দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ১১ এপ্রিল: বিএনপিচেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করেছেন অভিযোগ করে তিনি রাস্তায় নামলেই এর কারণ জিজ্ঞাসা করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বেগম জিয়ার বিবেক জঙ্গিদের কাছে বন্দি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ফ্লাইওভার উদ্বোধন শেষে স্থানীয় পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই শেষ হওয়া এ ফ্লাইওভারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা বলেন, আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হবে। সম্প্রতি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে আরও ৬০টি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।৫টা ১০ মিনিট থেকে শুরু করে ৫টা ৩৬ মিনিটে শেষ করা বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের অতীতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে হাতে নেওয়া কর্মসূচি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে নাশকতারও কড়া সমালোচনা করেন।
শনিবার বিকেলে গাজীপুরের মাওনায় এক সুধী সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাই, মানুষ মারার অধিকার কে তাকে দিয়েছে? তিনি রাস্তায় নামলেই জানতে চাইবেন, মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন কেন?মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে খালেদা জিয়া বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। ফেব্র“য়ারির শুরু থেকে দুই মাস ধরে অবরোধের পাশাপাশি কর্মদিবসগুলোতে হরতালও দিয়েছে তারা।অবরোধের প্রথম দিকে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমা বিস্ফোরণসহ নাশকতার নানা ঘটনায় অন্তত ১৩০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, তারা যে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন আগে তার জবাবদিহি করতে হবে। তার (খালেদা) এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই, জনগণের সামনে দাঁড়ানোর অধিকার নেই।আগামী জুলাই মাসেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে আরও ৬০টি সেতু (ব্রিজ) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা যে ফ্লাইওভারটির উদ্বোধন করলাম তা এ অঞ্চলের যানজট নিরসনে প্রধান ভূমিকা রাখবে। গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। আমরা যেন এই সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করতে পারি সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এই প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজই শেষ হয়ে গেছে, জুলাইয়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। তখনই বড় বড় রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণ শুরু করি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতির কারণে যারা আমাদের অর্থ দিতো তারা অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর আমরা ২০১৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে আবারও ক্ষমতায় আসি। এর মধ্যে আমরা অনেক কাজ করেছি। বিভিন্ন আকারের সেতু নির্মাণ করেছি। ঢাকার যানজট নিরসনেও আমরা অনেক কাজ করেছি।রাজধানীর মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের কাজও খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা সেতু, আড়িয়াল খাঁ সেতুসহ আরও তিনটি সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়ক ৮ লেন করা হচ্ছে। রেল মন্ত্রণালয়কে আলাদা করেছি। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর রেল যোগাযোগ স্থাপন করেছি আমরা। পশ্চিমাঞ্চলে আরও ৬০টি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। সড়ক মেরামত করার জন্য জেলাভিত্তিক ১০টি কমিটি করেছি। বিআরটিসিতে ৯৯৮টি বাস সংযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা চট্টগ্রামে আধুনিক ট্যাক্সি চালু করা হয়েছে।
পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংক প্রথমে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, নিজেদের অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ করবো। এখন আমরা আমাদের ঘোষণা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এ কারণে মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়ে গেছে। গড় বয়স ৬৬ বছর থেকে ৭০ বছর হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গিবাদী আন্দোলনে সমর্থন না দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আগুনে পুড়ে মানুষ মেরেছে, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মেরেছে, তারা মোমবাতির আগুনে আঙ্গুল রেখে একবার দেখুক কেমন যন্ত্রণা। বাসে আগুন, সিএনজিতে আগুন, রেলে আগুন, বগিতে আগুন। এই সব যানবাহনে কারা চলে? সাধারণ মানুষ চলে। তারা সাধারণ মানুষ পোড়ানোর আন্দোলন করেছে।মানুষ মারার রাজনীতি জনগণের জন্য নয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরে হানাদার বাহিনী বস্তিতে আগুন দিয়েছে, ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। সেই একই কায়দায় মানুষ হত্যা ও পুড়িয়ে মারার চেয়ে গুনাহের কাজ আর কিছু হতে পারে না। যার কাছে মানুষের প্রতি ভালবাসা আছে তিনি এ কাজ করতে পারেন না।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী গুলশানে ছিলেন। নিজেই নিজের অফিসে তালাবদ্ধ ছিলেন। একটি বাড়ির ভেতরে ৬৫ জন মানুষ নিয়ে ছিলেন। ৯২ দিন মানুষ পোড়ালেন। বাবার সামনে ছেলে, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। খালেদা জিয়া কেন মানুষ পুড়িয়ে মারলেন। আল্লাহ বলেছেন, মৃত্যুর পরে গুনাহগারকে দোজখের আগুনে পুড়িয়ে মারবেন। কিন্তু খালেদা জিয়া জীবিত মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন।মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি করা বিএনপিকে রক্ষায় অনেক অশিক্ষিত মাঠে ে নেমেছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।