইরে বিভিন্ন কার্যক্রম। সংবিধান থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজেই এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।ব্রিটিশরা আমাদের আইন করে নিয়ম ভঙ্গের অনেক কিছুই শিখিয়েছে।
প্রশাসনের হাতের ক্ষমতা থাকায় নির্বাচনে অনেক অনিয়ম শুরু থেকেই হয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ৫০ বছরে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোর চরিত্র এক। শুধু মাঠে সবার সঙ্গে প্রশাসন এক নয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভোটের অধিকার পকেটে ভরে জনগণের অধিকার হরণ করেন।ফলে ভোটাররা ভোট পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করতে পারে না। এতে নির্বাচনও সুষ্ঠু হয় না। তাই এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।আব্দুর রউফ বলেন, সবাই এখন বাটপার হয়ে গেছে। তা না হলে কি টিএসসিতে এমন ঘটনা ঘটে? প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৫০০ কোটি টাকা হুন্ডিতে বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারও হিসাব নেই। তবে এই প্রশাসনকে কিন্তু আমরাই নষ্ট করে ফেলেছি।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওএসডি করার পদ্ধতিকে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকলে নিজের মতো করে প্রশাসন সাজাতে আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই।পছন্দ মতো না হলে ওএসডি করে ঘরে বসিয়ে বেতন ভাতা দেই।যারা নির্বাচন করে তারা হলো টাকার কাঙ্গাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল ছাড়া পৃথিবীতে গণতন্ত্রের চর্চা আসেনি। কাজেই দল লাগবে। তবে দলের মধ্য যে ভূত প্রবেশ করেছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণের কাছে শক্তি দিতে হবে।শুধু টাকা বিনিয়োগ করে টাকা তোলার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।এসময় তিনি একদিনে সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার পাশাপাশি নির্বাচনের বিভিন্ন পদ্ধতিও নিয়ে আলোচনা করেন।আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু দাবি তুলে ধরেন।তিনি বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, প্রার্থীর নিরাপত্তা, হয়রানিমুক্ত সমান প্রচার প্রচারণার সুযোগ, কালো টাকা ও পেশি শক্তি, নির্বাচনের আগের রাত যেন চাঁদরাতে পরিণত না হয়, দলবাজ রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরকেবাদ দেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।এছাড়াওআলোচনায় অংশনেন আইনজীবী,রাজনীতিবিদসহ অনেকেই।