দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ এপ্রিল: আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী ও এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সাত মেয়র প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম।বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবদুস সালামের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেওয়া হয়। তার পক্ষে এ আবেদন জমা দেন তার নির্বাচনী সমর্থক ও প্রস্তাবক সেলিম ও মুনির।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার নওয়াব উল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এরআগে এদিন সকালে ঢাকা দক্ষিণের আরও দুই মেয়রপ্রার্থী আবুল বাশার ও রিয়াজ উদ্দিন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।এছাড়া বুধবার ইমতিয়াজ আলম নামে আরও এক দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন।এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানালেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়িকা সারা বেগম কবরী। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সরে যাই- এটাই তিনি হয়তো ভালো মনে করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যলয়ে উপস্থিত হয়ে কবরী তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।এ সময় কবরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রজ্ঞা ও জ্ঞান থেকে আমাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন। তবে আমি অনেক শক্তিশালী প্রার্থী ছিলাম। অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক কিছুই দেখলাম।রাজনীতিতে ডিসিপ্লিনের দরকার হয়, এ ডিসিপ্লিন রক্ষার স্বার্থেই আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি বলেও মন্তব্য করেন সারা বেগম কবরী।
সরে যেতে দলের পক্ষ থেকে কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে কবরী বলেন, কোনো চাপ নয়, প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতি সম্মান দেখিয়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হকের পক্ষে কাজ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগেরই মানুষ। তিনি (আনিসুল হক) তো এ দলের কেউ নন। তিনি যখন মনোনয়ন কিনলেন তখন আমাকে একবার বলতেও তো পারতেন। তিনি তো কিছু জানান না। এখন তার হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তাব পেলে আমি কাজে নামবো। আমি দলের মানুষ। সুতরাং এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না রাখতে পেরে সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন এরশাদের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ। এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েই ববি এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টার পদটি হারিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর গ্যাটকো সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ববি হাজ্জাজ নিজেই বলেন কেন তিনি সড়ে দাঁড়ালেন এই নির্বাচন থেকে।ববির ভাষ্যে, নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা এবং নির্বাচনের পরিবেশ না থাকার কারণেই তিনি সরে দাঁড়ালেন এই নির্বাচন থেকে।ববি বলেন, আমরা প্রচারণা শুরুর পরপরই একটি দলের দুই থেকে তিনজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা ৩০ থেকে ৪০ বছর রাজনীতি করেছেন একটি নির্দলীয় নির্বাচনে নিয়ম ভঙ্গ করে তাদের বহিষ্কার করা মেনে নেয়া যায় না।বিভিন্নভাবে তাকে চাপ দেয়া হচ্ছে- সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করলেও কে বা কারা তাকে চাপ দিচ্ছেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি ববি।তিনি বলেন, আমাকে অনেকভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।’প্রমাণের অভাবে অনেক কিছু দেখাতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন ববি।নির্বাচন কমিশনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে ববি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় অনেক প্রার্থীর নীতিমালা ভঙ্গ করায় বিষয়টি আমরা কমিশনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনা ব্যবস্থা নেয়নি। এ অবস্থায় এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ববি হাজ্জাজ বলেন, পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রচারণা শুরুতেই আমাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। এই রাজনীতির পরিবর্তন করতে চাই। যে আস্থা নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলাম সে নির্বাচন কমিশনের ওপর সে আস্থা এখন আর নেই। সে কারণেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলাম।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মওলা, জাপা নেতা মোস্তাক আহমেদ, ববি হাজ্জাজের স্ত্রী রাসনা ইমাম প্রমুখ।ববি হাজ্জাজ ছাড়াও একইদিন প্রায় একইসময়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম ও সারাহ বেগম কবরী।বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সাতজনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন সাহারা বেগম কবরী, এইচ এম এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুস্তফা জালাল আজাদী। আর দক্ষিণ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, কাজী আবুল বাশার, স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা ইমতিয়াজ আলম।
এর আগে ১৮ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ তিন সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ২৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই আগামী ১ ও ২ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ এপ্রিল। ২৮ এপ্রিল ভোট গ্রহণ হবে। এর আগে কমিশনের সদস্য ও সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে ভোটের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করেন তিনি।