দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ এপ্রিল: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে ভাবার জন্য আরো সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কামারুজ্জামান ম্যাজিস্ট্রেটকে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি ভাববার জন্য আরো একটু সময় চেয়েছেন। সেটি তাকে দেয়া হয়েছে।তিনি আরো বলেন, সময় তাকে বেশি দেয়া হবে না। ম্যাজিস্ট্রেটরা তাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না- সে সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নিচ্ছেন যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শুক্রবার বলেন, কামারুজ্জামানকে মার্সি পিটিশনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। উনি সময় নিচ্ছেন। বলছেন- সিদ্ধান্ত দিচ্ছি, দেব।তবে এই যুদ্ধাপরাধীকে দ্রুত তার সিদ্ধান্ত জানাতে হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সে যাই বলুক, আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে শুক্রবার সকালে ঢাকা কেন্দ;্রীয় কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল ও তানভীর মোহাম্মদ আজিম।
এক ঘণ্টার বেশি কারাগারে অবস্থানের পর বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে ম্যাজিস্ট্রেটরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে তারা কোনো কথা বলেননি।ম্যাজিস্ট্রেটদের সাক্ষতের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও বিস্তারিত কিছু বলেননি। মুখ খোলেননি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (সিনিয়র জেল সুপার) ফরমান আলীও।
কারাগার থেকে ম্যাজিস্ট্রেটরা বেরিয়ে যাওয়ার পর কারা ফটকের সামনে আসেন ফরমান আলী। সাংবাদিকদের প্রশ্ন নো কমেন্টস বলে এড়িয়ে যান তিনি।তবে একজন কারা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটরা কারাগারে ঢুকে প্রথমে কামারুজ্জামানের কাছে যান। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন তারা। পরে কারাগারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আধা ঘণ্টার বেশি কথা বলে বেরিয়ে যান।প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কামারুজ্জামানের সিদ্ধান্ত জানতে তার সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেখা করবেন বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। সে সময় তিনি বলেছিলেন, সেটা তো আমাদের আজকেই জানাতে হবে, তিনি চান কি না।কিন্তু কামারুজ্জামানকে রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শুনিয়ে প্রাণভিক্ষা করবেন কি না জানতে চাওয়ার পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও উত্তর মেলেনি।
এর আগে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজের রায়ে আপিল বিভাগ বলেছিল, যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে আসামি সংবিধান অনুযায়ী প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন। তবে এ মামলায় প্রাণভিক্ষার জন্য কারাবিধিতে বেঁধে দেওয়া ৭ থেকে ২১ দিনের সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না। আসামি প্রাণভিক্ষা চাইলে তার নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।
কিন্তু আসামি প্রাণভিক্ষার জন্য কত সময় পাবেন এবং কতদিনের মধ্যে তার নিষ্পত্তি হবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া না থাকায় কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা তৈরি হয়।এর আগে কাদের মোল্লার ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলেও তিনি প্রাণভিক্ষার সুযোগ নেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রিভিউ খারিজের দিনই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের পর আইনে প্রাণভিক্ষার সময় নিয়ে ‘অস্পষ্টতার বিষয়টি তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ওই সুযোগ নেওয়ার জন্য কামারুজ্জামান যৌক্তিক সময় পাবেন।বৃহস্পতিবার কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এই জামায়াত নেতা প্রাণভিক্ষার বিষয়ে ভেবে দেখার সময় চেয়েছেন। এ জন্য তিনি ‘যৌক্তিক সময়ই নেবেন।সাংবাদিকরা এই যৌক্তিক সময় এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বৃহস্পতিবার বলেন, একটি‘মর্সি পিটিশন লিখতে যে সময় লাগে এক্ষেত্রে সেটাই যৌক্তিক সময়’ বলে তিনি মনে করেন।তবে আসামি প্রাণভিক্ষা করবেন জানিয়ে সাত দিন সময় চাইলে তা যৌক্তিক হবে না বলে মত দেন মাহবুবে আলম।