দৈনিকবার্তা- গাজীপুর, ১১ এপ্রিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা কোন ধরণের রাজনীতি। খালেদা জিয়া ৯২ দিনে ১৫০ জন সাধারণ নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারল। এ মানুষ গুলোর কি অপরাধ ছিল? তাকে মানুষ পুড়িয়ে মারার অধিকার কে দিয়েছে? জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা এত বড় গুনাহ আর কি হতে পারে। ১৯৭১ সালে পাক হানার বাহিনী নিরীহ মানুষকে যে ভাবে হত্যা করেছিল বিএনপি নেত্রী ৯২ দিন হরতাল-অবরোধের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। রাস্তায় যানবাহন ভাংচুর ও পেট্রল বোমা মেরে জ্বালিয়ে দেয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই বেগম খালেদা জিয়া যখন রাস্তায় আসবেন তখন যেন মানুষ তার কাছে জানতে চায় তিনি কেন মানুষ পুড়িয়ে মারলেন। মানুষকে পুড়িয়ে মারার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? মানুষ পুড়িয়ে একেকটা পরিবারকে তারা ধংস করেছে, পরিবারের উপার্জনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে, স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে।
তিনি শনিবার বিকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর নব নির্মিত গাজীপুরের শ্রীপুরে ‘মাওনা ফ্লাইওভার’ উদ্বোধন শেষে মাওনা পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে স্থানীয় শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।প্রধান মন্ত্রী সূধী সমাবেশে বলেন, মাওনা ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় আজ আরও একটি মাইল ফলক যোগ হল। বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাথে রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যানজটমুক্ত ও নিরাপদ করার জন্য জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার কাজ আমরা শুরু করি ২০১০ সালে। এর মধ্যে জয়দেপুর চৌরাস্তা হতে নয়নপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওযার্কস অর্গানাইজেশন বাস্তবায়ন করেছে। বাকী অংশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বাস্তাবায়ন করছে। প্রকল্পটি মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে এই মহাসড়কের ২৭তম কিলোমিটারে মাওনা ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯ মিটার প্রশস্ত এই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। শ্রীপুর-কালিয়াকৈর উপজেলা সংযোগকারী আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংযোগস্থল মাওনা। এখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফ্লাইওভারটি নির্মাণের ফলে এখ থেকে এর উপর দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী যানবাহন এবং নীচ দিয়ে মাওনা-শ্রীপুরের যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বাস্তাবায়িত উল্লেখযোগ্য সেতু প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: কেরাণীগঞ্জে শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, শীতলক্ষ্যা নদীর উপর সুলতানা কামাল সেতু, চট্টগ্রাম কর্ণফুলি নদীর উপর হযরত শাহ আমানত (রহঃ) সেতু, ঢাকা- বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে কীর্তনখোলা নদীর উপর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ (দপদপিয়া) সেতু, চট্টগ্রামে ১,৪২০ মিটার বন্দর-সংযোগ উড়াল সেতু, সাঙ্গু নদীর উপর ২১৭.১৫ মিটার রুমা সেতু এবং ২১৬.৪৪ মিটার থানচি সেতু এবং রংপুরে তিস্তা নদীর উপর ৭৫০ মিটার তিস্তা সেতু। এছাড়া, রংপুরে করতোয়া নদীর উপর ৩০৩.৩২ মিটার ওয়াজেদ মিয়া সেতু, কক্সবাজারে ৩৪৭.৪৬ মিটার চৌফলদন্ডী সেতু এবং সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়ায় করতোয়া নদীর উপর ৩৪৭.২৯৫ মিটার সোনাতলা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকায় যানজট নিরসনের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। যেমন- ৮০৪ মিটার দীর্ঘ বনানী রেলওয়ে ওভারপাস, মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোডে ১,৭৯৩ মিটার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার , কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সেতু আমরা নির্মাণ করেছি। মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের কাজ চলছে শীঘ্রই শেষ হবে। আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগারপুর-টাঙ্গাইল সড়ক উন্নয়ন, পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন এবং শেখ লুৎফর রহমান সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সারাদেশে উল্লেখযোগ্য যেসব সেতু ও রাস্তার কাজ চলছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কে আন্দামানিক নদীর উপর শহীদ শেখ কামাল সেতু, পিরোজপুরে বলেশ্বর নদীর উপর ৩৮৭.৩১ মিটার দীর্ঘ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি সেুত, হাজীপুরে শহীদ শেখ জামাল সেতু ও খেপুপাড়ায় ভাঙ্গ নদীর উপর শহীদ শেখ রাসেল সেতু। এছাড়া সিলেটে সুরমা নদীর উপর কাজিরবাজার সেতু, বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাড়কে পায়রা নদীর উপর ১৪৭০ মিটার পায়রা সেতু(লেবুখালী সেতু), মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কাজিরটেকে আড়িয়ালখাঁ নদীর উপর ৬৯৪.৩৬ মিটার আছমত আলী খান সেতুসহ আরও ৩টি সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে। যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর সড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ সহ হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেপিড ট্রানজিট নির্মাণ করা হচ্ছে। জয়দেপুর হতে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করা কাজ চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ৪-লেন বিশিষ্ট দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু এবং দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণ কাজও চলছে। নারায়নগঞ্জে ১,২৯০ মিটা দীর্ঘ তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, ঢাকা রেপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-এর আওতায় ২০.