দৈনিকবার্তা- শেরপুর, ১২ এপ্রিল: ফাঁসি কার্যকরের পর আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানের মৃতদেহ শেরপুরে তার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ভোর ৫টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির পর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার রাত ১১টার দিকে কামারুজ্জামানের মরদেহ তার পরিবারের প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ি বহর মধ্যরাতে শেরপুরে তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছায়। নাশকতার আশঙ্কায় রাতেই রেড এলার্ট জারি করা হয় কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি বাজিতখিলার কুমড়ি মুদিপাড়ায়। এর আগে ভোর সাড়ে ৪টায় কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরের বাজিতখিলায় পৌঁছায়। রাত ৪টা ৪০ মিনিটে কামারুজ্জামানের মরদেহ তার পরিবার পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার বড় ভাই কফিলউদ্দিন মরদেহ গ্রহণ করেন।আইন-শৃংখলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কামারুজ্জামানের আত্মীয়-স্বজনসহ মোট ১৪টি গাড়ি ঢাকা থেকে শেরপুর জেলা শহর হয়ে বাজিতখিলা বাজারে পৌঁছায়। পরে সেখানে মিডিয়া কর্মীদের থামিয়ে দিয়ে লাশের গাড়ি চলে যায় এক কিলোমিটার দূরে মুদিপাড়া বাজিতখিলা এতিমখানার সামনে। এ সময় কোনো মিডিয়া কর্মীদের ওই গ্রামের ঢুকতে দেয়া হয়নি।
তবে কামারুজ্জামানের পারিবারিক সূত্র জানায়, ভোর রাত ৪টা ৫০ মিনিটে মাদরাসা প্রাঙ্গণে ফজরের আযানের আগেই কেবলমাত্র কামারুজ্জামানের আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে জানাজা পড়ানো হয়। জানাজায় ইমামতি করেন কামারুজ্জামানের বোনের মেয়ের জামাই এবং ওই মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ। জানাজায় প্রায় ৫০ জন আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। এরপর ভোর ৫টায় ওই এতিমখানার সামনে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে মাদরাসা প্রাঙ্গনে ফজরের আযানের আগেই কেবলমাত্র কামারুজ্জামানের স্বজনদের উপস্থিতিতেই তার নামাজে জানাজা পড়ানো হয়। পরে ভোর ৫টায় তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নে এই জামায়াত নেতার দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল আগেই। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তার ভাই কফিল উদ্দিন কবর খুঁড়ে রেখেছিলেন।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ফাঁসিতে ঝোলানোর পর ময়নাতদন্তসহ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সেরে এক ঘণ্টা পর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বের হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক দিয়ে।লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি র্যাব-পুলিশের নয়টি গাড়ির পাহারায় সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় শেরপুরে। লাশের অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আখেরুল ইসলাম রাসেলও শেরপুরে যান।বহরের প্রথমে ছিল র্যাবের একটি গাড়ি। এরপর পুলিশের কয়েকটি গাড়ির পর ছিল দুটি অ্যাম্বুলেন্স। এরপর পুলিশের আরও আরেকটি গাড়ির শেষেও ছিল র্যাবের একটি গাড়ি।স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের সাংবাদিক কলোনিতে থাকতেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান। তারা কেউ শেরপুরে যাননি।
তার পৈত্রিক বাড়িতে থাকেন ভাইয়েরা। কামারুজ্জামানের বড় ভাই কফিল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বাজিতখিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশে দাফনের ইচ্ছা জানিয়েছিলেন তার ভাই।মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর রাত সাড়ে ১০টায় কুমরি বাজিতখিলা মাদ্রাসার পাশে জমিতে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয় বলে সদর থানার ওসি মাজহারুল করিম জানিয়েছিলেন।এর আগে সন্ধ্যা থেকে ওই এলাকায় কেবল টেলিভিশনের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশের অবস্থানও ছিল। ভোররাত সোয়া ৪টায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে কামারুজ্জামানের পৈত্রিক বাড়িতে। সেখানে ভাই কফিল উদ্দিন লাশ গ্রহণ করেন।তবে জেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাজিতখিলায় যাওয়ার পথে এক কিলোমিটার আগেই সাংবাদিকদের আটকে দেওয়া হয়। তখন সেখানে বৃষ্টি হচ্ছিল।পারিবারিক উদ্যোগে কুমরি মাদ্রাসা ও এতিমখানা মাদ্রাসা মাঠে জানাজা হয়, যাতে অর্ধ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। এরপর ভোর সোয়া ৫টার দিকে কামারুজ্জামানকে দাফন করা হয় বলে ওসি মাজহারুল জানান।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে বুধবার বিকাল থেকে বাজিতখিলার ওই জমিতে কবরের কাজ চলছিল। দাফনের পর কবর বাঁধানোর জন্য ইট ও বালুও এনে রাখা হয়।এই জমিতেই দাফন করা হয়েছে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকেএই জমিতেই দাফন করা হয়েছে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকেকফিল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে কামারুজ্জামানের লাশ হস্তান্তর এবং জানাজার নামাজ ও কবর দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অনুমতি নেন তারা।এই যুদ্ধাপরাধীকে কবরের জায়গা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা, যার মধ্যে কামারুজ্জামানের স্ত্রীর এক ভাইও ছিলেন।তবে পরে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনার পর তারা কামারুজ্জামানের দাফন প্রতিরোধের ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
একাত্তরে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলবদর বাহিনীর প্রধান কামারুজ্জামানকে যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে শতাধিক মানুষকে হত্যা।একাত্তরে ওই গণহত্যার পর সোহাগপুরের অধিকাংশ নারীকে অকালে বৈধব্য নিতে হওয়ায় গ্রামটি বিধবাপল্লী হিসেবে পরিচিতি পায়।কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিলের রায় দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ আদালত একাত্তরে এই জামায়াত নেতার ভূমিকাকে জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করে।তবে তার ভাই কফিল উদ্দিনের দাবি, রাজনৈতিক কারণে কামারুজ্জামানকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে।এদিকে কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের আগে থেকে শেরপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।র্যাবের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য শেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় টহলে ছিল।শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকায় জামায়াত কার্যালয়টি ছিল বন্ধ।