Kamaruzzaman-Verdict

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ এপ্রিল: ফাঁসি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকেছেন। শনিবার সন্ধ্যার কিছু পরে তাঁরা প্রধান ফটক দিয়ে কারাগারে ঢোকেন।মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি আজ শনিবার কার্যকর করা হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রাণভিক্ষার জন্য তিনি কোনো আবেদন করবেন না বলে জানানোর পর শুক্রবার তাঁর ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে কাল রাতে সব প্রস্তুতির পরও রায় কার্যকর করা হয়নি।

ফাঁসি-সংশ্লিষ্ট যে কর্মকর্তারা কারাগারের ভেতরে ঢুকেছেন তাঁরা হলেন আইজি প্রিজন ইফতেখার উদ্দিন, এডিশনাল আইজি প্রিজন কবির হোসেন ও ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার। জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী আগে থেকেই কারাগারের ভেতরে আছেন বলে জানা গেছে।এদিকে সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁর স্বজনেরা। বিকেল চারটার সময় দেখা করতে যান তাঁরা। সোয়া এক ঘণ্টা পর তাঁরা বের হয়ে আসেন।বারবার ফাঁসির আয়োজন করেও পিছিয়ে যাওয়ার সরকারের নাটক বলে দাবি করেছেন একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল।শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় কারাগারের বাবার সঙ্গে শেষ দেখা করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।সাংবাদিকরা কামারুজ্জামানের প্রাণভিক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,রাষ্ট্রপতি প্রাণ ভিক্ষা দেয়ার কে? প্রাণ ভিক্ষা চাইবো আল্লাহর কাছে। ফাঁসি কার্যকর না করে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কালক্ষেপণ করেছে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া গতকাল শুক্রবার দুই জন ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে গেলেও তারা তার বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি এবং এ ব্যাপারে তাকে কিছুই বলা হয়নি বলে জানান হাসান ইকবাল। সরকার মিথ্যা খবর প্রচার করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।বাবাকে কেমন দেখে এসেছেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বাবাকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছি। তার মনোবল দৃঢ় আছে। তিনি সুস্থ আছেন। ফাঁসি তিনি মোটেও বিচলিত নন।
কামারুজ্জামানের শেষ ইচ্ছা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসান ইকবাল বলেন, তিনি বলেছেন, আমি বাংলাদেশে ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। এখন তরুণ প্রজন্ম এ আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারাই এ অন্যায়ের জবাব দেবে। বাবা আমাদের সৎ পথে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। ৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করতে প্রস্তত রয়েছেন জল্লাদ রানার নেতৃত্বে ৪ জন। জল্লাদ রানা এর আগে জামায়াতের আরেক শীর্ষ নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সময় সহকারী জল্লাদের ভূমিকা পালন করেছেন।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে শনিবার বিকেলেই পরিবারের সদস্যরা শেষ বারের মতো কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮ নং কনডেম সেলে কামারুজ্জামানের সঙ্গে তাদের দেখা হয়।।কারা সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের সঙ্গে শেষ দেখা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার স্ত্রী নুরুন্নাহার। তাকে সান্ত্বনা দেন কামারুজ্জামান নিজেই। প্রায় এক ঘণ্টা পরিবারের সদস্যরা সেখানে অবস্থান করে।কামারুজ্জামান তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার জন্য দোয়া করতে বলেছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।শুক্রবার প্রাণভিক্ষার জন্য কামারুজ্জামান কোনো আবেদন করবেন না বলে জানানোর পর তাঁর ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে শুক্রবার রাতে সব প্রস্তুতির পরও রায় কার্যকর করা হয়নি। শনিবার ফাঁসি কার্যকরের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রাতের যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে এমনটাই বিভিন্ন সূত্রের দাবি।

এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছায়। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে রায় পড়ে শোনায়। এরপর তাঁর কাছে জানতে চায়, তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না। কামারুজ্জামান এ ব্যাপারে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।শনিবার রাত ১০টার পরে যে কোনও সময়ে কার্যকর করা হবে কামারুজ্জামানের ফাঁসি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পুরোই প্রস্তুত।সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে রাত ১০টার পর যেকোনও সময়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসি। সূত্রগুলো জানায়, ফাঁসির পর কামারুজ্জামানের মরদেহ শেরপুর পাঠানো হবে। একটি দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে মরদেহ নিয়ে যাওয়া আর রাতের আঁধার থাকতেই কবর দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করতে হবে বলেই মধ্যরাতের আগেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আপিল করা হলে তাও খারিজ হয়ে যায়। গত ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই রায় দেওয়ার পর থেকেই কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে যৌক্তিক সময় চেয়ে চার দিন কাটিয়ে দেন এই জামায়াত নেতা। পরে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) তার কাছে আবারও শেষ সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। এ সময়ই সিদ্ধান্ত জানতে যাওয়া দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়, কামারুজ্জামান ক্ষমা চাইছেন না।তারই ভিত্তিতে এগিয়ে চলে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া। শনিবার সকালেই উদ্যোগ নেওয়া হয় নির্বাহী আদেশ তৈরির। নির্বাহী আদেশের ফাইল প্রস্তুত করে তা পাঠানো হয় রাজধানী মনিপুরীপাড়ায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে। সেখানে তিনি আদেশের ফাইলে স্বাক্ষর করলে দুপুরে তা চলে যায় কেন্দ্রীয় কারাগারে।সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ আদেশের ভিত্তিতে চলছে ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া।