১ কিলোমিটার এলিভেটেড এমআরটি লাইন-৬ নির্মানের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ওয়েষ্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় বাংলাদেশে পশ্চিমাঞ্চলের ৬০টি সেতু নির্মাণ, আরিচা-ঘিওর-টাঙ্গাইল সড়কের ধলেশ্বরী নদীর উপর ৫১৫.১২দীর্ঘ এলাসিন সেতু নির্মাণ, ১৬কিলোমিটার দীর্ঘ নবীনগর-ডি.ই.পি.জেড-চন্দ্রা মহাসড়ক ৪লেনে উন্নীত করণ প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে।শেখ হাসিনা বলেন, গত বছরের বিআরটিসি বাস বহরে ৩৮০টি নন এসি একতলা বাস, ২৩৮টি এক তলা এসি বাস, ২৯০টি দ্বিতল, ৫০টি আর্টিকুলেট্রেড বাসসহ মোট ৯৫৮টি বাস সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও ৩০০টি দ্বিতল, ১০০টি আর্টকুলেট্রেড বাস এবং ৫০০টি ট্রাক সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আধুনিক ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস চালু করা হয়েছে।প্রধান মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে আমরা যে আজ পরনির্ভশীল নই তা প্রমাণ করতে যাচ্ছি। পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের জন্য। কারন পদ্মা সেতু নিয়ে দূর্নীতির একটা অভিযোগ তোলা হয়ে ছিল বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে। একারনে বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল, বিশ্ব ব্যাংকের সহায়থা না পেলে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এ পদ্মা সেতুর নির্মাাণ কাজ করবো। আল্লাহ্র রহমতে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। ইনাশাল্লাহ্, ২০১৮সালের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের কোন পরিকল্পনা গ্রহন করেনি। সময়মত পরিকল্পনা গ্রহন করলে মানুষকে আজ ভোগান্তির শিকার হতে হতো না। একটা প্রকল্প গ্রহন করে তা বাস্তবায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন, ইনশাল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আর যানজট থাকবে না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে প্রতিবছরই বাজেটের আকার বেড়েছে। এবারো প্রায় ৩গুণ বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২লাখ পঞ্চাশ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। আমাদের রিজার্ভ ২৩ বিলিয়নের ওপর আমরা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। রেমিট্যান্স ১৪ বিলিয়নের ওপর বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিদারিদ্র্যের হার কমে ৯শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের আয় বেড়েছে। রেমিটেন্স আয় ৪.৮০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৪.২৩বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। আমরা প্রথম বারের মতো বিদেশে চাল রপ্তানি শুরু করেছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বৈদেশিক ঋণের স্থিতি জিডিপি’র ২৭.৬শতাংশ হতে ১৪.৬শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ আজ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া ৫টি দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে ৫হাজার ২শ ৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আজ বাংলাদেশ ঠিক সে সময় বিএনপি জামায়াত দেশের সম্পদ ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত রয়েছে তারা আন্দোলনের নামে গত ৩মাস ধরে সাধারণ মানুষের উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। পেট্টোল বোমা দিয়ে শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, ওরা দেশ ও দেশের মানুষকে চায় না, ওরা চায় ক্ষমতা, ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু জনগন তাদের প্রত্যাখান করেছে। কারণ জনগণ চাই উন্নয়ন ও শান্তি। আমি দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ঘোষনা করতে চাই জনগণের ভাগ্য নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। জন বিরোধী কোন কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না। গঠনমূলক রাজনীতি করুন, মানুষ যদি আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায়, তাহলে অবশ্যই আপনার ক্ষমতায় যাবেন। কিন্তু, মানুষ না চাইলে ষড়যন্ত্র, সহিংসতা করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে দেশে উন্নতি হয়। দৃশ্যমান উন্নতি বলতে যাকিছু আওয়ামীলীগই করে। কারণ আওয়ামীলীগ করে মনের টানে। দেশের মানুষের উন্নতি হউক সেটাই আমরা চাই। আমরা বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। প্রাথমিক থেকে এসএসসি পর্যন্ত লেখা পড়ার মান উন্নতি করছি। শিক্ষার নীতিমালা আমরা দিয়েছি। স্বাস্থ্যনীতিমালা দিয়েছি। