দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯ এপ্রিল: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে (রিজেনেবল টাইম) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সেই সঙ্গে প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না বলেও মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। রিজেনেবল টাইম বলতে কি বুঝায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদনপত্রের জন্য যতটুকু সময়ের প্রয়োজন সে সময়টা হলো রিজেনেবল টাইম।বৃহস্পতিবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের মোল্লার রায়ে প্রাণভিক্ষার জন্য সময়ের (রিজেনেবল) কথা উল্লেখ ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, রিজেনেবল সময়ের কথা রায়ে উল্ল্যেখ থাকতে হবে। এটাতো রায়ে বলার দরকার নেই।অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যদি কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চান তাহলে ওই আবেদনের জন্য যতটুকু সময়ের প্ররয়াজন তাকে ততটুকু সমেয় দিতে হবে। তাই বলে উনি (কামারুজ্জামান) যদি বলেন- মার্সি পিটিশন করবো, আমাকে সাতদিন সময় দিতে হবে। এটা প্রযোজ্য নয়।যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য যৌক্তিক সময়ের যে কথা বলা হচ্ছে- তা ‘সাত দিন হতে পারে না বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত সোমবার আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে দণ্ড কার্যকর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য অন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। আসামি কখন প্রাণভিক্ষা চাইবেন- সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। তবে এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন খারিজের রায়ে আপিল বিভাগ প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য যৌক্তিক সময়’ দিতে বলেছে বলে মাহবুবে আলম জানান। ওই রায় কারাগারে যাওয়ার পর বুধবার তা ফাঁসির আসামি কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি প্রাণভিক্ষা করবেন কি না জানতে চাইলে কামারুজ্জামান আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় চান।সে অনুযায়ী পাঁচ আইনজীবী বৃহস্পতিবার দুপুরের আগে কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন।
বেরিয়ে এসে তার অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না- কামারুজ্জামান তা ভেবে জানাবেন। আর এ জন্য তিনি ‘যৌক্তিক সময়’ নিতে চেয়েছেন। পরে শিশির মনিরের ওই বক্তব্যের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। এক্ষেত্রে কতোটা সময় যৌক্তিক হবে তা জানতে চান তারা। মাহবুবে আলম বলেন ,রিজনেবল সময় যা দরকার ততখানি, মার্সি পিটিশন লিখতে যতটা সময় প্রয়োজন হয় ততখানি।উনি যদি বলেন মার্সি পিটিশন করবেন, এ জন্য সাত দিন সময় দিতে হবে- এটা তো রিজনেবল হবে না। ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০ ধারার উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার বিবেচনায়, আমার অভিমত… সরকারের নির্দেশনায় এই দণ্ড কার্যকর করা হবে।
ফৌজদারী মামলায় ফাঁসির রায়ের আগে প্রাণভিক্ষার এই আনুষ্ঠানিকতার জন্য ৭ থেকে ২১ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না বলে আগেই জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
বৃহস্পতিবারও তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইন অন্য আইনের মতো না।… যেহেতু এই বিশেষ আইনের ভেতরেই উল্লেখ করা আছে, সরকারের নির্দেশে হবে। এবং এ কথাও আইনে বলা আছে, অন্য আইনে যাই বলা থাক না কেন এই আইনের বিধানই প্রাধন্য পাবে।এর আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও সাংবাদিকদের বলেন, কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তা তাকে বৃহস্পতিবারই জানাতে হবে। তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। তা না হলে দ্রুত দণ্ড কার্যকর করবে সরকার।একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে ময়মনসিংহের আল বদর কমান্ডার কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সেখানেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকে।সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেনার (রিভিউ) জন্য কামারুজ্জামানের আবেদন গত সোমবার খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।