দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ১০ এপ্রিল: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, সড়কে জনদুর্ভোগ লাঘব করতে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ফ্লাইওভারের নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকালে এ সেতুটির উদ্বোধন করবেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে এটাই প্রথম উড়াল সেত ুযার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ ধরণের উড়াল সেতু আরো বিভিন্ন সড়কে নির্মান করা হবে।মন্ত্রী বলেন, সড়ক-মহাসড়ক আট লেন, বার লেন করে কোন লাভ নেই। কোন সমাধান হচ্ছে না। এজন্য পরিবর্তন করতে হবে আমাদের মানসিকতার। এখানে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো হচ্ছে না। এটা ঠিকমতো করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি শুক্রবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের মাওনায় নব নির্মিত ‘মাওনা ফ্লাইওভার’ পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (শনিবার) নবনির্মিত এ সেতুটি উদ্বোধন করবেন। পরিদর্শণের সময় মন্ত্রীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্যাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর আলম, সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলী মো: ফিরোজ ইকবাল, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খান, প্রকল্পের মহাপরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, প্রকল্প পরিচালক কর্ণেল ইফতেখার আনিস, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: হাফিজুর রহমান, গাজীপুর সড়ক ও জনপথে নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, আগামী জুনের মধ্যে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেন উন্নীত করণ প্রকল্পের চারটি প্যাকেজের মধ্যে সেনাবাহিনীরা দুইটির কাজ মে মাসে করবে এবং অন্য দুইটি প্যাকেজের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। আশা করি আগামী জুনের মধ্যে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেন উন্নীত করণ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। এ ছাড়াও জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চার লেন উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৫টি ফøাইওভার হবে। সেটির প্রসেসিং আন্ডারওয়ে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রজেক্টে আরো কয়েকটি ফ্লাইওভার করা হবে, টঙ্গী ব্রীজ হবে ৮ লেন বিশিষ্ট। জয়দেবপুর-চৌরাস্তায় ছিল চার লেন বিশিষ্ট, সেটা এখন বার লেন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোন সমাধান হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর,নিরাপদ যানজটমুক্ত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পে জয়দেবপুর হতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মোড় পর্যন্ত ৮৭.১৮ কিলোটারের মধ্যে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হতে নয়নপুর পর্যন্ত ৩০.২৫ কিলোমিটার ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-পশ্চিমের নিয়ন্ত্রাধীন ১৭ ইসিবি কর্তৃক বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই প্রকল্পের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার অবস্থানে ‘মাওনা ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর নির্মাণ শুরু হয় এবং নিদিষ্ট সময়ের ৩ মাস আগে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
তিটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা হয়েছে। নবনির্মিত মূলফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪০০ মিটার, র্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ মিটার। ৪ লেন বিশিষ্ট এই ফ্লাইওভারটির সর্বমোট নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৭০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফ্লাইওভারে দু’টি র্যাম্প রয়েছে। র্যাম্পের দৈর্ঘ্য প্রতিপার্শ্বে ২২৫ মিটার। এছাড়াও ফ্লাইওভারে ১৫টি স্প্যান, ১৯টি স্প্যানের গার্ডার, ১৪টি পিয়ার, ২টি এ্যাবাটমেন্ট ও ১৬৮টি পাইল রয়েছে। এর প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার। ফ্লাইওভারের ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৫ দশমিক ৯০ মিটার। এই ফ্লাইওভারটির শ্রীপুর কালিয়াকৈর সংযোগকারী আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংযোগস্থল মাওনার যানজট সমস্যার নিরসন হবে। পাশাপাশি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার ও দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। ফ্লাইওভারটি চালু হলে মাওনা এলাকার যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে এবং সামগ্রিকভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজতর, দ্রুত ও নিরাপদ হবে।