দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ১০ এপ্রিল: স্মরণকালের ভয়াবহ ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’ পরবর্তী ‘লেবার ল’ এবং ‘ফেক্টরি কন্ডিশন’ উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হওয়ায় আপাততঃ সন্তুষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা সহ গার্মেন্টস ফেক্টরিগুলোতে সকল প্রকার নিরাপত্তা আরো নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে উন্নতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে আরো অগ্রসরমান দেখতে চায় ইইউ, এমনটাই জানিয়েছেন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় সদর দফতরে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান। ৯ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছিলেন তিনি।
বেলজিয়ামের রাজধানীতে ২০০৯ থেকে টানা ৬ বছর কর্মরত আছেন পূর্ণ সচিব মর্যাদার সিনিয়র কূটনীতিক ইসমাত জাহান। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে বারবার বুঝিয়েছি যে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ কর্মস্থলের পরিবেশ এবং তাদের সব ধরনের ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ প্রায়োরিটির ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে”। রাষ্ট্রদূত জানান, “বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ গত বছরের শেষান্তে পর্যালোচনা করে দেখা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে এবং আমাদের সরকারের আন্তরিকতার কারণে এই রিভিউর ফলাফলটি ছিল বাংলাদেশের শতভাগ অনুকুলে”।
রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান বলেন, “স্বল্পন্নোত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে রফতানির ক্ষেত্রে ইইউ’র বিশেষ কর্মসূচী Everything but Arms (EBA)-এর আওতায় ডিউটি-ফ্রি এবং কোটা-ফ্রি যে সুবিধা ভোগ করে আসছিল, তা যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে আমরা সদা তৎপর ছিলাম”। তিনি আরো জানান, “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার এই সময়টিতে গত দুই বছরে ইইউ কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত EBA সুবিধা হারাবার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ছিলাম আমরা”। ‘লেবার ল’ এবং ‘ফেক্টরি কন্ডিশন’ ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি BGMEA তারাও এক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে বলে জানান ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট ইসমাত জাহান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’র দুই বছর পূর্তি হচ্ছে আসছে ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সালের এই দিনে বাংলাদেশের রাজধানীর অদূরে সাভারে ভবন ধ্বসে নিহত হয়েছিলেন ১,১৩৫ জন পোশাক শ্রমিক। গুরুতর আহত হন এক হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে তৈরী হওয়া পোশাক আমদানীকারক বিশ্বের বহু দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয় তখন। পোশাক কারখানা সমূহের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফলে ইউরোপের বিশাল বাজারে হুমকির মুখে পড়ে বাংলাদেশের প্রধান রফতানী খাত তথা আরএমজি সেক্টর। আশার কথা, সংকট মোকাবেলায় সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে গৃহীত পদক্ষেপের সুফল হিসেবে এবং ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে কুল রক্ষা হয় বাংলাদেশের।