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা জনগনের দোড়গোড়ায় পৌছে দিচ্ছি। আমরা দারিদ্র বিমোচনের জন্য বহুমূখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বয়স্ক বিধবা ও প্রতিবন্ধিদের ভাতার ব্যাবস্থা করে যাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছি। দারিদ্র বিমোচনের জন্য ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। কিন্তু অত্যান্ত দূঃখের বিষয়,২০০১ এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে মৃত প্রায় করে দিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ আবার শুরু করেছি। আজকে দারিদ্র বিমোচনে এটা বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুদ আর লোন এর মধ্যেই দরিদ্র মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প হাতে নিলাম। বর্তমানে আমরা একটি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দিয়েছি। আর এ কারণেই যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদী না থাকে। উৎপাদনমুখী এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্গা চাষীদের বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া শুরু করেছি। বিনা জামানতে একজন যুবক ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে। আমাদের ঘোষণা হলো এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবেনা। যার যেটুকু জমি আছে অথবা খানাখন্দ আছে , সেগুলো উৎপাদন মূখি করতে হবে। উৎপাদিত পণ্য আমরা সমবায়ের মাধ্যমে বিক্রি করার ব্যাবস্থা নিচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে, এ উৎপাদিত পণ্যকে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে পরিনত কওে প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করা। এভাবেই আমরা আমাদের গ্রামের অর্থনীতিকে আরো উন্নত করে গড়ে তুলতে চাই। আমরা সে পদক্ষেপই নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দেশের অনেক শিক্ষিতজন খালেদা জিয়াকে উদ্ধার করতে নেমেছেন। তাদের বুদ্ধি বিবেক নাই। তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ নেই। যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ আছে তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকতে পারেন না। তারা বুদ্ধি-বিবেক হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, বিএনপি জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করেছে। বাংলার মাটিতে কোন জঙ্গীবাদীদের স্থান হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া তিন মাস ধরে আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে তিনি আদালতে হাজির হয়েছেন। তিনি আইন মানেন না, বিচার মানেন না, কোর্টের রায় মানেন না। তিনি ৬৭ দিনের মধ্যে মাত্র ৭ দিন আদালতে গিয়েছেন। তিনি আদালতে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে যান। তিনি আদালতে বিচারককে ভয় দেখাতে চান। তিনি এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন।
সুধী সমাবেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপির ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা জামিল হাসান দূর্জয়, হারিজ উদ্দিন আহমেদ, সামসুল আলম প্রধান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল, এসএম আকবর আলী চৌধুরী, আবু আক্তার খান ভুলু, আমির হামযা, মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, রফিকুল ইসলাম মন্ডল, শেখ নজরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ওসমান গণি, কৃষকলীগ নেতা কবির হোসেন প্রমুখ। এসময় মঞ্চে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সাবেক এমপি আখতার উজ জামান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিকাল সোয়া চারটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর নব নির্মিত মাওনা ফ্লাইওভার উদ্বোধন এবং ফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী মাওনা ফ্লাইওভারে এসে পোঁছলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেলক হক এমপি, সেনাবাহিনী ও সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ তাকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী মাওনা পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে এক সুধী সমাবেশ যোগদেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর, নিরাপদ যানজটমুক্ত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পে জয়দেবপুর হতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মোড় পর্যন্ত ৮৭.১৮ কিলোটারের মধ্যে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হতে নয়নপুর পর্যন্ত ৩০.২৫ কিলোমিটার ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-পশ্চিমের নিয়ন্ত্রাধীন ১৭ ইসিবি কর্তৃক বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই প্রকল্পের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার অবস্থানে ‘মাওনা ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর নির্মাণ শুরু হয় এবং নিদিষ্ট সময়ের প্রায় ৩ মাস আগে ৭এপ্রিল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা হয়েছে। নবনির্মিত মূলফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪০০ মিটার, র্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ মিটার। ৪ লেন বিশিষ্ট এই ফ্লাইওভারটির সর্বমোট নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৭০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফ্লাইওভারে দু’টি র্যাম্প রয়েছে। র্যাম্পের দৈর্ঘ্য প্রতিপার্শ্বে ২২৫ মিটার। এছাড়াও ফ্লাইওভারে ১৫টি স্প্যান, ১৯টি স্প্যানের গার্ডার, ১৪টি পিয়ার, ২টি এ্যাবাটমেন্ট ও ১৬৮টি পাইল রয়েছে। এর প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার। ফ্লাইওভারের ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৫ দশমিক ৯০ মিটার। এই ফ্লাইওভারটির শ্রীপুর কালিয়াকৈর সংযোগকারী আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংযোগস্থল মাওনার যানজট সমস্যার নিরসন হবে। পাশাপাশি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার ও দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। ফ্লাইওভারটি চালু হলে মাওনা এলাকার যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে এবং সামগ্রিকভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজতর, দ্রুত ও নিরাপদ হবে। ফ্লাইওভারটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ জেলাসমূহ, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা সদর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর এলাকার সাথে সংযোগ রক্ষা করবে।