দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ১০ এপ্রিল: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না তা জানার জন্য কারাগারে গিয়েছিলেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের দুই জন ম্যাজিস্ট্রেট। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে তারা কারাগারে প্রবেশ করেন। বের হয়ে আসেন ১১ টা ৪০ মিনিটে। তবে কামারুজ্জামান তাদের কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কিছু বলেছেন কি না সে ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি।কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সে বিষয়ে তার মতামত জানতেই কারাগারে গেছেন দুই ম্যাজেস্ট্রেট। এ সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার ও সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী।
ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল ও তানভির মোহাম্মদ আজিম প্রায় ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট কামারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন।কারাগার থেকে বের হেয়ে আসার সময় সাংবাদিকরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কামারুজ্জামানের প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো জবাব না দিয়েই দ্রুত গাড়ি নিয়ে চলে যান।এর কিছুক্ষণ পর কারাফটকে সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীর কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য না করে চলে যান। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই জামায়াত নেতা প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তা প্রকাশ করেননি ম্যাজিস্ট্রেট ও কারা কর্মকর্তারামানবতাবিরোধী অপরাধেমৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষও মুখ খোলেনি।এক ঘণ্টার বেশি কারাগারে অবস্থানের পর বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে ম্যাজিস্ট্রেটরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কারা ফটকের সামনে আসেন কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (সিনিয়র জেল সুপার) ফরমান আলী।
কামারুজ্জামান ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে কী সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। নো কমেন্ট বলে উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।ম্যাজিস্ট্রেটরা কেন এসেছিলেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা সরকারি কাজে এসেছিলেন।তবে নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে এক কারা কর্মকর্তা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটরা কারাগারে ঢুকে প্রথমে কামারুজ্জামানের কাছে যান। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন তারা। পরে কারাগারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আধা ঘণ্টার বেশি কথা বলে বেরিয়ে যান।সকাল সোয়া ১০টার দিকে সাদা রঙের একটি গাড়ি নিয়ে কারাগারের সামনে আসেন দুজন।ম্যাজিস্ট্রেট কি না জানতে চাইলে উপস্থিত সাংবাদিকদের হ্যা বলেন তারা।ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-৬৪০২ নম্বরের ওই গাড়িতে চড়েই বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে কারাগার থেকে চলে যান দুজন।কারাগার পরিদর্শনকারীর তালিকায় ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল ও তানভীর আজিমের নাম লেখা আছে বলে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কামারুজ্জামানের সিদ্ধান্ত জানতে তার সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেখা করবেন বলে আগের দিন জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।তিনি বলেন,কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। অন্যথায় রায় দ্রুত কার্যকর করবে সরকার।বুধবার কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের রায় কারাগারে যাওয়ার পর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করার পর তার অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “তিনি রিজনেবল সময় নিয়ে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।…উনি ভাবনার সময় নিয়েছেন, চিন্তার সময় নিয়েছেন, কখন কারা কর্তৃপক্ষকে জানাবেন… কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত জানাবেন।
ফৌজদারী মামলায় ফাঁসির রায়ের আগে প্রাণভিক্ষার এই আনুষ্ঠানিকতার জন্য ৭ থেকে ২১ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না বলে আগেই জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।গত সোমবার রিভিউ খারিজের রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। আসামি কখন প্রাণভিক্ষা চাইবেন- সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বিধান নাই। এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন খারিজের রায়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে এর মানে এই নয় যে,৭ দিন বা ১৫ দিন সময় পাবে।জেল কর্তৃপক্ষ এটা তাকে (কামারুজ্জামানকে) জানাবে, জানানোর পর একটি সময় প্রদান করা। সেটা বিবেচনা করবে জেল কর্তৃপক্ষ।২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধ মামলার প্রথম আসামি হিসেবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে সে সময় কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে ময়মনসিংহের আল বদর কমান্ডার কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সেখানেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকে।সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য কামারুজ্জামানের আবেদন গত সোমবার খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।বুধবার দুপুরে রায়ে বিচারপতিদের সইয়ের পর তা কারাগারে পাঠানো হয়। কারা কর্তৃপক্ষ ওই রায় পড়ে শুনিয়ে প্রাণভিক্ষা করবেন কি না জানতে চাইলে কামারুজ্জামান আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় চান। এর আগে রিভিউ খারিজের দিনই কারা কর্তৃপক্ষের চিঠির প্রেক্ষিতে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন।