দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯ এপ্রিল: মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার। হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বুধবার জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আহ্বান জানান।এর আগে গত সোমবার একই ধরনের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড পাওয়াকামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই খারিজ আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছেছে।কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে রায় পড়ে শুনিয়েছে। প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না,এ ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার কারাগারে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র বলেন, গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ায় কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার বলে বলা হচ্ছে। তাঁর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমরা জরুরিভিত্তিতে আহ্বান জানাচ্ছি।হাইকমিশনারের মুখপাত্র বলেন, এই বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ না করা এবং ত্রুটির অভিযোগ রয়েছে।বাংলাদেশে বিদ্যমান মৃত্যুদণ্ডের বিধানেরও বিরোধিতা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার। মৃত্যুদণ্ডের ওপর মুলতবি আরোপ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।একাত্তরে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে ১৪৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে আসামিপক্ষ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১৮ ফেব্র“য়ারি আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে ৫ মার্চ তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কামারুজ্জামান। দুই দফা শুনানি পেছানোর পর গত রোববার আপিল বিভাগে ওই আবেদনের শুনানি হয়।
এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।ঢাকায় অবস্থিত সংস্থাটির কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে ওই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।বিবৃতিতে বলা হয়, সাজা হিসেবে মৃত্যূদণ্ড কখনোই অপরাধ দমন করতে পারে না। বরং এতে বিচারের উদ্দেশ্য সফল হয় না। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যে কোনো ধরনের মৃত্যুদেণ্ডর বিপক্ষে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানায়, এ ধরনের সাজা বৈশ্বিকভাবে বিলুপ্তির জন্য ইইউ ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছে, মৃত্যুদেণ্ডর মতো সাজা স্থগিত করা হোক।